চট্টগ্রামের শীর্ষ সন্ত্রাসী সাজ্জাদ হোসেনের ওরফে ছোট সাজ্জাদের স্ত্রী শারমীন আক্তার তামান্নাকে একটি হত্যা মামলায় চার সপ্তাহের মধ্যে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
বুধবার (৯ এপ্রিল) বিচারপতি মো. মাহবুব উল আলম এবং বিচারপতি মো. হামিদুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চে আগাম জামিন চেয়ে আবেদন করলে আদালত এই আদেশ দেন। বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আদালতের সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা।
এই মামলায় তামান্নার জামিন আবেদনের পক্ষে আইনজীবী ছিলেন তাসনিয়া প্রধান।
সম্প্রতি সাজ্জাদ হোসেন গ্রেপ্তারের পরে তার স্ত্রী শারমীন আক্তার তামান্না আদালত ও প্রশাসন সম্পর্কে বিতর্কিত মন্তব্য করে দেশের আইন ও নিরাপত্তা সংস্থাকে অপমান করেন। তার এমন ভিডিও মুহূর্তেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়।
ভিডিওতে তামান্নাকে বলতে শোনা যায়, ‘আমরা কাঁড়ি কাঁড়ি, বান্ডিল বান্ডিল টাকা ছেড়ে আমার জামাইকে নিয়ে আসব। যারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে, তাদের ছাড় দেওয়া হবে না।’
সাজ্জাদ হোসেন গ্রেপ্তারের পর চট্টগ্রামে একটি জোড়া খুনের ঘটনা ঘটে। ২৯ মার্চ দিবাগত সোয়া ২টার দিকে এক্সেস রোড এলাকায় একটি প্রাইভেটকারকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়ে দুর্বৃত্তরা। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে মোহাম্মদ মানিক ও আবদুল্লাহ নামে দুজন নিহত হন। একই ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়েছেন আরও দুজন। তারা চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
চট্টগ্রামের দুই সন্ত্রাসী ছোট সাজ্জাদ ও সারোয়ার হোসেন বাবলার বিরোধের জের ধরে আলোচিত জোড়া খুনের ঘটনা ঘটেছে বলে মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে।
এ ঘটনায় গত ১ এপ্রিল চট্টগ্রামের বাকলিয়া থানায় নিহত বখতিয়ার হোসেন মানিকের মা ফিরোজা বেগম একটি মামলা দায়ের করেন।
এতে উল্লেখ করা হয়, সারোয়ার হোসেন বাবলার গাড়ির চালক হিসেবে কর্মরত ছিলেন নিহত মানিক। আর সারোয়ারের ব্যক্তিগত কাজকর্ম করতেন নিহত আবদুল্লাহ। গত ২৯ মার্চ দিবাগত রাতে প্রাইভেটকারে করে নতুন ব্রিজ এলাকায় আড্ডা দিচ্ছিলেন মানিক, সারোয়ার, আবদুল্লাহ, রবিন, হৃদয় ও ইমন। নতুন ব্রিজ থেকে বাড়ি ফেরার জন্য বহদ্দারহাটের দিকে রওয়ানা হলে রাত ২টার দিকে রাজাখালী ব্রিজের ওপর পৌঁছামাত্র ৬-৭টি মোটরসাইকেল থেকে প্রাইভেটকার লক্ষ্য করে গুলি চালাতে থাকে দুর্বৃত্তরা। গুলিতে গাড়ির পেছনের গ্লাস ছিদ্র হয়ে যায়। তখন মানিক বহদ্দারহাটের দিকে না গিয়ে বাকলিয়া এক্সেস রোড দিয়ে চকবাজারের দিকে যায়।
সোয়া ২টার দিকে চকবাজার থানার নবাব সিরাজউদ্দৌলা সড়কে মানিক গুলিবিদ্ধ অবস্থায় গাড়ি থামায়। গাড়ির পেছনে থাকা হাছান, ইমন, বোরহান, খোরশেদ ও রায়হানসহ অজ্ঞাতনামা ৬-৭ জন তাদের হাতে থাকা অস্ত্র দিয়ে এলোপাথাড়ি গুলি করে। গুলিতে মানিক ও আবদুল্লাহ জখম হয়। গাড়িতে থাকা সারোয়ার এবং ইমন কৌশলে নেমে যায়। এরপর গুলি ছুঁড়তে থাকা আসামিরা ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। মানিক ও আবদুল্লাহকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন।
এজাহারে আরও উল্লেখ করা হয়, আসামি সাজ্জাদ এবং তার স্ত্রী তামান্নার পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী আসামিরা সারোয়ার হোসেন বাবলা ও তার ছেলেসহ অন্যদের হত্যা করার জন্য নতুন ব্রিজ এলাকা থেকে প্রাইভেটকারটির পিছু নেন।
এছাড়া সাজ্জাদ বর্তমানে চান্দগাঁও থানার ইট, বালু ব্যবসায়ী আফতাব উদ্দিন খুনের মামলায় রিমান্ডে পুলিশি হেফাজতে রয়েছেন। গত ১৫ মার্চ ঢাকার একটি শপিং মল থেকে সাজ্জাদকে ধরিয়ে দেন লোকজন। এর আগে গত ২৯ জানুয়ারি তাকে ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করেন নগর পুলিশ কমিশনার। তার আগের দিন সাজ্জাদ বায়েজিদ বোস্তামী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) ফেসবুক লাইভে এসে পেটানোর হুমকি দেন। সাজ্জাদের বিরুদ্ধে হত্যা, অস্ত্রসহ ১৫টি মামলা রয়েছে।