সব কিছু
facebook channelkhulna.tv
খুলনা বৃহস্পতিবার , ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ২১শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
চাহিদা ও আবাদ ‘বাড়ছে’ চুইয়ের | চ্যানেল খুলনা

চাহিদা ও আবাদ ‘বাড়ছে’ চুইয়ের

শেখ মাহতাব হোসেন :: ডুমুরিয়া (খুলনা) দেশের অন্য এলাকায়ও এখন চুইয়ের জনপ্রিয়তা বেড়েছে। অনেকেই সাধারণ তরকারিতেও এই মসলা ব্যবহার “খুব তীব্র নয়, ঝাল ঝাল ভাব। এই ভাবটাই স্বাদটাকে আরও বেশি রসময় করে তোলে। স্বাদের পাশাপাশি ওষধিগুণ থাকায় দিন দিন ২০১২ সালের খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার বান্ধা এলাকার অশোক বৈরাগী প্রথম এ অঞ্চলে চুইগাছের ডগা কেটে মাটিতে লাগিয়ে বাণিজ্যিকভাবে খুলনার কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি কেজি চুই মানভেদে ৩০০ থেকে ১ হাজার  ৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ঈদের বাজারে এর দাম ২ ২০২১-২২ সালে খুলনার ডুমুরিয়া ও বটিয়াঘাটা উপজেলাতে ৬০ হেক্টর জমিতে চুইয়ের চাষ হচ্ছে বলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খুলনার উপ- পরিচালক হাফিজুর জানান।
খুলনা বিভাগের চার জেলা খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা ও নড়াইলে মোট ৯৯ দশমিক ৭ হেক্টর জমিতে চুইয়ের চাষ হচ্ছে। এর মোট উৎপাদন প্রায় ১৯০ মেট্রিকটন। ৩ হাজার ৫৭০ জন কৃষক এসব জেলাতে চুই চাষের সঙ্গে যুক্ত।

