বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ ও প্রাণহানির মধ্য দিয়ে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের ভোট চলছে। ভোটের শুরুতেই উত্তাপ ছড়িয়েছে জাতীয় সংসদেও।
বুধবার সংসদে আইন প্রণয়নের আলোচনায় উঠে আসে নির্বাচন প্রসঙ্গ।
একটি খসড়া আইন পাসের সময় বিএনপির সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ ভোটের প্রসঙ্গ তুললে আইনমন্ত্রী ও জাতীয় পার্টির সদস্যরা এর জবাব দেন।
‘দ্য সিভিল কোর্টস (সংশোধন)-২০২১’ সংসদে পাসের সময় বিলটি নিয়ে জনমত যাচাইয়ের প্রস্তাব তোলেন বিএনপির হারুনুর রশীদ।
এ সময় তিনি বলেন, সংবিধানে বলা আছে– সব পর্যায়ে নির্বাচিত প্রতিনিধিরা প্রশাসন চালাবেন। কিন্তু আজ কী হচ্ছে? নির্বাচনের নামে তামাশা হচ্ছে। প্রহসন হচ্ছে। এর প্রয়োজন নেই। সকাল থেকে দেখা যাচ্ছে– চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে কী হচ্ছে।
সাংসদ হারুন আরও বলেন, এ ধরনের ভোটের প্রয়োজন নেই। আইন সংশোধন করা হোক। প্রধানমন্ত্রী যাকে খুশি নিয়োগ দেবেন। তারা দায়িত্ব পালন করবেন। ভোটের নামে প্রহসনের প্রয়োজন নেই।
এ সময় সরকারদলীয় সদস্যরা প্রতিবাদ করলে হারুন বলেন, ‘একটুকুও অসত্য বলছি না। তথ্য জেনে বলছি।’
পরে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক অন্য সদস্যদের জনমত যাচাইয়ের প্রস্তাবের জবাব দেওয়ার পর বলেন, আমরা এখানে যারা আছি, গতকালকে জন্ম নিইনি। উনারা নির্বাচনের কথা বলছেন। আমরা জিয়াউর রহমানের সময় ‘হ্যাঁ-না’ ভোট দেখেছি। ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচন দেখেছি। ব্যালটবাক্স পাওয়া যেত না। ভোট যে দেবে, ব্যালট বাক্স নেই।
তিনি বলেন, যাদের এই চরিত্র, তাদের কাছ থেকে নির্বাচন কীভাবে সুষ্ঠু করতে হয় সেটি শেখার প্রয়োজন নেই। জনগণকে ভোট দেওয়ার অধিকার ফিরিয়ে দিয়েছি।
পরে সংশোধনী প্রস্তাব তোলার সময় বিএনপির সংরক্ষিত আসনের সদস্য রুমিন ফারহানা বলেন, ভোট দেয় প্রশাসন। আর দেখে জনগণ। ভোটটা সুষ্ঠু করে করলেই তো হয়। কারও থেকে ভোট শিখতে হবে না। ভোট কীভাবে দিতে হয় সেটি সবাই জানে। ভোটটা দিতে দিলেই হয়।
হারুনের কথার জবাবে জাতীয় পার্টির মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, তার এলাকায় পৌরসভা নির্বাচন ‘অত্যন্ত সুষ্ঠু’ হয়েছে।
পীর ফজলুর রহমান বলেন, ‘সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরে বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী জয়ী হয়েছে। নির্বাচন অত্যন্ত সুন্দর হয়েছে বিএনপির প্রার্থীরাও সেটি বিবিসিকে বলেছেন।’
জাতীয় পার্টির শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, ‘৮৪ শতাংশ ভোট পড়েছে আমার পৌরসভায়। লাঙ্গল জয়ী হয়েছে। সবাই মিলে চাইলে ভোট সুষ্ঠু হবে।’
পরে সংশোধনী প্রস্তাব তোলার সময় হারুন বলেন, এখনই দেখেন চট্টগ্রামে বহু কেন্দ্র থেকে এজেন্ট বের করে দেওয়া হয়েছে। গণমাধ্যামকর্মীদের পাস দেওয়া হচ্ছে না। চাইলে এখনই ফোনে দেখাতে পারব।
সংশোধনী প্রস্তাবের জবাব দিতে উঠে আইনমন্ত্রী বলেন, বিএনপি আমলে কখন, কোথায় ভোট হতো জানতাম না। ভোট হলে ১৫ ফেব্রুয়ারি কী নির্বাচন হয়েছিল? কতজন ভোট পেয়ে জিতেছিল।
প্রসঙ্গত চট্টগ্রাম নগরীর ৭৩৫টি কেন্দ্রে বুধবার সকাল ৮টায় ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে, একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলবে।
ভোটের শুরুতে সকালে নগরীর লালখানবাজার ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও বিদ্রোহী কাউন্সিলর প্রার্থীর অনুসারীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। এতে তিন পক্ষের অন্তত ২১ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
এছাড়া ১৩ নম্বর পাহাড়তলী ওয়ার্ডের ইউসেফ আমবাগান টেকনিক্যাল স্কুলকেন্দ্রে আওয়ামী লীগ-সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী এবং বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। এ সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে আলাউদ্দিন নামের এক যুবক নিহত হয়েছেন।