পদ্মা সেতু এখন আর স্বপ্ন নয়,বাস্তব। এই সেতু আমাদের গৌরব, আমাদের অহঙ্কার। সমগ্র জাতি সাগ্রহে অপেক্ষা করছে ও প্রস্তুতি নিচ্ছে ইতিহাসের এই মাহেন্দ্রক্ষণ ও অনন্য গৌরবদীপ্ত ঘটনার সাক্ষী ও অংশীদার হতে। নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত পদ্মা সেতু বাঙালী জাতির আবেগ, আকাংখা, দৃঢ় প্রত্যয়, সক্ষমতা এবং আত্মমর্যাদা বোধের বলিষ্ঠ প্রকাশ।
এই সেতুর ফলে রাজধানী ঢাকা ও চট্টগ্রাম বন্দরের সাথে যুক্ত হবে মোংলা ও পায়রা বন্দর। বেনাপোল স্থল বন্দরের সঙ্গেও রাজধানী এবং চট্টগ্রাম বন্দরের সরাসরি যোগাযোগ স্থাপিত হবে। আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার প্রায় ৬ কোটি মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন আনবে পদ্মা সেতু। এই সেতু হওয়ায় এ অঞ্চলে শিল্পপতি, উদ্যোক্তারা শিল্পাঞ্চল গড়ে তুলতে উৎসাহী হবে। এ অঞ্চলে তৈরি হবে বিশ^ মানের হাসপাতাল, হোটেল, মোটেল আরও কত কি! দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের কর্ম প্রত্যাশী মানুষের মধ্যে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পেলে ব্যাস্টিক অর্থনীতিতে যেমন ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে, তেমনি সমষ্টিক অর্থনীতির গতি প্রবাহেও নতুন দিগন্তের দ্বার উম্মোচন হবে।
এই সেতুর ফলে কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত ও সুন্দরবন পর্যটন কেন্দ্রের অভাবনীয় উন্নয়ন হবে। পর্যটকদের যাতায়াত সুবিধা হবে। এই সেতুকে ঘিরে পর্যটনের হবে নতুন মাত্রা। দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন চর ও দ্বীপকে কেন্দ্র করে মালদ্বীপের মত পর্যটনের বিশাল জগত তৈরি করা সম্ভব। এই সেতুর ফলে রাজধানী থেকে কক্সবাজারের চেয়ে কম সময়ে কুয়াকাটা ও সুন্দরবন পৌঁছানো যাবে। এই সেতুকে ঘিরে পদ্মার দুই পাড়ে সিঙ্গাপুর ও চীনের সাংহাই নগরের আদলে আধুনিক শহর গড়ে তোলাও অসম্ভব নয়।
পদ্মা সেতুর বাস্তবায়নে দেশের অর্থনীতিতে যুক্ত হলো নতুন সোনালী স্বপ্ন। অর্থনীতিতে পদ্মা সেতুর ভূমিকা নিয়ে বিশ^ ব্যাংক অভিমত জানিয়েছে, সেতুটি বাস্তবায়নে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ১ দশমিক ২ শতাংশ বেড়ে যাবে। আর প্রতি বছর দারিদ্র নিরসন হবে শূন্য দশমিক ৮৪ ভাগ। সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনোমিক মডেলিং এর পরিচালক ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের অর্থনীতিবিদ সেলিম রহমানের মতে সেতুটি মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ১ দশমিক ২৩ শতাংশ বাড়াবে। চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক অর্থনীতিবিদ ড. মঈনুল ইসলাম বলেন-‘পদ্মা সেতু শুধু দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অপেক্ষাকৃত বঞ্চিত ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে রাজধানী ঢাকা এবং চট্টগ্রামের অর্থনৈতিক লাইফ লাইনের সঙ্গে সংযুক্ত করবে না, এটা পুরো অর্থনীতিকে আক্ষরিক অর্থে একসূত্রে গাঁথার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম এবং অনুঘটক হিসেবে কাজ করবে।’
দেশী-বিদেশী সব ষড়যন্ত্র, চক্রান্ত, প্রতিকূলতা ও চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার দৃঢ়সংকল্প নেতৃত্ব ও প্রত্যয়ের কারণেই সম্ভব হয়েছে এ কথা স্বীকার করতেই হবে। পদ্মা সেতু নিছকই একটি সেতু নয়। এটি আমাদের অনন্য গৌরব, মর্যাদা ও অহঙ্কারের প্রতীক।
লেখক: সাব্বির আহমেদ শুভ, সভাপতি, খুলনা মহানগর তাঁতী লীগ