বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর বীর উত্তম বলেছেন, এ সরকারের কাছে দাবি করে কোনো লাভ নেই। চুপ করে থাকলে দেশের স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রও থাকবে না। আন্দোলন-সংগ্রামের মাধ্যমেই এ সরকারের বিদায় করে সত্যিকারের জনগণের সরকার কায়েম করতে হবে। তিনি শনিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) বিকালে নগরীর কেডি ঘোষ রোডের বিএনপি কার্যালয় চত্বরে খুলনা বিভাগীয় সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃায় এ কথা বলেন। শাহজাহান ওমর বলেন, আওয়ামী লীগ কোনো দিন সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসেনি। ১৯৭৩ সালের নির্বাচনে ব্যালট পেপার ঢাকায় এনে ইঞ্জিনিয়ার আব্দুর রশিদকে পরাজিত করে বঙ্গবন্ধুর খুনি খন্দকার মোশতাককে জেতানো হয়েছিল। বর্তমানের বিনা ভোটের এমপিরা খন্দকার মোশতাকের মত কবে বেঈমানি করে তাও বলা যায় না। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ কোনো রাজনৈতিক দল নয়। এরা শরণার্থীর দল। এরা কোনো মুক্তিযুদ্ধ করেনি। এরা ভারতে গিয়ে শরণার্থী শিবিরে অবস্থান করেছিল। অন্যদিকে, জিয়াউর রহমান শুধু স্বাধীনতা যুদ্ধের ডাক দিয়েই ক্ষান্ত থাকেননি, তিনি রণাক্ষণেও যুদ্ধ করেছেন। বীর উত্তম খেতাব জিয়াউর রহমানের অর্জন। এ খেতাব কেউ কেড়ে নিতে পারবে না। তিনি খুলনা অঞ্চলে বিভিন্ন যুদ্ধের অংশগ্রহণের স্মৃতিচারণ করে বলেন, আমরাও যুদ্ধ করে খেতাব অর্জন করেছি। রাজাকার আওয়ামী লীগ করলে বিরাট মুক্তিযোদ্ধা। আর জিয়াউর রহমান, শাহজাহান ওমররা বিরাট রাজাকার। কারণ আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছি। সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের দাবিতে, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের বীর উত্তম খেতাম বাতিলের ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে ও বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে দেশের ছয় সিটিতে মেয়র প্রার্থীদের নেতৃত্বে শনিবার দুপুরে খুলনা মহানগর ও জেলা বিএনপি মহাসমাবেশের ডাক দেয়। প্রশাসনের অনুমতি না পাওয়ায় চতুর্পাশে কড়া পুলিশি বেষ্টনির মধ্যে সমাবেশ করে দলটি। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন মহানগর বিএনপির সভাপতি খুলনা সিটি করপোরেশনের দলীয় মেয়র প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু। সমাবেশে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, ২০২১ সাল হচ্ছে পরিবর্তনের বছর। এই বছর খালেদা জিয়া মুক্ত হবেন, তারেক রহমান দেশে ফিরবেন। এই বছরেই জনগণের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হবেন। ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী বলেন, শেখ হাসিনার ৪০ চোরের সরদার। তার মন্ত্রীসভার ৪০ সদস্যই চোর। একমাত্র ফরিদপুর থেকেই ৫০ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়েছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বিএনপির মেয়র প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন বলেন, কারাগারে লেখক মুশতাক আহমেদকে হত্যা করা হয়েছে। জিয়াউর রহমান মাত্র ৩৬ বছর বয়সে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন। বাংলাদেশ এখন স্বাধীন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র নয়। এদেশের মানুষ স্বাধীনভাবে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে না।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র প্রার্থী তাবিথ আওয়াল বলেন, জালিম শাসক আমাদের পথে পথে বাঁধা সৃষ্টি করেছে। তারপরও মহাসমাবেশ ঠেকাতে পারেনি। ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষের মানুষকে দমন করার জন্য করা হয়েছে। চট্টগ্রামের মেয়র প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, সমাবেশে আসার পথে পথে নেতাকর্মীদের বাঁধা দিয়ে এ সরকার প্রমাণ করেছে,বাংলাদেশ পুলিশি রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। তিনি বলেন, জিয়াউর রহমানের বীর উত্তম খেতাব উধাও করে দেয়া হবে তা বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষ বরদাশত করবে না। রাজশাহীর মেয়র প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল বলেন, গত চারদিন ধরে খুলনার মানুষ অবরুদ্ধ রয়েছে। বিনা ভোটের নির্বাচিত এমপিরা ঘরে বসে প্রশাসনকে বলছে, বিএনপির নেতাকর্মীদের ধরেন, আর জেলে পোরেন। সরকার পুলিশ, বিজিবি, র্যাবসহ প্রশাসনকে বাংলাদেশের মানুষের বিরুদ্ধে ব্যবহার করছে। বরিশালের মেয়র প্রার্থী ও সাবেক মেয়র মুজিবুর রহমান সারোয়ার বলেন, সরকার উন্নয়নের রাজনীতির কথা বলে মানুষকে বিভ্রান্ত করছে। নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য আমাদের মাঠে নামতে হবে।
