ইমদাদুল হক:: ঘূর্ণিঝড় রেমালের আঘাতে পাকইগাছায় জলোচ্ছ্বাসে লবন পানিতে প্লাবিত হয়ে বহু গ্রামের মানুষ তিব্র সুপেয় পানির সংকটে পড়েছে।ঘূর্ণিঝড়র প্রভাবে সৃষ্ট জলচ্ছাসে পাকইগাছায় বেশির ভাগ এলাকায় প্লাবিত হয়েছে। লবণ পানি প্রবেশ করেছে সুপেয় পানির আধার সরকারি-বেসরকারি পুকুরে। ক্ষতিগ্রস্ত বিভিন্ন এলাকার পিএসএফ ও টিউবওয়েল। যার ফলে উপজেলার দেলুটি,লতা,সোলাদানা,গড়ুখালী, লস্কর ও চাদখালী ইউনিযানে বেশির ভাগ এলাকায় সুপেয় পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। নদী তীরবর্তী এলাকার অনেকে বাধ্য হয়ে লবণ পানি পান করছেন। লবণ পানি পান ও ব্যবহার করায় অনেকের চর্মরোগ ও পেটের পীড়া দেখা দিয়েছে। কেউ কেউ জীবন বাঁচাতে দূর-দূরান্ত থেকে পানি ক্রয় করে আনছেন। ঝড়ের তান্ডব শেষ হওয়ার পরে জেলা-উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শুকনো খাবার পাওয়া গেলেও, সুপেয় পানির কোন সরবরাহ ছিল না দুর্গত এলাকায়। সরকারি ভাবে নদী তীরবর্তী এলাকায় সুপেয় পানি সরবরাহের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
উপজেলা সদর পৌরসভা,গদাইপুর,কপিলমুনি ও রাড়ুলী ইউনিয়নের বাইরে সব জায়গায় সুপেয় পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। রেমালের আঘাতে জলোচ্ছ্বাসে লবন পানিতে প্লাবিত হয়ে এই উপজেলার দেলুটি,লতা, সোলাদানা ও গড়ুইখালী ইউনিয়নের সর্বত্রই এখন সুপেয় পানির সংকট। এসব ইউনিয়নের বহু গ্রামের মানুষ তিব্র সুপেয় পানির সংকটে পড়েছে। জলমগ্ন গ্রাম গুলোর মধ্যে ২২নং পোল্ডারের দেলুটি ইউপি’র তেলিখালী,হাটবাড়ী,কালিনগর,ফুলবাড়ী,গোপিপাগলা,গেউবুনিয়া চকরি-বকরিসহ ১২গ্রাম ও ২৩ নং পোল্ডারের সোলাদানা ইউপি’র ছালুবুনিয়া,খালিযারচক, আমুরকাটা,সোলাদানা, বয়ারঝাপা,দীঘাসহ ২১গ্রাম ও লস্কর ইউপি’র করুলিয়া ও লস্কর,১৯/২০ পোল্ডারের লতা, হানি-মুনকিয়া,পুটিমারী,১০/১২ পোল্ডারের গড়ইখালী।
সরেজমিনে দেখা গেছে, এসব এলাকায় স্নান ও গৃহস্থলীর কাজ ব্যবহৃত পানি ও সুপেয় খাবার পানির তিব্র সংকট দেখা দিয়েছে। জলোচ্ছ্বাসে লবন পানিতে প্লাবিত হয়ে মিষ্টি পানির উৎস্য পুকুর-খাল ও জলাশয় নষ্ট হয়ে গেছে। কোথাও কোথাও মিষ্টি পানির মাছ ও শামুক,ঝিনুক জলজপ্রানী মরে দুর্ঘন্ধ ছড়াছে। দেলাটি ইউনিয়নের তেলিখালি গ্রামের সবিতা মণ্ডল বলেন, ঝড়ে গাছ পড়ছে, ঘর ভাঙছে রাস্তা ও বাড়ি-ঘরে পানি উঠছে। সেসব এখন স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছি। কিন্তু যে পুকুরের পানি যে লবণ হয়ে গেছে, তা মিষ্টি করবো কি দিয়ে। পানির যে কি কষ্ট তা বলে বুঝানো যাবে না। একই গ্রামের ঝর্ণা আক্তার বলেন, ঝড় চলে গেছে, কিন্তু আমাদের সব জায়গায় লবণ পানি দিয়ে গেছে। মূলত বৃষ্টির পানি খাচ্ছি আমরা। কিন্তু গোসল রান্না এসব কাজের জন্য বাধ্য হয়ে লবণ পানি ব্যবহার করতে হচ্ছে। অনেকের চর্মরোগ দেখা দিয়েছে। পেটের পীড়াও হচ্ছে সাধারণ মানুষের। উপজেলার মানুষও সুপেয় পানির একই ধরনের সংকটে ভুগছেন। সোলাদানার আমুরকাটার বাসিন্দা বিকাশেন্দু সরকার জানান, ইউনিয়নের মানুষ এমনিতেই সুপেয় পানি সংকট আছে।এর পরেই ঘুর্নিঝড়ে বেঁড়িবাঁধ ভেঙ্গে একাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়ে খাবার জলের সংকট আরো তিব্র হয়েছে।
