চ্যানেল খুলনা ডেস্কঃঝিমিয়ে পড়েছে খুলনা সিটি কর্পোরেশন (কেসিসি)’র সীমানা বৃদ্ধি সংক্রান্ত কার্যক্রম। ফলে তাড়াতাড়ি এ প্রস্তাবটি অনুমোদন নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। তবে কর্পোরেশন বলছে, প্রস্তাবটি অনুমোদনে ফের জেলা প্রশাসনকে চিঠি দেয়া হয়েছে।
জানা গেছে, ২০১৩ সালের ৭ নভেম্বর কেসিসি’র তৃতীয় সাধারণ সভা ও ২৬ ডিসেম্বর চতুর্থ সাধারণ সভায় শহরতলীর ২৬টি মৌজা কর্পোরেশনের অন্তর্ভুক্ত করার জন্য সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়। উক্ত সভায় উল্লেখ করা হয়, শহরতলীর এসব মৌজায় কর্পোরেশনের অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় অনুকুল পরিবেশ পরিলক্ষিত হয়েছে। সর্বাধিক নাগরিক সুবিধাদি প্রদানের লক্ষে প্রস্তাবিত এলাকা কর্পোরেশনে অন্তর্ভুক্ত করার প্রয়োজনীয়তা এবং সাধারণ সভার সিদ্ধান্ত ২০১৪ সালের ৮ মে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। ওই একই বছর ২৬ নভেম্বর প্রস্তাবিত স্থানসমূহে সিটি কর্পোরেশনে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য স্থানীয় সংসদ সদস্যদের মতামত চেয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগ খুলনা জেলা প্রশাসনের কাছে চিঠি পাঠায়।
সূত্রটি আরও জানায় স্থানীয় সংসদ সদস্যদের মতামতের ভিত্তিতে ২৬টি প্রস্তাবিত মৌজার মধ্যে বটিয়াঘাটা উপজেলার হরিণটানা, মাথাভাঙ্গা, ডুবি, খোলাবাড়িয়া, আলুতলা, ঠিকরাবাধ, কৃষ্ণনগর, আড়ংঘাটা, তেলিগাতী, যুগীপোল, শিরোমনি, গিলাতলা, আটরা, শ্যামগঞ্জ, সাচিবুনিয়া (আংশিক), ডুমুরিয়া উপজেলার চক আসানখালি ও দেয়ানা এই ১৭টি মৌজা অন্তর্ভুক্তের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়। এরপর ২০১৬ সালের ৯ ফেব্র“য়ারি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের পক্ষ থেকে উপ-সচিব সরোজ কুমার নাথ সীমানা সম্প্রসারণের লক্ষে গণবিজ্ঞপ্তি জারী করার জন্য জেলা প্রশাসনকে দাপ্তরিক পত্র প্রেরণ করেন। যার প্রেক্ষিতে তৎকালীন জেলা প্রশাসক নাজমুল আহসান ১৭টি মৌজায় কেসিসির অন্তর্ভুক্ত করার জন্য সংশ্লিষ্ট এলাকার অধিবাসীদের মতামত চেয়ে ওই বছর ৩০ এপ্রিল গণবিজ্ঞপ্তি জারী করেন। অধিবাসীদের মতামত ও সকল আনুষ্ঠানিকতা শেষ প্রস্তাবটি স্থানীয় সরকার স্থানীয় সরকার বিভাগে প্রেরণ করা হয়। এরপর সচিব কমিটির সভায় প্রস্তাবটি উপস্থাপন করা হলে চাহিত তথ্য না থাকায় সিদ্ধান্ত হয় অধিকতর পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন বলে উল্লেখ করা হয়।
সূত্রটি জানায়, স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক (অঃদঃ) স্বাক্ষরিত একটি চিঠি কর্পোরেশনে প্রেরণ করা হয়। ওই চিঠিতে খুলনা জেলা প্রশাসনের স্থানীয় সরকার বিভাগ সন্নিহিত ১৭ টি মৌজায় (১৪টি সম্পূর্ণ ও ৩টি আংশিক) সীমানা বৃদ্ধির ব্যাপারে জরুরি ভিত্তিতে চাহিত প্রতিবেদন প্রেরণের জন্য অনুরোধ করে। তবে কর্পোরেশনের বৈষয়িক কর্মকর্তা নুরুজ্জামান বলেন, এ ব্যাপারে সম্প্রতি জেলা প্রশাসনকে চিঠি দেয়া হয়েছে। এখন উত্তরের অপেক্ষায় রয়েছি।
উল্লেখ্য, অধুনালুপ্ত খুলনা পৌরসভার সাবেক চেয়ারম্যান ও প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি মনিরুল হুদা ‘খুলনা পৌরসভার ১শ’ বছর’ নামক প্রবন্ধে উল্লেখ করেন, ১৮৮৪ সালের ৮ সেপ্টেম্বর বাংলার লেফটেনেন্ট গভর্নর খুলনাকে মিউনিসিপ্যালিটি ঘোষণা করেন। ১৮৮৪ সালের ১ জুলাই কয়লাঘাট, হেলাতলা, বানিয়াখামার, টুটপাড়া, গোবরচাকা, শেখপাড়া, নূরনগর, শিববাড়ি, চারাবাটি, ছোট বয়রা ও বারিয়াপাড়া নিয়ে যাত্রা শুরু হয়। তখন কর্পোরেশনের এলাকা ছিল ৪ দশমিক ৬৪ বর্গকিলোমিটার। রেভারেন্ট গগন চন্দ্র দত্ত প্রথম চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। ১৯৬০ সালের মিউনিসিপ্যালিটি এ্যাডমিনিস্ট্রেশন ও অর্ডিনেন্স অনুযায়ী এ মিউনিসিপ্যালিটির আয়তন ১৪ দশমিক ৩০ বর্গকিলোমিটার এলাকায় সম্প্রসারণ করা হয়। তখন ১৪টি ওয়ার্ডে ভাগ করা হয়। ১৯৬২ সালে রায়েরমহল, বয়রা, গোয়ালপাড়া, দৌলতপুর, মহেশ্বরপাশা এলাকা মিউনিসিপ্যালিটির অন্তর্ভুক্ত হয়। ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি নাম পরিবর্তন করে ‘খুলনা পৌরসভা’ নামকরণ করা হয়। ১৯৭৪ সালের ২০ ফেব্র“য়ারি ন্যাপ নেতা গাজী শহিদুল্লাহ স্বাধীনতা উত্তরকালে খুলনা পৌরসভার প্রথম চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ১৯৮৪ সালের ১০ ডিসেম্বর রাষ্ট্রপতি এইচ এম এরশাদ পৌর কর্পোরেশন ঘোষণা করেন। ১৯৯০ সালের ৮ আগস্ট সিটি কর্পোরেশনে রূপান্তরিত হয়। সেই সময় তৎকালীন পৌর চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলামকে প্রশাসক হিসাবে নিয়োগ দেয়া হয়। পরবর্তীতে কাজী আমিনুল হককে মেয়র মনোনীত করা হয়। ১৯৯২ সালে ইউনিয়ন বাতিল করে ৩১টি ওয়ার্ডে সম্প্রসারণ করা হয়। কর্পোরেশনের এখনকার আয়তন ৪৫ দশমিক ৬৫ বর্গকিলোমিটার।