ঝালকাঠি প্রতিনিধিঃ বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) ঝালকাঠির সহকারী পরিচালকের বিরুদ্ধে ঘুষ নিয়ে মোটরযান রেজিস্ট্রেশন ও ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদানের অভিযোগ পাওয়া গেছে। দালালের মাধ্যমে ঘুষ নিয়ে ঝালকাঠি জেলার বাইরের লোকজনকেও লাইসেন্স দিচ্ছেন তিনি।
সরকার নির্ধারিত টাকার দ্বিগুণ টাকা না দিলে লাইসেন্স দেওয়া হয় না বলেও অভিযোগ করেছেন মোটরযান চালকেরা। বুধবার (৩ জুলাই) দুপুরে চট্টগ্রাম বিভাগের ১১ জনকে ঝালকাঠি বিআরটিএ কার্যালয় থেকে লাইসেন্স প্রদানের জন্য আঙুলের ছাপ নেওয়ার সময় আটক করে পুলিশ। এ সময় দুই দালালকে সাজা প্রদান করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। আটক ১১ জনকে এক হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়।
জানা যায়, বিআরটিএ ঝালকাঠির সহকারী পরিচালক মো. আইয়ুব আনছারী ২০০৭ সালে চট্টগ্রামে চাকরি করতেন। ওই সময় তার কার্যালয়ে মোটরযান রেজিস্ট্রেশন ও ড্রাইভিং লাইসেন্স করার জন্য দালাল নিয়োগ করেন সাতকানিয়া উপজেলার বারকোনা গ্রামের আবদুল হককে। আবদুল হকের মাধ্যমে তিনি ঘুষ নিয়ে লাইসেন্স প্রদান করতেন। এমনকি ঘুষের টাকা দিয়ে তিনি অবৈধ সম্পদ গড়ে তোলেন। এসব ঘটনায় ২০০৭ সালে দুর্নীতি দমন কমিশন তার বিরুদ্ধে একটি মামলা করে। ওই মামলায় তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে বিআরটিএ কর্তৃপক্ষ।
পরবর্তীতে তিনি চাকরি ফিরে পেলে ভোলায় বদলি করা হয়। সেখানেও দালাল আবদুল হকের মাধ্যমে ঘুষ নেন তিনি। চার মাস আগে তাকে ঝালকাঠিতে বদলি করা হয়। ঝালকাঠিতে যোগদানের পর এখানেও গড়ে তোলেন দালাল সিন্ডিকেট। সরকার নির্ধারিত ফি তিন হাজার ৬০ টাকা থাকলেও দালালের মাধ্যমে লাইসেন্স প্রতি ছয় থেকে আট হাজার টাকা নেন তিনি। ঘুষ দিয়ে লাইসেন্স করলে তাকে মোটরযান চালানোর পরীক্ষায় অংশ নিতে হয় না। শুধু টাকা দিয়ে আঙুলের ছাপ দিলেই পাওয়া যায় লাইসেন্স। আর ঘুষের টাকা না দিলে কাউকে লাইসেন্স দেওয়া হয় না। তিনি ঝালকাঠিতে আসার পর বরিশালের কাউনিয়া এলাকার হৃদয় মৃধা নামে একজনকে দালাল হিসেবে নিয়োগ করেন। সে ফরম পূরণ করে দেয়, এজন্য তাকে ৫০ টাকা এবং প্রতিদিন ৫০০ টাকা খরচ দেন কর্মকর্তা। ঝালকাঠি বিআরটিএ সহকারী পরিচালক আইয়ুব আনছারীর গ্রামের বাড়ি ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার ডেবরা গ্রামে। তিনি বর্তমানে বরিশালে বসবাস করেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মোটরযান চালকেরা জানান, ঝালকাঠি বিআরটিএ কার্যালয়ের দালাল হৃদয় মৃধার মাধ্যমে ঘুষ নেন সহকারী পরিচালক। জনপ্রতি ছয় থেকে আট হাজার টাকা দিলে কোনো পরীক্ষা ছাড়াই লাইসেন্স দেওয়া হয়। সরকার নির্ধারিত ফি জমা দিয়ে আবেদন করলে তা গ্রহণ করেন না। তিনি নানা অযুহাত দেখিয়ে ফেরত পাঠিয়ে দেন। নিয়মানুযায়ী যদি কারও আবেদন রাখেন তাদের আবার মোটরযান চালানোর পরীক্ষায় অকৃতকার্য দেখান। পরে বাধ্য হয়ে তার কার্যালয়ের দালালের কাছে যেয়ে লাইসেন্স করতে হয় তাদের।