সমাবেশে বিশেষ অতিথি ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু ও এড. নিতাই রায় চোধুরী, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা মসিউর রহমান, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল ও এড. মজিবর রহমান সরোয়ার, ঢাকা দক্ষিণের মেয়র প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার ইসরাক হোসেন, ঢাকা উত্তরের মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল, চট্রগ্রামের মেয়র প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেন, রাজশাহীর মেয়র প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল। নগর বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনি ও জেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক আমীর এজাজ খানের সঞ্চালনায় সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন আমিরুজ্জামান খান শিমুল, কৃষিবিদ শামীমুর রহমান শামীম, অনিদ্য ইসলাম অমিত, অধ্যক্ষ সোহরাব উদ্দিন, আজিজুল বারী হেলাল, সৈয়দ মেহেদী আহমেদ রুমী, আনোয়ার হোসেন, গালিব ইমতিয়াজ নাহিদ, তাজকিন আহমেদ চিশতী, আব্দুল আলিম, ওয়াহিদুজ্জামান বুলা, মো. আমজাদ হোসেন, বিশ্বাস জাহাঙ্গীর আলম, আলী আহমেদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা এড. মশিউর রহমান, এড. সৈয়দ সাবিরুল হক সাবু, মুন্সি সাহারুজ্জামান মোর্তুজা, এড. এস এম শফিকুল আলম মনা, মনিরুল হাসান বাপ্পী, শেখ আবু হোসেন বাবু, শেখ আব্দুর রশিদ, মনিরুজ্জামান মন্টু, অধ্যক্ষ মো. তারিকুল ইসলাম, সেকেন্দার জাফরউল্লাহ খান সাচ্চু, শেখ মুশার্রফ হোসেন, মীর কায়সেদ আলী, ডা. গাজী আব্দুল হক, খায়রুল ইসলাম খান জনি, এস এম আসাদুজ্জামান মুরাদ, মোল্লা মোশারফ হোসেন মফিজ, সিরাজুল হক নান্নু, অধ্যাপক আরিফুজ্জামান অপু, এড. ফজলে হালিম লিটন। পবিত্র কোরআন তেলওয়াত করেন খুলনা মহানগর ওলামা দল সদস্য মাওলানা আব্দুল মান্নান।
মহাসমাবেশের পথে নেতাকর্মীদের বাঁধার অভিযোগ বিএনপির: নেতাকর্মীদের মহাসমাবেশ স্থলে পৌঁছাতে পথে পথে বাঁধা দেবার অভিযোগ করেছে বিএনপি। পার্শ্ববর্তী জেলা থেকেও নেতাকর্মী-সমর্থকরা অংশ নিতে পারেনি তাদের মহাসমাবেশে। সমাবেশে বক্তৃতায় সব বক্তায় এ অভিযোগ করেন। সমাবেশ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরুর পূর্বে জেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট শফিকুল আলম মনা গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, ভয়-ভীতি দেখানো হচ্ছে-যাতে সমাবেশে অংশগ্রহণ না করে। রূপসা, দিঘলিয়া, তেরখাদা, ডুমুরিয়া, ফুলতলা, বটিয়াঘাটা, কয়রা ও দাকোপ উপজেলার বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী সমাবেশে রওনা দিয়েও ফিরে যেতে বাধ্য করা হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে বিএনপি নেতাকর্মীরা লাঞ্ছিত হয়েছেন বলে অভিযোগ করেন বিএনপি নেতা মনা।
সমাবেশস্থলে পুলিশ ছিল বেশি: সমাবেশের অনুমতি না মেলায় দলের কেডি ঘোষ রোডের দলীয় কার্যালয়ের সামনের সড়কে সমাবেশ করে বিএনপি। সমাবেশে প্রবেশের দুদিকেই ছিল বিপুলসংখ্যক পুলিশের বেষ্টনী। পুলিশের কড়া এই বেষ্টনী ভেদ করে কেউ ভেতরে প্রবেশ করতে পারেনি। এমনকি সাংবাদিকদের ঢুকতেও বাঁধা দেয়া হয়। সমাবেশ চলাকালে পুলিশ জোরে জোরে হুইসেল বাজিয়ে সমাবেশে আসা উৎসুক মানুষদের চলে যেতে বাধ্য করে।
বাস, ট্রলার চলাচল ছিল বন্ধ: গতকাল শনিবার বিএনপির সমাবেশের কারণে খুলনায় বাস ও ট্রলার চলাচল করেনি। এমনি শহরের অভ্যন্তরে চলাচলকারী ইজিবাইমক, মাহিন্দ্র, রিকশা চলাচল করে খুবই কম। এতে সাধারণ মানুষ পড়ে চরম বিপাকে। আকবার আলী নামে একজন ট্রলার চালক অভিযোগ করেন ভোর সাড়ে ৫টার দিকে ট্রলারে করে কয়েকজন যাত্রী নিয়ে জেলখানা ঘাটে ভিড়লে পুলিশ তাকে মারপিট করে। এমনকি পুলিশ তার ট্রলারের হ্যান্ডেলটিও কেড়ে নেয়।-খবর বিজ্ঞপ্তি