এর আগে ২০২০-২১ সালে খুলনায় ৫৫ দশমিক ৫ হেক্টর জমিতে চুইয়ের চাষ হয়েছিল। ২০১৯-২০ সালে চাষ হয় ৪৭ হেক্টর জমিতে। ২০১৮-১৯ সালে চাষ হয় ৪১ হেক্টর জমিতে। ২০১৭-১৮ সালে চাষ হয় ৩৫ হেক্টর জমিতে। আর খুলনা, বাগেরহাট,
সাতক্ষীরা ও নড়াইলে ২০২০-২১ সালে ৮৯ হেক্টর জমিতে চুইয়ের চাষ হয়েছিল। ২০১৯-২০ সালে এর পরিমাণ ছিলো ৮০ হেক্টর
জমিতে। ২০১৮-১৯ সালে চাষ হয় ৭৪ হেক্টর জমিতে। ২০১৭-১৮ সালে চাষ হয় ৬০ হেক্টর জমিতে।
খুলনা বিভাগ খুলনা জেলা চুইঝাল হাজার টাকাও ছাড়িয়ে যায়। তবে মাটির নিচের অংশের শিকড় চুইয়ের দাম সবচেয়ে বেশি।
এরপর কাণ্ড ও ডালও ভালো দামে বিক্রি হয়। খুলনা নগরীর গল্লামারি কাঁচাবাজারে প্রায় ৩৫ বছর ধরে চুই বিক্রি করে আসা শুকুর আলী বিশ্বাস জানান, রংপুর, কুড়িগ্রামের পাইকার ছাড়াও খুলনার ডুমুরিয়া, যশোরের কেশবপুর, মনিরামপুর, ও বাগেরহাটের ফকিরহাট এলাকার চাষি-গৃহস্থদের কাছ থেকে চুই কিনে তার দোকানে বিক্রি করেন।
আগের থেকে চুয়ের চাহিদা চারগুণ বেড়েছে বলে জানান তিনি।
এ বাজারের আরেক চুই ব্যবসায়ী আব্দুল গফফার বলেন, “আমি ১৫ বছর ধরে চুই বিক্রি করছি। আগের থেকে চুইয়ের চাহিদা কয়েকগুণ বেড়েছে।” নগরীর দৌলতপুর কাঁচাবাজারে  প্রায় ৪০ বছর ধরে চুই বিক্রি করেন আবদুর শেখ। রংপুর, কুড়িগ্রামের পাইকারদের কাছ থেকে চুই কিনে বিক্রি করেন তিনি।
তিনি বলেন, “চাহিদা বাড়ায় অনলাইনেও এখন চুইঝাল বিক্রি করছেন কেউ কেউ।” চারা উৎপাদনে সফল হন। এরপর স্থানীয় কৃষি বিভাগের সহায়তায় তার চারা উৎপাদনের পদ্ধতি ছড়িয়ে পড়ে বিভিন্ন জেলা-উপজেলায়।
এখন প্রতি বছর চুইয়ের চারা ও
চুই বিক্রি করে ৬-৭ লাখ টাকা আয় করছেন জানিয়ে অশোক বলেন, “চুই সাধারণত দুই ধরনের হয়-ঝাড়চুই এবং গেছোচুই।
চুইয়ের কাটিং যেকোনো হালকা উঁচু বা গাছের গোড়ায় রোপণ করা যায়। উঁচু জায়গায় চুইগাছ ভালো হয়। বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ ও আশ্বিন- কার্তিকই চুইলতা লাগানোর উপযুক্ত সময়। “
ডুমুরিয়া উপজেলার আটলিয়া ইউনিয়নের বরাতিয়া গ্রামের নবদ্বীপ মল্লিক জানান, তিনি  ২০১৬ সাল থেকে চুই নার্সারি করছেন। প্রতি বছর চুইয়ের চারা ও চুই বিক্রি করে ২০ লাখ টাকা আয় করেন।
এছাড়া প্রথমবারের মতো এবার চুইয়ের পাউডার থাইল্যান্ডের বাঙ্গালি প্রবাসীদের কাছেও পাঠিয়েছেন। নবদ্বীপ মনে করেন, দেশের পাশাপাশি বিদেশের বাজার ধরতে পারলে চুইঝালের কদর আরও বাড়বে।
বটিয়াঘাটা উপজেলার সদর ইউনিয়নের সুব্রত মণ্ডল গত বছর চুই বিক্রি করে ৫ লাখ টাকা আয় করেছিলেন। এ বছর ১০ লাখ টাকার চুই আর ৭ লাখ টাকার চুইয়ের চারা বিক্রি করেছেন। চুইয়ের চারা ও চুইয়ের চাহিদা বেড়েছে বলে জানান তিনি। চুইঝালের জনপ্রিয়তা বাড়ছে।” ছোট জায়গায় কম খরচে অধিক আয় হওয়ায় দেশের বিভিন্ন স্থানে এখন বাণিজ্যিক ভাবে এ মসলার চাষ হচ্ছে বলে জানান ডুমুরিয়া উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মোঃ ইনসাদ ইবনে আমিন ।
খুলনা বিভাগের যশোর, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা জেলাতেও ব্যক্তিগত এবং বাণিজ্যিক দুইভাবেই এর চাষ বাড়ছে।

