বিতর্কিতদের বাদ দেওয়ার পর দীর্ঘ এক বছর পর ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির যে ৬৮ শূন্য পদে নতুন নেতা মনোনীত করা হয়েছে, তাদের মধ্যেও বিতর্কিতরা রয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য গত ৩১ জানুয়ারি এক ঘোষণায় শূন্যপদ পূরণ করে ৬৮ জনের নাম ঘোষণা করেন। তবে বিতর্কিতদের বাদ দিয়ে যেসব পদ শূন্য করা হয়েছিল, সেসব পদে ফের স্থান পেয়েছেন বিতর্কিতরা।
কেন্দ্রীয় কমিটিতে পদ পাওয়া ৬৮ জনের অনেকের বিরুদ্ধে বয়স উত্তীর্ণ হওয়া, ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কৃত, চাঁদাবাজি, মাদক সেবন, বিবাহিত, নিজ সংগঠনের নেত্রীকে মারধর ও ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। কমিটিতে বিতর্কিতদের স্থান দেওয়ায় সংবাদ সম্মেলন করেছেন ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে অব্যাহতি পাওয়া ২১ নেতা।
ছাত্রলীগের ২৯তম জাতীয় সম্মেলনের পর ২০১৮ সালের ৩১ জুলাই সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও গোলাম রাব্বানীকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, স্বজনপ্রীতিসহ নানা অভিযোগে পূর্ণাঙ্গ মেয়াদে দায়িত্ব পালনের আগেই ২০১৯ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর তারা পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। তাদের অব্যাহতির পর সংগঠনটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান যথাক্রমে আল নাহিয়ান জয় ও লেখক ভট্টাচার্য। তিন মাস ভারপ্রাপ্ত থাকার পর ছাত্রলীগের ৭২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে তাদের ভারমুক্ত করে পূর্ণাঙ্গ দায়িত্ব দেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শোভন ও রাব্বানী দায়িত্ব পাওয়ার এক বছর পর ২০১৯ সালের ১৩ মে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের ৩০১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়। আর কমিটি ঘোষণার পরই পদ পাওয়া নেতাদের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। অভিযোগ ওঠে কমিটিতে হত্যাচেষ্টা মামলার আসামি, মাদকসেবী, বিএনপি-জামায়াত ও রাজাকার পরিবারের সন্তান, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কৃত, সন্ত্রাস-চাঁদাবাজ, বিবাহিত, নিষ্ক্রিয় এবং অছাত্রদের রাখা হয়েছে।
এছাড়া সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে স্বজনপ্রীতির অভিযোগ তুলে আন্দোলনে নামেন ছাত্রলীগের বঞ্চিত ও পদ না পাওয়া নেতাকর্মীরা। পরে দায়িত্ব গ্রহণের পর ২০১৯ সালের ১৭ ডিসেম্বর জয়-লেখক কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে বিতর্কিত ২১ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাদের পদ শূন্য ঘোষণা করেন। পাশাপাশি আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আরও ১১ জনের পদ শূন্য ঘোষণা করা হয়। এর বাইরে বিভিন্ন সময় আরও ১৫ জনকে অব্যাহতি দেওয়ায় কেন্দ্রীয় কমিটির ৪৭টি পদ শূন্য হয়ে পড়ে। আর বর্তমান সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক দফায় দফায় আশ্বাস দেওয়ার পর অবশেষে গত ৩১ জানুয়ারি এই শূন্য পদ পূরণ ও অনেকের পদোন্নতি দিয়ে ৬৮ জনের নাম ঘোষণা করেন।
এনিয়ে বুধবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতিতে ‘বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে বিতর্কমুক্ত ও শুদ্ধিকরণের নামে চলমান অপরাজনীতি ও অপসংস্কৃতির প্রতিবাদ’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এতে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান সাবেক উপদপ্তর সম্পাদক মাহমুদ আব্দুল্লাহ বিন মুন্সি।
এ সময় ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটিতে থাকা বিতর্কিতদের নাম প্রকাশ করা হয়। তারা হলেন- সহসভাপতি সাগর হোসেন সোহাগ, রানা হামিদ, আনন্দ সাহা পার্থ, শুভ্রদেব হালদার, জিয়াসমিন শান্তা, শাহরিয়ার সিদ্দিকী শিশিম, মিজানুর রহমান পিকুল, রাকিবুল হাসান নোবেল, মো. মহিন উদ্দিন।
দপ্তর সম্পাদক ইন্দ্রনীল দেব শর্মা রনি, উপ-আইনবিষয়ক সম্পাদক শাহেদ খান, উপ-গণশিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক ওয়াহিদ খান রাজ, উপস্বাস্থ্য ও চিকিৎসাবিষয়ক সম্পাদক রাজেশ বৈশ্য, সহসম্পাদক মীর সাব্বির, উপগ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক আমানুল্লাহ আমান, সদস্যপদে সাজিদ আহমেদ দীপ্ত, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়বিষয়ক সম্পাদক পদে আল-আমিন রহমান, উপতথ্য ও গবেষণা সম্পাদক মো. আবদুর রশিদ (রাফি)। এদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, মাদকাসক্ত, বিবাহিত, চাকরিজীবী, মামলার আসামি, বয়স উত্তীর্ণ, জাসদের পদধারী, ছাত্রদল করার অভিযোগসহ বেশকিছু অভিযোগ আনা হয়েছে।