এ দিকে চট্টগ্রামে চাকরি করার সময় ঝালকাঠি বিআরটিএ কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আইয়ুব আনছারীর গড়ে তোলা দালাল সিন্ডিকেটের মধ্যে অন্যতম আবদুল হক তিনি এখনো সক্রিয়। আবদুল হকের মাধ্যমে তিনি চট্টগ্রামের লোকজনেরও মোটরযান রেজিস্ট্রেশন ও ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদান করেন। বুধবার আবদুল হক চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলার ১১ জন যুবককে লাইসেন্স করানোর জন্য ঝালকাঠি নিয়ে আসেন। ওই যুবকরা চট্টগ্রামের শাহ জব্বার এজেন্সির মাধ্যমে সৌদি আরবে যেতে আগ্রহী। এজেন্সি কর্তৃপক্ষ ওই যুবকদের ড্রাইভিং লাইসেন্স করার তাগিদ দেন। এ লাইসেন্স করা থাকলে তাদের সৌদি নেওয়া যাবে বলেও জানান। ওই যুবকরা চট্টগ্রাম বিআরটিএ কার্যালয়ে গেলে তাদের অনভিজ্ঞতার কারণে লাইসেন্স দেয়নি কর্তৃপক্ষ। পরে দালাল আবদুল হকের মাধ্যমে তারা ঝালকাঠি বিআরটিএ কার্যালয়ে লাইসেন্স করাতে আসেন। জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের তিন তলায় ওই ১১ জনকে সন্দেজনকভাবে ঘোরাফেরা করতে দেখে এনডিসি মো. বশির গাজী তাদের ডেকে কার্যালয়ে নিয়ে যান। সেখানে জিজ্ঞাসাবাদে তারা আবদুল হকের মাধ্যমে লাইসেন্স করার জন্য এখানে এসেছেন বলে স্বীকার করেন। লাইসেন্সের জন্য তারা জনপ্রতি আট হাজার টাকা করে দিয়েছেন।
ঝালকাঠির নেজারত ডেপুটি কালেক্টর (এনডিসি) মো. বশির গাজী বলেন, আমি সকাল সাড়ে ৮টায় অফিসে প্রবেশের সময় কয়েকজন অপরিচিত ব্যক্তিকে ঘোরাঘুরি করতে দেখি। তাদের ডেকে ঠিকানা জানতে চাইলে তারা চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলে। কী কারণে এখানে এসেছে জানতে চাইলে বলে বিআরটিএ অফিসে লাইসেন্স করার জন্য। তখন সন্দেহ হলে তাদের আমার কক্ষে নিয়ে বিস্তারিত জেনে সিন্ডিকেটের সবাইকে ধরে ফেলি। এর মধ্যে দালাল আবদুল হককে ছয় মাসের কারাদণ্ড ও ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এমনকি পরিশোধ না করলে আরও এক মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হবে বলে জানান। অপর এক দালাল হৃদয়কে সাত দিনের কারাদণ্ড এবং লাইসেন্স করাতে আসা ১১ জনকে এক হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়। সহকারী পরিচালকের বিরুদ্ধে বিআরটিএ চেয়ারম্যানের কাছে জানানো হবে বলেও জানান তিনি।
এ ব্যাপারে ঝালকাঠি বিআরটিএ সহকারী পরিচালক আইয়ুব আনছারী বলেন, আমি এসব কিছুই জানি না। চট্টগ্রাম থেকে কারা এসেছে আমি তাদের চিনি না। দালাল কেউ থেকে থাকলে আমি তাদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেব।