রাজধানীসহ তিন জেলায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিক্ষোভ কর্মসূচি চলাকালে গুলি ও হামলার পৃথক ঘটনায় করা মামলায় আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের ১৫ নেতা-কর্মীসহ ১৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আজ বুধবার ও গতকাল মঙ্গলবার ঢাকা, রংপুর ও কিশোরগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে পুলিশ ও র্যাব তাঁদের গ্রেপ্তার করে।
ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) ও র্যাবের পৃথক বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়। গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আনোয়ারুল ইসলাম, জাতীয় শ্রমিক লীগ ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি আল মামুন মিয়া, পল্লবী থানার বাউনিয়া এ ব্লকের যুবলীগের সভাপতি আবদুর রহমান ওরফে সুজন, সি ব্লকের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. শাহীন খান, যুবলীগের সদস্য সোহেল, খিলগাঁও থানার ২ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সহসভাপতি রানা ওরফে পিস্তল রানা ও ১ নং ওয়ার্ডের সাবেক শ্রমিক লীগ সভাপতি তাজুল ইসলাম। ঢাকা মহানগর উত্তরের ৫৪ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মো. আবদুল মোতালিব, আওয়ামী লীগ কর্মী সাব্বির, মারুফ ও ইব্রাহীম। গ্রেপ্তার আরেক ব্যক্তি সারোয়ার খালিদের রাজনৈতিক পরিচয় জানা যায়নি।
ডিএমপি সূত্র জানায়, গত ৪ আগস্ট পল্লবীর পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সামনের সড়কে ছাত্র-জনতার সঙ্গে আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন মো. ইমরান হোসেন। এ সময় আন্দোলনরত ছাত্র-জনতার ওপর এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণ করেন আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের নেতা–কর্মীরা। এতে তিনি গুরুতর আহত হন। উপস্থিত লোকজন তাঁকে প্রথমে একটি ক্লিনিকে নিয়ে গেলে ভয়ে সেখানে চিকিৎসা দেওয়া হয়নি। খবর পেয়ে ইমরানের মা ঘটনাস্থলে ছুটে যান। পরে তাঁকে মিরপুর ১০ নম্বর–সংলগ্ন ডা. আজমল হাসপাতাল লিমিটেডে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় ইমরানের মা বাদী হয়ে ২৭ আগস্ট পল্লবী থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। মামলাটি তদন্তকালে ঘটনাস্থলের আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে গুলি করা যুবলীগের নেতাসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
ডিএমপি জানিয়েছে, গত ৪ আগস্ট খিলগাঁওয়ের মালিবাগ কমিউনিটি সেন্টারের কাছে আন্দোলনরত ছাত্র-জনতার ওপর এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণ করেন আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীরা। এ সময় সাব্বির হোসেন নামের এক ব্যক্তি গুলিবিদ্ধ হন। লোকজন তাঁকে মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। পরে চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে বাসায় ফেরেন তিনি। ওই ঘটনায় গত ১০ সেপ্টেম্বর সাব্বির হোসেন বাদী হয়ে খিলগাঁও থানায় একটি মামলা করেন। ঘটনাস্থলের আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে সাব্বিরের ওপর আক্রমণের সঙ্গে জড়িত আওয়ামী লীগের নেতা রানা ওরফে পিস্তল রানা ও শ্রমিক লীগের নেতা তাজুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বিকেলে উত্তরা পশ্চিম থানার জসিমউদ্দিন রোডের আরকে টাওয়ারের সামনে ছাত্র-জনতার বিজয় উল্লাস চলছিল। এ সময় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা–কর্মীরা তাঁদের ওপর এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণ করেন। এতে শিক্ষার্থী ওমর নুরুল আবছার গুরুতর আহত হন। পরে স্থানীয় একটি হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। ওই ঘটনায় গত ৩১ আগস্ট ওই শিক্ষার্থীর মা উত্তরা পশ্চিম থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। মামলাটি তদন্তকালে ঘটনাস্থলের আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে ওই ঘটনায় জড়িত আওয়ামী লীগের দুই নেতা আল মামুন মিয়া ও মো. আবদুল মোতালিবকে শনাক্ত করার পর গ্রেপ্তার করা হয়।
৫ আগস্ট বিকেলে উত্তরার ৩ নম্বর সেক্টরের রবীন্দ্রসরণিতে ছাত্র-জনতার ওপর আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীদের ছোড়া গুলিতে সানজিদ হোসেন মৃধা নামের এক ব্যক্তি গুরুতর আহত হন বলে ডিএমপি জানিয়েছে। পরে তাঁকে উত্তরার ক্রিসেন্ট হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। ওই ঘটনায় গত ১৯ সেপ্টেম্বর তাঁর বাবা ঢাকার সিএমএম কোর্টে মামলা করেন। ওই মামলায় আওয়ামী লীগের তিন কর্মী সাব্বির, মারুফ ও ইব্রাহীমকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এদিকে আন্দোলন কর্মসূচিতে হামলার ঘটনায় যুবলীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও প্রেসিডিয়াম সদস্য আনোয়ারুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর কলাবাগান এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁর বিরুদ্ধে ৬ সেপ্টেম্বর কলাবাগান থানায় মামলা করা হয়।
ছাত্র–জনতার আন্দোলন চলাকালে রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকায় মো. সুজন নামের এক যুবককে গুলি করে হত্যা মামলার অন্যতম আসামি সারোয়ার খালিদকে (৫৪) গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। আজ বুধবার বিকেলে নগরের মোহাম্মদপুর এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এদিকে রংপুরে ছাত্র–জনতার আন্দোলনে নিহত ফল বিক্রেতা মেরাজুল ইসলাম হত্যা মামলায় মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি নবী উল্লাহকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আজ বুধবার ভোরে নগরের কলেজ রোড খামারপাড়া এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। গত ১৯ জুলাই রংপুর সিটি বাজার এলাকায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মেরাজুল ইসলাম নিহত হন। এ ঘটনায় নিহত মেরাজুলের মা আম্বিয়া খাতুন বাদী হয়ে মামলা করেন।
আর কিশোরগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম এ আফজলসহ দলের তিন নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আজ ভোর ও সকালে তাঁদের গ্রেপ্তার করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। গ্রেপ্তার অন্য দুজন হলেন তাড়াইল উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আজিজুল হক ও সাধারণ সম্পাদক গিয়াস উদ্দিন (লাকি)।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বুধবার সকাল ৯টার দিকে জেলা শহরের বাসা থেকে এম এ আফজলকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। তাঁর নামে কিশোরগঞ্জ সদর মডেল থানায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচিতে হামলার অভিযোগে মামলা রয়েছে।