আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এমপি বলেছেন, আমরা একটি গণতান্ত্রিক-বহুমাত্রিক সমাজে বসবাস করি, এই সমাজের দর্পন হচ্ছে গণমাধ্যম, গণমাধ্যম রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ। সুতরাং গণমাধ্যম যখন সঠিকভাবে কাজ না করে তখন বহুমাত্রিক সমাজ ও গণতান্ত্রিক সমাজ ক্ষতিগ্রস্থ হয়।
তিনি বলেন, আজকের পৃথিবীটা এমন হয়ে গেছে মানুষ শুধু নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত। মানুষ এখন অন্যকে নিয়ে ভাবেনা। এমনকি পরিবারের অন্য সদস্যদের নিয়েও ভাবে না। মানুষ শুধু ছুটে চলছে, কার আগে কে যাবে। কাকে টপকিয়ে, ল্যাং মেরে উপরে যাবে সেটা নিয়েই ছুটে চলে। এটি একটি অসুস্থ প্রতিযোগিতা।
শুক্রবার (২ এপ্রিল) দুপুরে কাপ্তাই উপজেলা অডিটোরিয়ামে প্রেস ইন্সটিটিউট বাংলাদেশ (পিআইবি) আয়োজিত চট্টগ্রাম জেলার রাঙ্গুনিয়া, রাউজান ও রাঙামাটি জেলার কাপ্তাই, রাজস্থলী ও কাউখালী উপজেলার সাংবাদিকদের জন্য “সাংবাদিকতায় বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ” কর্মশালার সমাপনী দিনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
পিআইবি’র মহাপরিচালক জাফর ওয়াজেদের সভাপতিত্বে ও রাঙ্গুনিয়া প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক জিগারুল ইসলাম জিগারের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন রাঙামাটি জেলা প্রশাসক মো. মিজানুর রহমান, পুলিশ সুপার মীর মোদাচ্ছের হোসেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. মামুন, কাপ্তাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুনতাসির জাহান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রওশন আরা রব, রাঙ্গুনিয়া পৌরসভার মেয়র মো. শাহজাহান সিকদার, কাপ্তাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইব্রাহীম খলিল, চন্দ্রঘোনা খ্রিষ্টিয়ান ও কুষ্ঠ হাসপাতালের পরিচালক ডা. প্রবীর খিয়াং প্রমুখ।
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, সাংবাদিকতা শুধু পেশা নয়, এটি অনেকের কাছে একটি ব্রত। বহু সাংবাদিক আছেন যারা সরকারি চাকুরীতে প্রবেশ করলে সচিব হয়ে অবসরে যেতে পারতেন। অনেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকুরী ছেড়ে সাংবাদিকতা পেশায় এসেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাল ভাল ছেলেরা সাংবাদিকতায় পড়াশোনা করে সাংবাদিকতাকে ভালবেসে এই পেশায় আসে। সাংবাদিকতার নামে দুয়েকজন অপসাংবাদিকের ব্যক্তিগত দুর্নাম যাতে সামগ্রিক সাংবাদিক সমাজকে কলংকিত করতে না পেরে সেদিকে নজর রাখতে হবে।
তিনি বলেন, আমরা দেশকে উন্নত করতে চাই, শুধু বস্তুগত উন্নয়ন নয়। বস্তুগত উন্নয়ন দিয়ে গত ১০০ বছরে ইউরোপের দেশগুলো অনেক উন্নত হয়েছে। কিন্তু সেখানে মানবিকতা হারিয়ে গেছে। অনেক ক্ষত্রে সেখানে মূল্যবোধ হারিয়ে গেছে। সেখানে পারিবারিক মূল্যবোধ, বন্ধন হারিয়ে গেছে। ইউরোপের সমাজে শতকরা ৩০-৫০ শতাংশ বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। আমরা সেই সমাজ চাই না। আমরা চাই এমন একটি সমাজ যেখানে বস্তুগত উন্নয়নের মাধ্যমে রাষ্ট্র উন্নত হবে, একটি উন্নত সমাজও হবে। যেখানে মানবিকতা, মূল্যবোধ, দেশাত্মবোধ ও মমত্ববোধ থাকবে।
মন্ত্রী বলেন, আমি যখন বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠনের নানা প্রোগ্রামে যায় তখন অনেকে বলে সাংবাদিকতায় প্রবেশের জন্য একটি শিক্ষাগত যোগ্যতা নির্ধারণ করে দেওয়া প্রয়োজন। তবে আমি ব্যক্তিগতভাবে এর বিপক্ষে। কারণ পৃথিবীতে বহু মানুষ আছে, যাদের কোন ডিগ্রি ছিল না, কিন্তু তারা অনেক জ্ঞানী। কবিগুরু, কাজী নজরুল মেট্টিক পাস করেন নাই। বিলগেটস বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনবার ফেল করে আউট হয়ে গেছে। কিন্তু তাদের জ্ঞান পৃথিবীকে আলোকিত করেছে। তাদের জ্ঞান নিয়ে গবেষণা হয়, পিএইচডি ডিগ্রি হয়।
তিনি বলেন, অনেক সাংবাদিক আছেন, যিনি মাত্র মেট্টিক পাস, কিন্তু তিনি অনেক ভাল লেখেন। আবার অনেক সাংবাদিক আছেন, যিনি মাস্টার্স পাস হয়েও ভাল রিপোর্ট লিখতে পারেনা। তাই আমি ব্যক্তিগতভাবে ডিগ্রী নির্ধারণের বিপক্ষে। সারাদেশের সাংবাদিক নেতারা বলেন, সাংবাদিকতা করার ক্ষেত্রে একটি স্ট্রেটেজি নির্ধারণ করা প্রয়োজন, যাতে যে কেউ সাংবাদিকতায় ঢুকে যেতে না পারে। একটা অনলাইন খুলেই অনেকেই নিজেকে সাংবাদিক দাবী করেন। তাদের উদ্দেশ্য কিন্তু সাংবাদিকতা নয়, তাদের উদ্দেশ্য ভিন্ন। এই ব্যাপারে সজাগ থাকতে হবে।”
সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, সাংবাদিকদের রাষ্ট্রের ও সমাজের দর্পন হিসেবে কাজ করার পাশাপাশি আমরা যাতে উন্নত সমাজ গঠন করতে পারি, সেটির ব্যাপারেও লিখতে হবে ৷ একইসাথে যে কথা বলতে পারে না, যার ভাষা হারিয়ে গেছে তার জন্যও লিখতে হবে।