সার্ভার থেকে গ্রাহকের তথ্য পাচারের অভিযোগে গ্রামীণফোন লিমিটেডের বিরুদ্ধে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা করেছে পুলিশ। গ্রাহকের সিমের গোপনীয় তথ্য সংরক্ষণে ব্যর্থতায় মঙ্গলবার রাজধানীর হাতিরঝিল থানায় গ্রামীণফোনের বিরুদ্ধে মামলাটি করা হয়।
মামলায় গ্রামীণফোনের কাস্টমার সার্ভিস ম্যানেজার রুবেল মাহমুদ অনিককে আসামি করা হয়েছে। এছাড়া মামলায় সংঘবদ্ধ ব্ল্যাকমেইলিং চক্রের হোতা পারভীন আক্তার নূপুরকেও আসামি করা হয়েছে।
পুলিশ জানায়, প্রতারণা মামলার তদন্ত করতে গিয়ে গ্রাহকের তথ্য পাচারের তথ্য-প্রমাণ পাওয়া যায়। এরপর মামলাটি করা হয়। মামলার এজাহারে বলা হয়, গ্রাহকের সিম রেজিস্ট্রেশনে ব্যবহৃত ব্যক্তিগত তথ্যের গোপনীয়তা সংরক্ষণে ব্যর্থতা, উদাসীনতা ও তথ্য ভাণ্ডারে বেআইনি প্রবেশ নিয়ন্ত্রণে গ্রামীণফোন কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থাপনা রয়েছে। এ সুযোগ নিয়ে গ্রামীণফোন সার্ভিস সেন্টারের কর্মরত অসাধু কর্মীরা তথ্য পাচার করছে।
পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের ডিসি মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ যুগান্তরকে বলেন, গ্রামীণফোন কাস্টমার সার্ভিস সেন্টারে কর্মরত অনিক টাকার বিনিময়ে সংঘবদ্ধ ব্ল্যাকমেইলিং চক্রের হোতা নূপুরকে চাহিদামতো গ্রাহকের তথ্য সরবরাহ করত। এ চক্রের যোগসাজশে অসংখ্য গ্রাহকের তথ্য অনিক সরবরাহ করেছে। এ তথ্যের ভিত্তিতে চক্রটি অসংখ্য ব্যক্তিকে ব্ল্যাকমেইলিং করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। চক্রটির মূল অস্ত্র হল গ্রামীণফোন গ্রাহকের সিমের গোপনীয় তথ্য। আর এক্ষেত্রে গ্রামীণফোন গ্রাহকদের তথ্যের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছে। এ দায় গ্রামীণফোন কখনও এড়াতে পারে না।
পুলিশের তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল জোনের এডিসি হাফিজ আল ফারুক বলেন, কয়েক মাসে নূপুর তার ব্যক্তিগত মোবাইল ফোন নম্বর এবং আরও কয়েকটি মোবাইল ফোন নম্বর থেকে ১৫-২০ জনকে টার্গেট করে ব্ল্যাকমেইল করে মোটা অংকের অর্থ আদায় করেছে। অনিকের মোবাইল ফোন নম্বরে এসএমএসের মাধ্যমে ৬টি গ্রামীণফোন নম্বর পাঠিয়ে নম্বরধারীদের সিম রেজিস্ট্রেশন তথ্য (নাম, পিতার নাম, ঠিকানা, জন্ম তারিখ, জন্ম নিবন্ধন নম্বর) জানতে চায় নূপুর। এ বিষয়ে অকাট্য প্রমাণ পাওয়ার পরই মামলা করা হয়। আসামিদের গ্রেফতার দেখিয়ে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হবে।
পুলিশ জানায়, হাতিরঝিল থানায় করা প্রতারণার মামলায় অনিক, নূপুর, তার বোন শেফালি বেগম এবং শামসুদ্দোহা খান বাবুকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ৩ থেকে ৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়।
জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানায়, বিভিন্ন ব্যক্তিকে টার্গেট করে প্রেমের ফাঁদে ফেলে তারা ব্ল্যাকমেইল করে। ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করে পরিবারের সব সদস্যকে জানিয়ে দেয়ার হুমকি দিয়ে ৫ লাখ টাকা থেকে শুরু করে ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত আদায় করা হয়। এমনকি ভুয়া আইনজীবীর মাধ্যমে ফোন করে নারী নির্যাতন এবং ধর্ষণ মামলার হুমকি দিয়ে ভয় দেখানো হয়। ৬ ডিসেম্বর তাদের বিরুদ্ধে হাতিরঝিল থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলাও করে পুলিশ।
পুলিশ জানায়, মতিঝিলের দৈনিক বাংলা মোড়ের পারফেক্ট ট্রাভেল এজেন্সিতে ১৫ হাজার টাকা বেতনে চাকরি করত চক্রের সদস্য শামসুদ্দোহা বাবু। ট্রাভেল এজেন্সিতে কাজ করার কারণে বিদেশগামী ধনাঢ্য ব্যক্তিদের সঙ্গে তার সখ্য গড়ে ওঠে। এ সময় তাদের মোবাইল ফোন নম্বর সংগ্রহের পাশাপাশি বিভিন্ন শিল্পপতি, ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ এবং উচ্চপদস্থ চাকরিজীবীদের মোবাইল ফোন নম্বর সংগ্রহ করে সে নূপুরকে দিত। নিজেকে কখনও সমাজকর্মী কখনও সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য তহবিল সংগ্রহকারী হিসেবে পরিচয় দিত নূপুর। সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য তহবিল সংগ্রহে আয়োজিত অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানাতে কিংবা চাকরিপ্রার্থী ও সাংবাদিক পরিচয়ে এসব ব্যক্তির সঙ্গে সে সরাসরি দেখা করত। নানা অজুহাতে টার্গেট করা ব্যক্তির সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলত।
পুলিশ আরও জানায়, অনেক সময় ব্যক্তিগত স্পর্শকাতর বা গোপন কথা বলে তা মোবাইল ফোনে রেকর্ড করত নূপুর। টার্গেট করা ব্যক্তির সঙ্গে নূপুরের বিয়ে হয়েছে এমন কথা পরিবারের সদস্যদের জানানোর হুমকি দেয়া হতো। টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে নূপুরের বড় বোন শেফালী ওই ব্যক্তিকে ফোন করে মামলার হুমকি দিত। অনেকে সম্মানের ভয়ে টাকা দিতেন। তবে কেউ টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে আইনজীবী পরিচয় দিয়ে ফোন করে মিথ্যা ধর্ষণ মামলা বা নারী নির্যাতন মামলা করার হুমকি দেয়া হতো।