খুলনার রাজপথ গত ২ আগস্ট জুমার নামাজের পর গণমিছিলে প্রকম্পিত ছিল। হাজারো ছাত্র-জনতার সঙ্গে সেই মিছিলে অংশ নেন নর্দান ইউনিভার্সিটি বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজি খুলনার প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী আবদুল্লাহ শাফিল। মিছিলটি খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে যেতেই বিপরীত থেকে মুহুর্মুহু রাবার বুলেট, টিয়ার শেল ও শটগানের গুলি ছোড়া শুরু করে পুলিশ। প্রতিরোধ গড়ার আগেই তীব্র আলোর ঝলখানি অনুভব করেন, মুহূর্তের মধ্যে অন্ধকার হয়ে যায় শাফিলের চারপাশ।
সহযোদ্ধারা তাকে উদ্ধার করে খুলনার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করেন। এরপর খুলনা, ঢাকার একাধিক হাসপাতাল ও চক্ষু ইনস্টিটিউটেও চিকিৎসা নিয়েছেন। কিন্তু বাম চোখে আর আলো ফিরে আসেনি। এখন ডান চোখেও ভালোভাবে দেখতে পারছেন না।
চিকিৎসকরা জানান, ধাতব গুলিটি শাফিলের চোখের কর্নিয়া ভেদ করে রেটিনার পেছনের অংশে গিয়ে বিদ্ধ হয়েছে। গুলিটি এখনও সেখানে রয়েছে। রেটিনার অংশটি চোখ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। ওই স্নায়ুগুলো দিন দিন শুকিয়ে যাচ্ছে। বাম চোখও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
দেশের দক্ষিণের জেলা বাগেরহাটের মোড়েলগঞ্জ উপজেলায় শাফিলদের বাড়ি। বাবা ইউনুস আলী খোকন মৎস্য ব্যবসায়ী। মা মাসুমা আক্তার গৃহিনী। তাদের একমাত্র সন্তান শাফিল। উচ্চশিক্ষার জন্য ভর্তি হন খুলনার বেসরকারি নর্দান ইউনিভার্সিটি বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজির ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে। পড়াশোনার জন্য বাসা ভাড়া নিয়ে থাকেন নগরীর সোনাডাঙ্গা থানার নবপল্লী এলাকায়। একমাত্র ছেলের সঙ্গে বাবা-মাও এখন খুলনায় থাকেন।
ওই দিনের ঘটনা বর্ণনা করে শাফিল বলেন, আন্দোলনের শুরু থেকে আমরা বন্ধুরা সক্রিয় ছিলাম। ওইদিন আমাদের গণমিছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ টিয়ার শেল ও শটগানের গুলি ছুড়তে শুরু করে। আমাদের কয়েকজন সেই টিয়ার শেল উল্টো পুলিশের দিকে ছুড়ে মেরেছে। কেউ ইটের টুকরো মেরেছে। হঠাৎ আমার চোখ জ্বলে ওঠে। এখন বাম চোখে মোটেও দেখতে পাই না। ডান চোখও ঘোলা হয়ে যাচ্ছে।
শাফিল বলেন, সবাই যখন বিজয় উদযাপন করছে, তখন আমি হাসপাতালে হাসপাতালে ঘুরছি। আমার এখন একটাই ইচ্ছা- বৈষম্যহীন বাংলাদেশকে আমি দু’চোখ ভোরে দেখতে চাই।
শাফিলের বাবা ইউনুস আলী জানান, ঢাকা-খুলনা মিলিয়ে ছয়টি হাসপাতালে নিয়েছি। চিকিৎসকরা বলেছেন, দেশে এর চিকিৎসা নেই, সিঙ্গাপুর বা অন্য কোনো দেশে নিয়ে গিয়ে চোখ দুটি বাঁচানো যেতে পারে। এজন্য বিপুল অংকের টাকার প্রয়োজন। আমরা পারিবারিকভাবে কিছুটা জোগাড় করার চেষ্টা করছি। কতটা পারবো বুঝতে পারছি না।
শাফিলের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মতিয়ার রহমান জানান, আমরা ছাত্র-শিক্ষক সবাই শাফিলের চিকিৎসার জন্য তহবিল সংগ্রহ করছি। সবাই এগিয়ে আসার জন্য আমরা অনলাইনে ক্যাম্পেইন করছি।
শাফিলের সঙ্গে যখন কথা হচ্ছিলো তখন পাশে বসে দু’চোখ মুছছিলেন মা মাসুমা আক্তার। বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় তিনি বললেন, আমার একটা মাত্র ছেলে। আমার সবকিছু বিক্রি করে হলেও ওর চোখ ভালো করবো। আপনারা দেশের সবাইকে ওর জন্য দোয়া করতে বলবেন। এতো রক্ত, এতো জীবনের বিনিময়ে ওরা যে স্বাধীন দেশ তৈরি করলো, সেই দেশ শাফিল দু’চোখ ভরে দেখবে না, এটা কোনো মা মানতে পারে না।
সাহায্য পাঠানোর ঠিকানা:
বিকাশ: 01312-228220, 01766-291479, 01767169909, 01799225323
নগদ: 01312-228220, 01401-444580
ব্যাংক:
ইসলামি ব্যাংক: 20501070205900010
MASUMA AKTER,Khulna Brunch,ISLAMI BANK
ব্যাংক এশিয়া: 15634007682
MASUMA AKTER,Khulna Brunch,Bank Asia
অগ্রণী ব্যাংক: 0200019895372
Rahima Akter
Agrani Bank Ltd,Khulna University Branch
Personal contact + WhatsApp number:
01401-444580 (Abdullah Al Shafil