বাংলাদেশের কক্সবাজারের মেরিন ড্রাইভে পুলিশের গুলিতে মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খান নিহত হওয়ার ঘটনা তদন্ত করতে সরকার যে কমিটি গঠন করেছে সেটি মঙ্গলবার কাজ শুরু করেছে।
ঘটনা সম্পর্কে পুলিশ এবং সামরিক বাহিনীর গোয়েন্দা সংস্থা (ডিজিএফআই’র) তরফ থেকে ভিন্ন-ভিন্ন ভাষ্য দেখা যাচ্ছে।
এমন প্রেক্ষাপটে কাজ শুরু করেছে সরকারের গঠিত তদন্ত কমিটি। এর নেতৃত্বে রয়েছেন চট্টগ্রাম বিভাগের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান।
কী বলছে সামরিক গোয়েন্দারা?
পুলিশের গুলিতে মেজর (অব.) সিনহা রাশেদ খান নিহত পরদিনই সেনাবাহিনীর অ্যাডজুডেন্ট জেনারেল (এজি) শাখার ইস্যুকৃত দুই পৃষ্ঠার একটি নোট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়েছে। সেটির একটি কপি বিবিসি বাংলার কাছে রয়েছে। এই নোট যে এজি শাখার অভ্যন্তরীণ দাপ্তরিক চিঠি সেটি নিশ্চিত হয়েছে বিবিসি বাংলা।
সেনাবাহিনীর এজি শাখার সেই নোটে বলা হয়েছে, মেরিন ড্রাইভ এলাকার শামলাপুর অঞ্চলের পাহাড়ি এলাকায় ডকুমেন্টারি ফিল্ম-এর শুটিং শেষে পুলিশ চেকপোস্ট অতিক্রম করার সময় বাহাড়ছড়া তদন্ত কেন্দ্রের ইন-চার্জ এসআই লিয়াকত জিজ্ঞাসাবাদ ছাড়াই মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খানকে গুলি করে হত্যা করে।
ঘটনার বিবরণী বিশ্লেষণ করে সেনা সদর কিছু মতামত পোষণ করেছে। সেনা সদর মনে করে, মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদকে গুলি করার পরপরই তার বিরুদ্ধে মাদক সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ উত্থাপনের মাধ্যমে ঘটনাকে অন্য খাতে প্রবাহিত করার অপচেষ্টা বলে অনুমেয়।
সেনা সদরের মতামতে আরো বলা হয়েছে, “করোনা মহামারির এই কঠিন সময়ে সেনাবাহিনী ও বাংলাদেশ পুলিশ সম্মুখ সারিতে থেকে দেশের জন্য প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছে।”
“তাই ভবিষ্যতের দুই বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে যে কোন ধরণের ভুল বোঝাবুঝি এড়ানোর লক্ষ্যে যৌথ তদন্ত কার্যক্রম অনতিবিলম্বে শুরু করা এবং সংশ্লিষ্ট সকলকে অবহিত করা।”
সেনা সদরের অ্যাডজুডেন্ট জেনারেল শাখার এই দাপ্তরিক নোট ছাড়াও কক্সবাজার থেকে পাঠানো ডিজিএফআই’র একটি রিপোর্ট সংবাদ মাধ্যমে এসেছে।
সেনাবাহিনীর একটি সূত্র বিবিসি বাংলার কাছে ডিজিএফআই’র সেই রিপোর্টের সত্যতা নিশ্চিত করেছে।
ডিজিএফআই’র সে রিপোর্টেও বলা হয়েছে, কোনরূপ জিজ্ঞাসাবাদ ছাড়া মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদকে গুলি করে করে হত্যা করা হয়েছে।
সে রিপোর্টে বলা হয়, কর্তব্যরত পুলিশের এসআই যা করেছেন সেটি সামরিক বাহিনীর প্রতি ‘অশ্রদ্ধা ও ক্ষোভের বহি:প্রকাশ’।
ডিজিএফআই’র রিপোর্টে বলা হয়, “টেকনাফ থানায় মাদক নির্মূলের নামে পুলিশ সদস্যদের মাঝে হত্যার প্রতিযোগিতা চলমান, যা অনেক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্ম দিচ্ছে এবং ভবিষ্যতে আরো দিবে বলে ধারণা করা যায়।”
পুলিশ কী বলছে?
টেকনাফ থানায় দায়ের করা মামলায় বলা হয়েছে, সিনহা মো. রাশেদ খান এবং তার সাথে গাড়িতে থাকা সিফাত পরস্পর যোগসাজশে সরকারি কর্তব্যকাজে বাধা প্রদান করেছে এবং হত্যার উদ্দেশ্যে অস্ত্র দিয়ে গুলি করার জন্য তাক করা হয়েছে।
সেই মমালায় ঘটনার সময় উল্লেখ করা হয়েছে ৩১ শে জুলাই ২৩:১৫ ঘটিকা, এবং এজাহার দায়ের করা হয়েছে ১ আগস্ট ০১:৩৫ ঘটিকা।
সেখানে আসামী করা হয়েছে সাহেদুল ইসলাম প্রকাশ সিফাতকে।
এজাহারে সংবাদদাতা এবং অভিযোগকারীর উল্লেখ করা হয়েছে বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের এসআই নন্দদুলাল রক্ষিত। এবং এই মামলা দায়ের করা কপিতে সাক্ষর করেছেন টেকনাফ থানার অফিসার ইন চার্জ প্রদীপ কুমার দাশ।
এসআই নন্দদুলাল রক্ষিতের দায়ের করা অভিযোগে বলা হয়েছে, সিলভার রংয়ের একটি প্রাইভেট কার পুলিশ চেকপোস্টের সামনে আসতে দেখে সেটিকে থামানোর জন্য সংকেত দেয়া হয়। কিন্তু সে গাড়ির চালক সংকেত অমান্য করে চেকপোস্ট অতিক্রম করার চেষ্টা করে বলে অভিযোগে বলা হয়েছে।
অভিযোগ আরো উল্লেখ করা হয়, গাড়িটির গতিরোধ করে হাত উঠিয়ে বের হবার জন্য বলা হলে গাড়ীর চালকের সীটে বসা একজন ব্যক্তি তার আসনে বসে তর্ক শুরু করে।
অভিযোগে আরো বলা হয়, “ড্রাইভিং সিটে বসা সেনাবাহিনীর মেজর পরিচয়দানকারী ব্যক্তি কিছুক্ষণ তর্ক করে গাড়ি থেকে নেমে এক পর্যায়ে তিনি হঠাৎ করে তার কোমরের ডান পার্শ্ব হতে পিস্তল বাহির করে গুলি করার জন্য উদ্যত হলে আইসি স্যার নিজের ও সঙ্গীয় অফিসার ফোর্সদের জানমাল রক্ষার্থে সাথে থাকা তাহার নামে সরকারি ইস্যুকৃত পিস্তল হইতে চার রাউন্ড গুলি বর্ষণ করে।”
সরকার গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান এবং চট্টগ্রাম বিভাগের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান মঙ্গলবার সংবাদমাধ্যমকে জানান, স্বচ্ছ তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত ঘটনা বেরিয়ে আসবে।
এই কমিটিতে পুলিশ এবং সেনাবাহিনীর সদস্যও রয়েছেন।
আগামী সাতদিনের মধ্যে তাদের তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে হবে। সূত্র-বিবিসি বাংলা।