অনলাইন ডেস্কঃঅবৈধ সম্পদ অর্জনসহ নানা অভিযোগের ভিত্তিতে খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক দপ্তরের সহকারী প্রধান(এমআইএস) মো: জোবায়ের হোসেনসহ দেশের বিভিন্ন স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানের ১০জন কর্মকর্তা/কর্মচারীকে তলব করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক। এ ব্যাপারে দুদকের উপ-পরিচালক মো: সামছুল আলম স্বাক্ষরিত গত ২৪ জুনের একটি পত্র ঢাকা মহাখালীস্থ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর দেয়া হয়েছে।
আগামীকাল ২ জুলাই এবং পরশু ৩ জুলাই দু’দিনে এসব কর্মকর্তা/কর্মচারীকে দুদক কার্যালয়ে স্ব-স্বরীরে হাজির হয়ে বক্তব্য প্রদানের অনুরোধ জানানো ওই পত্রে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে সিন্ডিকেট করে সীমাহীন দুর্নীতির মাধ্যমে শত শত কোটি টাকা অবৈধভাবে অর্জন করত: বিদেশে অর্থ পাচার এবং জ্ঞাত আয় বহির্ভুত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে।
অভিযুক্ত কর্মকর্তা/কর্মচারীরা হলেন, খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক দপ্তরের সহকারী প্রধান(এমআইএস) মো: জোবায়ের হোসেন, সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন অফিসের প্রধান সহকারী আশিক নেওয়াজ, ঢাকার পরিচালক(স্বাস্থ্য) কার্যালয়ের সহকারী প্রধান পরিসংখ্যানবিদ মীর রায়হান আলী, প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো: ফারুক হাসান, প্রধান সহকারী মো: আশরাফুল ইসলাম ও মো: সাজেদুল করিম, উচ্চমান সহকারী মো: তৈয়েবুর রহমান, মো: সাইফুল ইসলাম ও মো: ফয়জুর রহমান এবং ঢাকা শেরেবাংলা নগরস্থ জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো: মাহমুদুজ্জামান।
এসব কর্মকর্তা/কর্মচারীদের তাদের নিজেদের, স্ত্রী ও সন্তানদের নামীয় পাসপোর্ট, জাতীয় পরিচয়পত্র অথবা জন্ম নিবন্ধন সনদ এবং আয়কর রিটার্ণের ফটোকপিসহ দুদক কার্যালয়ে উপস্থিত হতে হবে বলেও পত্রে উল্লেখ করা হয়। এদের মধ্যে পাঁচজনকে আগামীকাল মঙ্গলবার(২ জুলাই) এবং পাঁচজনকে ৩ জুলাই বুধবার দিনের নির্দিষ্ট কিছু সময় উল্লেখপূর্বক হাজির হতে বলা হয়েছে। খুলনার স্বাস্থ্য পরিচালক দপ্তরের সহকারী প্রধান(এমআইএস) মো: জোবায়ের হোসেনকে ৩ জুলাই সকাল সাড়ে ১০টায় এবং সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের প্রধান সহকারী আশিক নেওয়াজকে একই দিন বেলা সাড়ে ১১টায় দুদক কার্যালয়ে হাজির হতে বলা হয়। যার স্মারক নম্বর-২৪৯৮২, তারিখ-২৫/৬/২০১৯।
