চ্যানেল খুলনা ডেস্কঃসুন্দরবনের নীলকমল অভয়ারণ্য স্টেশনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শ্যামা প্রসাদ ও সহকর্মীদের সাথে চুক্তিকৃত ঘুষের অর্থ অগ্রিম না দেয়ায় জেলেদের বনদস্যুর মতো ‘ক্রসফায়ারে’ হত্যার হুমকি দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। সুন্দরবন ও দুবলার চর এলাকায় মৎস্য আহরণে পাস পারমিট নিয়ে গেলেও প্রতি মাসে আড়াই লক্ষ টাকা ঘুষ দিতে হয় নীলকমলে কর্মরত ওসি শ্যামা প্রসাদ রায়, মোঃ ইকরামুল হক (বি এম), মমিন (বি এম), লালন (বি এম), মঞ্জু (এফ জি) ও ফারুক (বি এম)। গতকাল শনিবার দুপুরে খুলনা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ করেছে খুুলনা জেলা মৎস্যজীবী সমিতির নেতৃবৃন্দ।
লিখিত বক্তব্যে ফুলতলার সুপ্তি এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মোঃ বাচ্চু আলী বেগ বলেন, আমি বা আমার সঙ্গীয় মৎস্যজীবীরা সুন্দরবন এবং দুবলার চর এলাকায় পাস পারমিটের মাধ্যমে মৎস্য আহরণ করি। সুন্দরবনের নীলকমলে কর্মরত ওসি শ্যামা প্রসাদ রায় ও তার সহকর্মীদের অমানুষিক, অমানবিক নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছি জেলেরা।
তিনি আরও বলেন, নীলকমল অভয়ারণ্যের ওসি গত জুন মাসে আমাদের সাথে চুক্তির মাধ্যমে মৎস্য আহরণের জন্য নিয়ে যায় এবং দুবলা হতে পাস নিয়ে আমরা ইলিশ মাছ আহরণ শুরু করি। ওসি শ্যামা প্রসাদ মাসে আড়াই লাখ টাকা চুক্তিতে সম্মত হন। নিয়মিত চুক্তির টাকা, অর্থাৎ তিন মাসে সাড়ে সাত লাখ টাকা পরিশোধ করি। ইতোমধ্যে, মাছ ধরা বন্ধ হওয়ায় গত ৭ অক্টোবর আমরা সাগর থেকে উঠে আসার প্রস্তুতি নিলে ওসি তার স্টাফসহ আমাদের কাছে আসেন এবং মাসিক টাকা অগ্রিম দাবি করেন। আমরা অগ্রিম টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে তিনি ফাঁকা গুলি করে আতঙ্ক সৃষ্টি করেন এবং প্রত্যেক জেলেকে বেদম প্রহার করেন। মার খেয়ে অনেকে আহত হয়ে পড়ে। মারাত্মক জখম জেলে হান্নান গাজীকে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হয়েছে।
বনরক্ষীদের নির্মমতা এখানেই শেষ নয় বলে ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি আরও বলেন, নীলকমলের ওই ওসি এবং তার স্টাফরা দ্রুতগতি সম্পন্ন ট্রলার যোগে সাগরে টহলের সময় জেলেদের মাছ ধরা ট্রলার তাড়া করেন। পাখি শিকারের মতো এলোপাতাড়ি গুলি করতে থাকেন। জেলেদের পাস পারমিট ট্রলার আটক করে জোরপূর্বক নীলকমল নিয়ে আসেন। সিওআর করার নামে প্রতি ট্রলার থেকে কমপক্ষে এক লাখ টাকা করে আদায় করেন সরকারি রসিদ ছাড়াই। পরে সরকারি রাজস্ব রসিদ চাইলে ওসি জেলেদের পিটিয়ে পিঠের চামড়া তুলে ফেলার হুমকি দেন। এছাড়া ৩২টি ট্রলারের প্রতিটি থেকে ১০ পিস করে অন্তত লাখ টাকা মূল্যের ৩২০ পিস ইলিশ এসিএফ এবং ডিএফও-দের দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন ওসি।
লিখিত বক্তব্যে আরও বলেন, নীলকমলের হাতিমঘানি, কলাতলা, সেচখালি ও বালির গাং এলাকায় শত শত জেলে প্রতি ঘোনে মাছ/ কাঁকড়া ধরে চুক্তির মাধ্যমে। এই জেলেদের বহদ্দার শংকর (ডুমুরিয়া), আশরাফুল (গড়ইখালী), মালেক গণির (গোবরা) মাধ্যমে যাবতীয় বাজার ঘাট, স্টাফরা পেয়ে থাকেন এবং মাসিক তিন লাখ টাকা ঘুষ নেন। আগে তাদের ঘুষ সংগ্রহ করতেন কয়রার মুসা মেম্বার ও মাজেদ।
এর আগে, ২০১৮ সালে কালাবগি স্টেশনে কর্মরত থাকাকালে বন কর্মকর্তা শ্যামা প্রসাদ রায়ের বিরুদ্ধে দাকোপ থানায় চাঁদাবাজির মামলা হয়েছিল বলেও অভিযোগ করেন তিনি।সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন খুলনা জেলা মৎস্যজীবী সমিতির সভাপতি বিকাশ চন্দ্র বিশ্বাস, মোঃ আলী হায়দার, মোঃ আসলাম হোসেন প্রমুখ।