চ্যানেল খুলনা ডেস্কঃ খুলনার দিঘলিয়া উপজেলায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ডিজিটাল হাজিরার নামে তুঘলকি কাণ্ড ঘটানো হয়েছে। কিন্তু চাকরি হারানোর ভয়ে মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছেন না কেউ।
অভিযোগ উঠেছে, দিঘলিয়ার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হাফিজ আল আসাদ ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা শাহনাজ বেগম উপজেলার ৫০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে অতিরিক্ত মূল্যে বায়োমেট্রিক মেশিন কিনতে বাধ্য করেছেন।
জানা গেছে, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের হাজিরায় বায়োমেট্রিক মেশিন ক্রয়ের জন্য গত বছরের ১৩ অক্টোবর নির্দেশ দেওয়া হয়। কোন ভাবেই নির্দিষ্ট একটি প্রতিষ্ঠান থেকে কেনার জন্য বাধ্য করা যাবে না বলেও নির্দেশ রয়েছে। অথচ দিঘলিয়ার ৫০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দপ্তরে দুই দফায় ডেকে ‘ইনোভয়েস’ নামের প্রতিষ্ঠান থেকে মেশিনটি ক্রয়ের নির্দেশ দেয়া হয়। এতে স্কুল কর্তৃপক্ষ অধিক মূল্যে ইনোভয়েস’এর মেশিন কিনতে বাধ্য হন।অভিযোগ উঠেছে, উচ্চ দামে কেনা এসব মেশিন অত্যন্ত নিম্নমানের।
অনুসন্ধানে জানা যায়, নিম্নমানের ওই বায়োমেট্রিক মেশিনের বাজার মূল্য ৯ থেকে ১০ হাজার টাকা। কিন্তু তা ২২ হাজার টাকায় স্কুলের প্রধান শিক্ষদের কিনতে বাধ্য করা হয়েছে। ৫০টি বিদ্যালয়ের সবগুলোতেই ২২ হাজার টাকায় এ মেশিন ক্রয়ের বিল ভাউচারও দেয়া হয়েছে। হাজিরা মেশিন ক্রয়ের এমন তুঘলকি কাণ্ডে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন উপজেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষক। কিন্তু চাকরি হারানোর ভয়ে কেউ প্রকাশ্যে মুখ খোলার সাহস পাননি।
সূত্র জানায়, সরকারি বিদ্যালয়ের স্বাধীনভাবে এ মেশিন ক্রয়ের সুযোগ রয়েছে। স্কুলে সরকার প্রদত্ত স্লিপের টাকা থেকে এ মেশিন ক্রয় করা হয়। কিন্তু কোন নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও শিক্ষা কর্মকর্তা তাদের পছন্দের প্রতিষ্ঠান থেকে বেশি দামে ওই মেশিন কিনতে বাধ্য করেন।
উপজেলার অন্তত ১৫ থেকে ২০টি স্কুল পরিদর্শন করে এবং শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বললে এ বিষয়ে তাদের মধ্যে চরম ক্ষোভ লক্ষ্য করা গেছে।
উপজেলার ৮নং উত্তর দিঘলিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রুপা দে ও বারাকপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আল-মামুনসহ কয়েকজন শিক্ষক বলেন, ‘উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার সমন্বয়ে অনুষ্ঠিত সভায় ডিজিটাল বায়োমেট্রিক মেশিন ক্রয়ের সিদ্ধান্ত হয়। সে মোতাবেক মেশিন বাবদ ২২ হাজার টাকা পরিশোধ করা হয়।’
উপজেলা সহকারি প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি মো. কামরুল ইসলাম বলেন, ‘উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা তাদের দু’ দফায় ডেকে মেশিন কেনার ব্যাপারে ৪টি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কথা বলেন। পরে যাচাই-বাছাই করে সকল স্কুলকেই একটি প্রতিষ্ঠানের মেশিন কিনতে বলা হয়। সেভাবেই উপজেলার ৫০টি স্কুলে মেশিন কেনা হয়েছে।’
এ বিষয়ে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা শাহনাজ বেগম বলেন, ‘ডিজিটাল হাজিরা মেশিন ক্রয়ের বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দপ্তরে দু’ দিন বসে শিক্ষকদের নিয়ে সভা করা হয়। ওই সভা থেকেই সকল স্কুলে ভালো মানের মেশিন ক্রয়ের জন্য নির্দিষ্ট একটি প্রতিষ্ঠান এবং মেশিনপ্রতি ২২ হাজার টাকা করে মূল্যও নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। তবে, এতে কোন অনিয়ম-দুর্নীতি হয়নি।’
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এসএম সিরাজ-উদ-দোহা বলেন, ‘স্কুলগুলো সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে নিজেদের পছন্দমত ডিজিটাল হাজিরা মেশিন ক্রয় করবে। এ ক্ষেত্রে কোন কর্মকর্তা-কর্মচারি জড়িত থাকতে পারবে না।’
তবে দিঘলিয়া উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা শাহনাজ বেগমের এ ধরণের সম্পৃক্ততার বিষয়টি তার জানা নেই। এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে তিনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলেও জানান।
এ বিষয়ে দিঘলিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জানান, তিনি জরুরি কাজে ব্যস্ত আছেন। এ বিষয়ে কথা বলার জন্য তার অফিসে যাওয়ার অনুরোধ করেন। কোন ক্রমেই তিনি এ প্রসঙ্গে সেলফোনে কথা বলতে রাজি হননি। এমনকি কথা শেষ হওয়ার আগেই সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন তিনি।