খুলনা মহানগর বিএনপির আহবায়ক এড. শফিকুল আলম মনা বলেছেন, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যূত্থানের স্বৈরাচার হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেলেও তার দোসররা বাংলাদেশে রয়েছে। যারা ১৭ বছর লুটপাট করেছে, অত্যাচার করেছে, মানুষ গুম-খুন করেছে তারা এখনো দেশ ছেড়ে যায়নি। আমাদের যে সংগ্রাম ছিলো ফ্যাসিবাদ মুক্ত বাংলাদেশ সে সংগ্রাম এখনো শেষ হয়নি। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন আমাদের আরো পথ পাড়ি দিতে হবে, আরো লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। ইলিয়াছ আলী- চৌধুরী আলমসহ ৫’শ এর বেশি বিএনপি নেতাকর্মীকে গুম করা হয়েছে। অনেক শিশু জানে না তার পিতা বেচে আছে না মরে গেছে। মা জানেন না তার সন্তান বেচে আছে না মরে গেছে। স্ত্রী জানেন না- তার স্বামী বেচে আছে নাকি মরে গেছে। বাংলাদেশে প্রকাশ্যে দিবালোকে বিশ্বজিৎকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। যারা হত্যা করেছে তাদেরকে আদালত থেকে খালাস দেয়া হয়েছে।
শুক্রবার (২৭ সেপ্টেম্বর) বিকাল ৫টায় নগরীর কয়লাঘাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ২৯নং ওয়ার্ড বিএনপির উদ্যোগে রক্তস্নাত দীর্ঘ সংগ্রাম ও ছাত্র জনতার গণ অভ্যূত্থানের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীনতা নস্যাৎ করার সকল অপচেষ্টা রুখতে এবং সাম্য ও নতুন বাংলাদেশ বির্নিমানের লক্ষ্যে সুধী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি আরো বলেন, সাবেক সেনা প্রধান আজিজের খুনি ভাইদের ফাঁসির আদেশ হয়েছিলো কিন্তু তৎকালিন রাষ্ট্রপতি তাদের ক্ষমা করে জেলখানা থেকে বের করে দিয়েছিলো। বাংলাদেশে এমন কোন প্রতিষ্ঠান নেই যা আওয়ামী লীগ ধ্বংস করে নাই। প্রশাসনকে ধ্বংস করেছে, পুলিশ বাহিনীকে ধ্বংস করেছে, আদালতকে ধ্বংস করেছে। আমাদের নামে অসংখ্য মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করেছে। আদালতে জামিন নিতে গিয়ে আমাদের অপেক্ষা করতে হয়েছে শেখ বাড়ি থেকে কোন ওহি আসে। বিচারক জামিন দিবেন কি দিবেন না সে নির্দেশ শেখ বাড়ি থেকে আসতো। দেশে গনতন্ত্র ছিলো না, ভোটাধিকার ছিলো না। দেশ মেরামতে জন্য তারেক রহমান ৩১ দফা দিয়েছেন। তিনি কখনোই ক্ষমতায় যেতে চাননি। তিনি জনগণের ভোটাধিকার জনগণের হাতে ফেরত দেয়ার আহবান জানিয়েছেন। ১৯৭৫ সালে শেখ মুজিব আইন সংশোধন করে একদলীয় শাসন কায়েম করেছিলেন। সেই একদলীয় শাসন ব্যবস্থায় তিনি বলেছিলেন শেখ মুজিব আজীবন রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকবেন। শেখ হাসিনাও বাবার পথে হাটতে যেয়ে ৪১ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকতে চেয়ে ছিলেন। কিন্তু তার সে স্বপ্ন পুরণ হয়নি। ছাত্র জনতার তীব্র আন্দোলনের মুখে স্বৈরাচার হাসিনা পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছেন। বিএনপি বিশ্বাস করে এদেশে গনতন্ত্র ফিরে আসবে। বিএনপির জনগণের ভোটাধিকারে বিশ্বাস করেন। বিএনপির নাম ব্যবহার করে কেউ কোন ধরনের অপকর্ম করলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। ইতিমধ্যে ৩৯জন নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে। জাতীয়তাবাদী দল প্রতিশোধের রাজনীতিতে বিশ্বাস করে না। কোন কোন রাজনৈতিক দল হাসিনাকে ক্ষমা করে দেয়ার করা বলেছেন। খুনি হাসিনাকে ক্ষমা করার কোন সুযোগ নেই-বাংলার মাটিতে তার ফাঁসি কার্যকর করা হবে।
বিশেষ বক্তার বক্তব্যে মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব শফিকুল আলম তুহিন বলেছেন, ছাত্র জনতার অর্জনকে নস্যাৎ করতে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। মাফিয়া নেত্রী শেখ হাসিনার কথোপকথোন প্রকাশ হয়েছে তাতে উনি বলেছেন চট করে বাংলাদেশে ঢুকে পড়বেন। বাংলার মানুষকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। মাফিয়া নেত্রী শেখ হাসিনাকে ভারত থেকে ধরে এনে তার তৈরী করা আয়না ঘরে চট করে ঢুকিয়ে রাখতে হবে। হাসিনাদের জন্য বাংলায় কোন জয়গা হবে না। গত সাড়ে ১৫ বছরে হাসিনা সরকার ১৩ লক্ষ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে। ১লক্ষ ২০ হাজার মামলা দিয়ে ১ কোটি ৬০ লক্ষ নেতাকর্মীকে আসামী করা হয়েছে। হাজার হাজার নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়ে। সমুদ্রের সকল পানি যদি কালি হয়, সে কালি দিয়ে যদি হাসিনা সরকারের দুঃশাসনের কথা লেখা হয় সে কালি ফুরিয়ে যাবে কিন্তু হাসিনার অপশাসনের কথা লেখা শেষ হবে না।
২৯ নং ওয়ার্ড বিএনপির আহবায়ক শফিকুল ইসলাম জোয়াদ্দারের সভাপতিত্বে সমাবেশে বিশেষ অতিথি ছিলেন মহানগর বিএনপি’র যুগ্ম আহবায়ক চৌধুরী শফিকুল ইসলাম হোসেন, খুলনা সদর থানার আহ্বায়ক কে এম হুমায়ুন কবীর (ভিপি হুমায়ুন), খুলনা সদর থানার সদস্য সচিব মোল্লা ফরিদ আহমেদ। বক্তব্য রাখেন ও উপস্থিত ছিলেন অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা মাসুদ পারভেজ, এডভোকেট শহীদুল আলম, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী শহিদুর রহমান, যুগ্ম আহ্বায়ক বদরুল আলম খান, চৌধুরী হাসানুর রশিদ মিরাজ, মিজানুর রহমান মিলটন, তরিকুল ইসলাম সোহান, আজাদ হোসেন, মাহবুবুর রহমান লিটু, বেলাল হোসেন, হেলাল হোসেন, ব্যবসায়ী শরিফুল ইসলাম, কবির, হাসান হাওলাদার রাজিব, সোহাগ, শিখা জামিলা, জেসমিন প্রমূখ। সমাবেশের শুরুতে স্কীনে দেশনায়ক তারেক রহমান প্রদত্ত রাষ্ট্রমেরামতের ৩১দফা জনগনের মাঝে তুলে ধরা হয় এবং বিএনপি নেতৃবৃন্দ মঞ্চ ছেড়ে গ্যালারিতে বসেন।