কবুতর বা পায়রা, কপোত বা পারাবত এক প্রকারের জনপ্রিয় বুদ্ধিমান গৃহপালিত পাখি। স্বাধীনতা দিবস সহ বিভিন্ন আনন্দ অনুষ্ঠানে শান্তির পায়রা আকাশে অবমুক্ত করে অনুষ্ঠানের শুভ সূচনা করা হয়। শান্তির পায়রা হিসাবে এর মর্যাদা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা ছয়টায় জাহানাবাদ গ্যারিসন কমিউনিটি সেন্টারে দীর্ঘ দশমাস কবুতার উড়ানো প্রতিযোগীতায় বিজয়ীদের মাঝে পুরুষ্কার বিতরনী অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানের শুরুতেই পবিত্র কোরআন তেলওয়াত করে গিলাতলা আহামদীয়া জামে মসজিদের মুয়াজেম হাফেজ মোঃ মতিম।
উক্ত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন গ্যারিশন গিরিবাজ কবুতর সোইসাটির সভাপতি মোঃ সবুর হোসেন। তিনি আমন্ত্রিত অতিথিদের আসন গ্রহণ করার জন্য অনুরোধ করেন সেই সাথে ফুল দিয়ে অতিথিদের বরণ করে নেয়া হয়। প্রধান অতিথি ছিলেন ওস্তাদ নাজমুস সাদাত সিদ্দিকী সুমন এসময় বিশেষ অতিথি হিসেবে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, জাহিদুল আলম মুকল, আলহাজ্ব আব্দুল রাজ্জাক, আতিয়ার রহমান, শেখ হুমায়ন কবির, শেখ রিয়াজ উদ্দিন বাবু, মাসুদুল হক রানা, মোল্লা তুহিন মুক্তা, হাবিবুর রহমান, আসলাম পারভেজ, রাশিদুল ইসলাম সানি, কে এম মফিজুল ইসলাম, আলী আকবর মিন্টু, শেখ আব্দুল মান্নাফ, আশফাকুর রনি, সুজন মল্লিক , দেলোয়র বাবু, শেখ কামরুজ্জামান কাজল ও শেখ রাজীব। প্রধান অতিথি ওস্তাদ নাজমুস সাদাত সিদ্দিকী সুমন বলেন, কবুতরের ইতিহাস খুব প্রাচীন। প্রায় খ্রিষ্টপূর্ব ৩০০০ সালে তৎকালীন ইরাকে কবুতর এর ছবি পাওয়া গিয়েছিলো। ধারণা করা হয় ১০০০০ বছর আগে নব্য প্রস্তর যুগে টাইগ্রিসের আশেপাশের মানুষ কবুতর পালন করতো। কবুতর সম্পর্কে সবচেয়ে প্রাচীন ঘটনাটি হযরত নূহ (আ:) এর সময়কালে ঘটে। অনেক দিন হয়ে গেলে বন্যার পানি নেমে গেছে কিনা তা জানার জন্য কবুতরকে পাঠানো হয় এবং সে খবরও নিয়ে আসে। একাদশ শতকে বাগদাদে কবুতরকে খবর আদান প্রদানের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহারের তথ্য পাওয়া যায়। চেঙ্গিস খাঁ কবুতরের মাধ্যমে তার বিশাল রাজ্যের খবর আদান প্রদান করতেন। ১৯৪৫ খৃষ্টাব্দে ব্রিটিশ-ভারত সরকার কর্তৃক প্রকাশিত তথ্যে জানা যায়, প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় মিত্রবাহিনীর পক্ষে শুধু কবুতর পরিচালনার জন্য প্রায় ৯০ হাজার লোক নিয়োজিত থাকত।দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধেও সংখ্যাটা এমনই ছিলো।
এছাড়াও ১৯৯৭ সালে ব্রিটেনের রয়াল পিজিয়ন এর রেসিং এসোসিয়েশন এর ১০০ বছর পূর্তি উপলক্ষে ফ্রান্সের নান্টেস থেকে ৬০০০০ কবুতর ছাড়া হয়েছিলো। এভাবেই কবুতর তার ইতিহাসের ধারাবাহিকতা বর্তমান পর্যন্ত চলে আসছে। তবে যোগাযোগ মাধ্যম ছাড়াও বর্তমানে বাংলাদেশ সহ সারা বিশ্বে বানিজ্যিক ভাবে কবুতর পালন করা হচ্ছে।দেশে বড় একটি অংশ এটাকে এখন পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছে আসছে সফলতা তৈর হচ্ছে আত্নকর্ম সংস্থান। সারাদেশে কয়েকশ সংগঠন তৈরি হয়েছে এমন কি কবুতর উড়ানো প্রতিযোগীতা হচ্ছে। কবুতারের এই সেক্টর আরো সামনে এগিয়ে সকলের প্রতি আহবান জানান। বাংলাদেশে একটা সময় ছিলো যখন কৃষক সমাজ কবুতার পালন করতেন বর্তমানে সকল শ্রেনী পেশার মানুষ কবুতারে খামার তৈরি করছেন। সবশেষে তিনি বলেন কবুতারের এই সেক্টরকে আমাদের টিকিয়ে রাখতে হবে আগামীতে হতে পারে মানুসের ভাগ্য পরিবর্তনের বাহক। সভাপতি মোঃ সবুর হোরসন ও ওস্তাদ নাজমুস সাদাত সিদ্দিকী সুমন বিজয়ীদের মাঝে পুরুস্কার তুলে দেন। একক ভাবে দশ ঘন্টা তিন মিনিট কবুতার উড়িয়ে প্রথম স্থান অধিকার করেন সাগর রায়হান, নয় ঘন্টা ৪৭ মিনিটি মিন্টু শেখ ২য় স্থান এবং ৯ ঘন্টা ২৫ মিনিট উড়িয়ে ৩য় স্থান দখল করেন রাহাত শিকদার।