লতা ইউপি চেয়ারম্যান কাজল কান্তি বিশ্বাস জানান, এমনিতেই লতাসহ আশপাশ ইউনিয়নগুলো টিউবওয়ের সাকসেসফুল না। এ দুর্যোগে এলাকা প্লাবিত হয়ে পুটিমারী,লতাসহ কযেকটি গ্রামের মানুষের স্নান ও খাবার জলের সমস্যায় পড়েছে। গড়ইখালী ইউপি চেয়ারম্যান জি,এম আব্দুস সালাম কেরু বলেন,স্থানীয় আলমশাহী ইনস্টিটিউটের পুকুর থেকে পাইপ লাইনের মাধ্যমে শিবসা নদী তীরবর্তী এলাকার মানুষ সুপেয় পানি চাহিদা পূরন করছেন। লস্করের দীপঙ্কর মন্ডল জানান,দুর্যোগে আমরা গৃহস্থালির কাজে ব্যবহৃত পানি ও খাবার পানি কষ্টে আছি। আইলায় পোল্ডারে লবন জল ঢুকলেও গ্রাম বাসির একমাত্র ভরসা মিষ্টি পানির বড় দীঘি অক্ষত ছিল। কিন্তু রেমালে এ দীঘি প্লাবিত হয়ে তছনছ করে দিয়েছে। মাছ,শামুক-ঝিনুক মরে দুর্ঘন্ধ ছড়াছে।সোলাদানা গ্রামের মোঃ জাহিদুল ইসলাম বলেন, ঝড়ে এত বেশি পানি হয়েছিল পুরো এলাকা তলিয়ে গেছে। এখনও বেশির ভাগ জায়গায় পানি জমে আছে। যে পুকুরের পানি সবাই পান করতো, সেই পুকুরের পানি এখন লবণাক্ত। বাধ্য হয়ে অনেকেই লবণ পানি পান করছেন। একই এলাকার কহিনুর বেগম বলেন, চারদিকে পানি কিন্তু খাবার ও গোসলের পানি নেই। বাধ্য হয়ে লবণ পানি খাচ্ছি। প্রথম দুই দিন কষ্ট হচ্ছিল, কিন্তু জীবনতো বাঁচাতে হবে।
প্লাবিত এলাকায় তিব্র খাবার পানির সংকট নিরসনে মোবাইল ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্টের মাধ্যমে বিভিন্ন স্থানে বিনামূল্যে সুপেয় পানি সরবরাহ শুরু হয়েছে। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর ক্ষতিগ্রস্থ এলাকায় প্রতিদিন ৭ ঘন্টা করে খাবার পানি সরবরাহ করছেন। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপ-সহকারী প্রকৌশলী শাহাদাৎ হুসাইন জানান,দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্থ দেলুটি, সোলাদানা ও গড়ইখালী ইউনিয়নে মোবাইল ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্টের মাধ্যমে প্রতি ঘন্টায় ৬৬০ লিটার করে বিনামূল্যে খাবার পানি বিতরণ কর্যক্রম শুরু হয়েছে। তিনি আরোও বলেন, বৃষ্টির পানি সংরক্ষণে ইতোপুর্বে ১০ ইউনিয়নে প্রধানমন্ত্রী প্রদত্ত ৩ হাজার লিটারের ৫ হাজার পানির ট্যাংকি বিতরন করা হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত এটি চলবে। তবে ঘূর্ণিঝড় রিমালে দুর্গত স্থানীয়রা বলছেন, এই পানিতে আসলে সংকট মিটবে না। এটা উপজেলার একটি জায়গায় দেওয়া হচ্ছে। প্রত্যন্ত এলাকায় যেতেও পারছে না। সুপেয় পানির সংকট মেটানোর জন্য ভ্রাম্যমাণ ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্টের সংখ্যা বৃদ্ধি করা দরকার।