দুদকরে অন্য একটি সূত্র জানায়, তলব শুধু খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক দপ্তরের নয় খুলনার অন্যান্ন সরকারী দপ্তরের যেসকল কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দূর্ণীতির অভিযোগ রয়েছে । যেসব কর্মকর্তা -কর্মচারীর জ্ঞাত আয় বহিভুত সম্পদ অর্জন করেছে অনুসন্ধান পূর্বক তাদেরকও তলব করা হবে । বিশেষ করে খুলনার সম্প্রতিক সময়ে বহুল আলোচিত ওজোপাডিকো,পওর,সড়ক ও জনপথ,ভূমি অফিস,স্থানীয় সরকার প্রকৌশল,জনস্বাস্থ প্রকৌশল,গনপূর্ত, শিক্ষা প্রকৌশল,শিক্ষা দপ্তর, কেডিএ,পরিবার পরিকল্পনাসহ খুলনার চলমান বিভিন্ন প্রকল্পের অনিয়ম ও দূর্ণীতির সাথে জরিত এবং আলোচিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপর নজরদারী রয়েছে ।
অপরদিকে, খুলনা বিভাগীয় পরিচালক(স্বাস্থ্য) দপ্তরের সহকারী প্রধান মো: জোবায়ের হোসেনের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগে বলা হয়, তিনি ১৯৯৩ সাল থেকে একই দপ্তরে কর্মরত রয়েছেন। অথচ সরকারি চাকরী বিধিমালায় বলা হয়েছে তিন বছরের বেশি একই কর্মস্থলে একই ব্যক্তি থাকতে পারবেন না। এজন্য অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটেও ওই কর্মকর্তার যোগদান তারিখটিও দেয়া নেই। একই পদে ২৫ বছর ধরে কর্মরত থাকার কারণে তিনি হয়ে উঠেছেন অনেকটা ক্ষমতাধর এক ব্যক্তি। এ পর্যন্ত অন্তত ৬০ লাখ টাকার উর্দ্ধে বাজেটের কম্পিউটার, এয়ারকন্ডিশন, ফটোকপিয়ার মেশিন, বিভিন্ন ইলেকট্রিক সামগ্রী সুকৌশলে ভুয়া বিল-ভাউচার দেখিয়ে নিজেই আত্মসাৎ করেন বলেও লিখিত অভিযোগে বলা হয়। এছাড়া সংশ্লিষ্ট মালামাল ক্রয় দেখানো হলেও সেগুলো কোন স্টক রেজিষ্ট্রার খাতায়ও লিপিবদ্ধ হয়নি। এ ব্যাপারে সম্প্রতি তথ্য অধিকার আইনে তথ্য চাওয়া হলে বলা হয়, এসব মালামাল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে কেনা হয় বিধায় কোন কাগজপত্র নেই। তাছাড়া ২৫ বছর আগের কাগজপত্র এখন থাকার কথা নয় বলেও জানানো হয়। তাছাড়া অফিসের কম্পিউটারের মাদারবোর্ড খুলে নিয়ে দৌলতপুরের হীরা কম্পিউটার নামের একটি কম্পিউটারের দোকানে বিক্রি করা হয় বলেও অভিযোগ রয়েছে। বিনিময়ে নামে বেনামে বিভিন্ন স্থানে জমি ও বাড়ি কিনেছেন তিনি।
বিভিন্ন সময় অফিসে যেসব মিটিং অনুষ্ঠিত হয় তা থেকে তার বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়মেরও অভিযোগ রয়েছে। এসব মিটিংয়ে সিভিল সার্জন বা অন্যান্য কর্মকর্তাদের যে ধরনের খাবারের প্যাকেট দেয়া হয় বাকীদের দেয়া হয় ভিন্ন প্যাকেট। কিন্তু একই খাবারের বিল করা হয়। অর্থাৎ সামান্য দুপুরের খাবারের টাকা থেকেও টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।
অবশ্য এটিকে মহল বিশেষের ষড়যন্ত্র উল্লেখ করে পরিচালক(স্বাস্থ্য) দপ্তরের সহকারী প্রধান(এমআইএস) মো: জোবায়ের হোসেন বলেন, দুদক তলব করেছে বলে তিনি যাচ্ছেন। কিন্তু তার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ সত্য নয়।
খুলনার পরিচালক(স্বাস্থ্য) ডা: রাশেদা সুলতানা বলেন, দুদক কার্যালয়ের পত্রটি তিনি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মাধ্যমে পেয়েছেন। ইতোমধ্যে সেখানে যাওয়ার জন্য জোবায়ের হোসেনকে ছাড়পত্রও দেয়া হয়েছে। তবে এটিকে তিনিও কাদা ছোড়াছুড়ি বলে উল্লেখ করেন।