ঘেরের আইলেও এর চাষ করছেন কেউ কেউ। হেক্টর প্রতি এর ফলন ২ থেকে ৩ টন। ২ থেকে ৩ শতক জমিতে চুই লাগালে ৩-৪
বছরের মধ্যে ২-৩ লাখ টাকা আয় করা সম্ভব।
মোছাদ্দেক আরও জানান, খুলনার পাইকগাছা, ডুমুরিয়া, বটিয়াঘাটা ও রূপসা উপজেলায় চুইয়ের চারা উৎপাদন হয়। গড়ে উঠেছে ছোট-বড় নার্সারি। একেকটি চারা তৈরিতে খরচ হয় ৩ থেকে সর্বোচ্চ ১০ টাকা। বিক্রি হয় ৩৫ থেকে ৪৫ টাকায়। এক বিঘা জমিতে লাগানো যায় ৬০০-৭০০ চারা। পঞ্চাশ হাজার টাকা খরচ করলে একজন চাষি দেড় লাখ টাকার মতো চারা বিক্রি করতে পারেন। আর চারা লাগানোর এক বছর পরই চুই থেকে আয় আসে। নিরামিষভোজীরাও খাবার তালিকায় চুইঝাল রাখছেন। স্বাদ ও ঘ্রাণ বাড়াতে হালিম, ঝালমুড়িতেও এর ব্যবহার হচ্ছে।
খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার চুকনগর বাজারে ‘আব্বাসের হোটেল বিখ্যাত হয়ে উঠেছে চুইঝাল দিয়ে খাসির মাংস রান্নায়। প্রতিদিন দেশ ও দেশের বাইরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লোকজন এ খাবারের স্বাদ নিতে আসেন। চুইঝালের তৈরি মাংস খুলনার চুকনগর, জিরোপয়েন্ট, সোনাডাঙ্গা ছাড়িয়ে এখন ঢাকায়ও প্রসার লাভ করেছে।
চুই নিয়ে খুলনা অঞ্চলের মাঠ পর্যায়ের কৃষকদের সঙ্গে দীর্ঘদিনের কাজের অভিজ্ঞতা রয়েছে খুলনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা মোছাদ্দেক হোসেনের।
তিনি বলেন, “অনেকটা পানের লতার মতো দেখতে চুই গাছের পাতায় ঝাল নেই। এর শিকড়, কাণ্ড বা লতা কেটে টুকরো করে
রান্নায় ব্যবহার করা হয়। রান্নার পর কিছুটা গলে যাওয়া চুইয়ের টুকরো চুষে বা চিবিয়ে খাওয়া হয়। এর স্বাদ ঝাল; তবে ঝালটার আলাদা মাদকতা আছে। খুলনা অঞ্চলের জনপ্রিয় মসলা চুই তরকারীতে বাড়তি স্বাদ যোগ করে। চুইয়ের সঙ্গে আস্ত  রসুন দিয়ে গরু, খাসি কিংবা হাঁসের মাংস রান্না এ অঞ্চলের ঐতিহ্য; প্রচলনও দীর্ঘদিনের।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খুলনার উপ-পরিচালক মো. হাফিজুর রহমান জানান, চুই বর্তমানে দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সম্ভাবনাময় কৃষিপণ্য। ওষধিগুণ থাকায় এর চাহিদা ও ব্যবহার বেড়েই চলছে। খুলনা বিভাগে চুই এত জনপ্রিয় যে একে খুলনার কৃষিপণ্য হিসেবে ব্র্যান্ডিং করা হয়েছে।

https://channelkhulna.tv/

কৃষি ভাবনা আরও সংবাদ

ডুমুরিয়ায় আগাম আমন ধানের ভালো ফলনে খুশি কৃষক

ফকিরহাটে বিনামুল্যে বীজ ও সার পেল ১২৩০ কৃষক

ডুমুরিয়ায় ২০২৪-২৫ অর্থবছরে প্রণোদনা/ পূনর্বাসন কর্মসূচীর আওতায় সার বীজ বিতরণ

সাতক্ষীরা বোটানিক্যাল সোসাইটির প্রথম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালন

সাতক্ষীরা রপ্তানী শিল্প চিংড়িতে পুষ করায় ৫০ হাজার টাকা জরিমানা

রামপালে সুন্দরবনগামী মৎস্যজীবী ও জেলেদের সাথে মতবিনিময় সভা

চ্যানেল খুলনা মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন  
DMCA.com Protection Status
সম্পাদক: মো. হাসানুর রহমান তানজির
It’s An Sister Concern of Channel Khulna Media
© ২০১৮ - ২০২৪ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত | চ্যানেল খুলনা.বাংলা, channelkhulna.com.bd
যোগাযোগঃ কেডিএ এপ্রোচ রোড (টেক্সটাইল মিল মোড়), নিউ মার্কেট, খুলনা।
প্রধান কার্যালয়ঃ ৫২/১, রোড- ২১৭, খালিশপুর, খুলনা।
ফোন- 09696-408030, 01704-408030, ই-মেইল: channelkhulnatv@gmail.com
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য অধিদফতরে অনলাইন নিউজ পোর্টাল নিবন্ধনের জন্য আবেদিত।