চ্যানেল খুলনা ডেস্কঃ ঘূর্ণিঝড় আম্ফান এবং সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে লন্ডভন্ড হয়েছে খুলনার বিস্তীর্ণ জনপদ। সম্পূর্ণভাবে ভেঙে গেছে প্রায় ১০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ। আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অন্তত ১০০ কিলোমিটার বাঁধ। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় সাড়ে চার লাখ মানুষ। বিধ্বস্ত হয়েছে ৮২ হাজার ঘরবাড়ি। ক্ষতি হয়েছে ফসলি জমি ও মাছের ঘের।
জানা গেছে, বুধবার সন্ধ্যা থেকেই খুলনা উপকূলে আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় আম্ফাান। রাতভর তান্ডব চালায়। মানুষের ঘরবাড়ি উড়ে গেছে ঝড়ের আঘাতে। বড়বড় গাছ পড়ে বন্ধ হয়ে গেছে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা। ঝড় শুরু হওয়ার আগে থেকেই বিদ্যুৎ সংযোগ ছিল বিচ্ছিন্ন। অন্ধকার আর ভূতুড়ে পরিবেশের মধ্যেই ঝড়ের সময় পার করেছে মানুষ। বুধবার মধ্যরাত থেকে কমে ঝড়ের গতিবেগ। ঝড় থেমে গিয়ে রেখে গেছে ক্ষত চিহ্ন। এদিকে আম্ফানের প্রভাবে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে খুলনার কয়রা উপজেলার পুরোটাই বিধ্বস্ত হয়েছে। বেড়িবাঁধ ভেঙে তিনটি ইউনিয়ন সম্পূর্ণভাবে লবণ পানিতে ডুবে গেছে। ২টি ইউনিয়ন আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড খুলনা-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী পলাশ কুমার ব্যানার্জী জানান, খুলনায় ৪০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এরমধ্যে ১০ কিলোমিটার সম্পূর্ণভাবে বিধ্বস্ত হয়েছে। বিধ্বস্ত হওয়া বাঁধের পুরোটাই কয়রা উপজেলায়। এছাড়াও দাকোপ, বটিয়াঘাটা, পাইকগাছা ও ডুমুরিয়া উপজেলায় আংশিক ক্ষতি হয়েছে অন্তত ৩০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ। তিনি বলেন, এরমধ্যে দাকোপের বেড়িবাঁধের অধিকাংশ এলাকায় দুইপাশের পানির চাপে বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়াও বটিয়াঘাটার বারোআড়িয়া, সুরখালী, বারোভুঁইয়া, শিয়ালীডাঙ্গা, কোঁদলা এলাকার অধিকাংশ স্থানের ভেঁড়িবাঁধ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
এছাড়াও কয়রা উপজেলার ভেঙে যাওয়া বেড়িবাঁধের মধ্যে দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়নের ছোটো আংটিহারা বাকেরগাজীর বাড়ির পাশে শাকবাড়িয়া নদীর প্রায় ১২০ গজ বেড়িবাঁধ, আংটিহারা মজিদ গাজীর পাশে ৩০০ গজ বেড়িবাঁধ, জোড়শিং বাজারের পাশে ৫০০ গজ বেড়িবাঁধ, কপোতাক্ষ নদের চোরামুখা খেয়াঘাটের কাছে ৫০০ গজ বেড়িবাঁধ ও গোলখালী তসলিম মোল্লার বাড়ির পাশে ৫০০ গজ বেড়িবাঁধ, উত্তর বেদকাশি ইউনিয়নের গাজীপাড়া গ্রামের মাথায় কপোতাক্ষ নদের ৬০০ গজ বেড়িবাঁধ, কাটকাটা বাজারের শাকবাড়ীয়া নদীর ৩০০ গজ বেড়িবাঁধ, মহারাজপুর ইউনিয়নের দশালিয়া গ্রামে কপোতাক্ষ নদের ৭০০ গজ বেড়িবাঁধ এবং কয়রা সদর ইউনিয়নের হরিণখোলা ও গোবরা ঘাটাখালি গ্রামে কপোতাক্ষ নদের আধা কিলোমিটার এলাকাসহ ১০টি জায়গার বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে এবং মহেশ্বরীপুর ইউনিয়নের কয়রা নদীর পানি পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বাঁধ উপচে লবণ পানি লোকালয়ে প্রবেশ করেছে।
কয়রা উপজেলার ক্ষতিগ্রস্ত মোস্তাজিবুল হক জানান, প্রায় ১১ বছর আগের প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় আইলার ক্ষত সারতে না সারতেই অবার আম্ফানের তান্ডবে লন্ডভন্ড হয়ে গেছে আমাদের সব স্বপ্ন। এই ১০ বছরেও বাঁধ মেরামত হয়নি। টেকসই বাঁধ না হলে এখানে ভবিষ্যতে বসবাস করা কঠিন হয়ে পড়বে।
খুলনা-৬ আসনের সংসদ সদস্য মোঃ আক্তারুজ্জামান বাবু বলেন, খুলনার মধ্যে কয়রা উপজেলা সবথেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ১২১ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের মধ্যে প্রায় ১০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করেছে। এছাড়াও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৪০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ। কমপক্ষে ৫০ কোটি টাকার মাছের ক্ষতি হয়েছে। কয়েক হাজার হেক্টর মৎস ঘেরের ক্ষতি হয়েছে। অন্তত ১৫ হাজার বাড়ি ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে।
খুলনা জেলা প্রশাসনের ত্রাণ ও পূনর্বাসন শাখা সূত্র জানিয়েছে, খুলনার ৬৮টি ইউনিয়ন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এরমধ্যে কয়রা, পাইকগাছা, দাকোপ, বটিয়াঘাটা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ৪ লাখ ৪৫ হাজার মানুষ আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে ৮২ হাজার ৫৬০ টি।