সব কিছু
facebook channelkhulna.tv
খুলনা বৃহস্পতিবার , ১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
ছোট হচ্ছে মেহেন্দিগঞ্জের মানচিত্র | চ্যানেল খুলনা

ছোট হচ্ছে মেহেন্দিগঞ্জের মানচিত্র

বরিশাল জেলার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যরে এক অপরূপ লীলাভূমি মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলা। এ উপজেলা ১টি পৌরসভা ও ১৫ ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। এর উত্তরে মেঘনা নদীর ওপারে লক্ষ্মীপুর জেলার রায়পুর উপজেলা, দক্ষিণে বরিশাল জেলার সদর উপজেলা, পূর্বে ভোলা জেলার সদর উপজেলা ও পশ্চিমে হিজলা ও মুলাদী উপজেলা। মেহেন্দিগঞ্জ বাংলাদেশের একটি অন্যতম প্রাচীন জনপদ। বরিশাল বিভাগের অন্যতম বাণিজ্যকেন্দ্র ও জনপদটি এক সময় ঘাট পাতারহাট নামে ব্যাপক পরিচিত ছিল। এই উপজেলায় আছে জমিদার বাড়ি, তাজমহল সজ্জিতসহ অনেক ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা। ইলিশা নদীর অব্যাহত ভাঙনে ক্রমেই ছোট হচ্ছে মেহেন্দীগঞ্জের মানচিত্র। আর ভাঙনে সর্বস্ব হারিয়ে আহাজারী করছে ইলিশা পড়ের মানুষ। ভাঙ্গন রোধে এই এলাকার মানুষ দফায় দফায় সংশ্লিষ্টদের নজরে বিষয়টি দিলেও কারো যেন এ বিষয়ে কার্যকর কিছুই করার নেই।

মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহযোদ্ধা মরহুম মহিউদ্দিন আহাম্মেদ, ২১-এর গানের রচয়িতা আব্দুল গাফ্ফার চৌধুরী, কবি আসাদ চৌধুরী, বিচারপতি আব্দুর রহমান চৌধুরীর মত জননন্দিত ও খ্যাতিমান বরেণ্য ব্যক্তিদের জন্ম এই মেহেন্দিগঞ্জে। প্রতি বছরই এই উপজেলার প্রায় সবগুলো ইউনিয়ন নদী ভাঙ্গনের শিকার হচ্ছে। এই অব্যাহত নদী ভাঙ্গনের ফলে ক্রমেই ছোট হয়ে আসছে উপজেলার মানচিত্র।

মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলার চানপুর ইউনিয়নের শুকনাকাঠী গ্রামের মো. মাহেব বলেন, ‘নদী যে এভাবে এত দ্রুত এলাকার মানুষকে সর্বস্বহারা করবে তা কারও কল্পনায়ও ছিল না। এখনো গ্রামের কিছু কিছু বাড়ি ও প্রতিষ্ঠান ভাঙনের শিকার হয়নি। তাই এলাকাবাসি প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ভয়ে থাকে, নদী পাড়ে এসে বসে থাকে। কারণ কখন কোনদিকে নদী যাবে, তা বোঝা যায়না।’ এলাকাবাসীর দাবি, তাদের জন্য সরকারি কোন রিলিফের দরকার নেই, বরং কর্তৃপক্ষ নদী ভাঙ্গন ঠেকানোর ব্যবস্থা গ্রহণ করুক। বলছিলেন স্থানীয় বাসিন্দা মো. মাহেব।

তিনি বলছেন, ‘আমরা সরকারের কাছে চাল ডালের মতো কোন সাহায্য চাই না। সরকারের কাছে আমাদের একটাই দাবি, নদী ভাঙন বন্ধে ব্যবস্থা নেয়া হোক। বিশেষ করে, নদীর ওই কোনাটা কেটে দেয়া হোক। তাহলেই আমাদের হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি বেঁচে যাবে। তাহলেই আমরাও বেঁচে যাবো।’

জানা গেছে, মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলার উলানিয়া ইউনিয়নের সুলতানী মিরাবাজার হতে ঐতিহ্যবাহী চানপুর ইউনিয়নের শুকনাকাঠী, যাদুয়া, দেশখাককাটা ও চানপুর সহ অনেক গ্রামেই এখান বিলীনের পথে। কর্তৃপক্ষ দীর্ঘদিনেও কোনো উদ্যোগ না নেওয়ায় ইলিশা নদীর স্রোত কয়েক বছর ধরেই শুকনাকাঠি গ্রামসহ আশেপাশের কয়েকটি গ্রাম অব্যহত ভাঙ্গনের করাল গ্রাসে এখন বিলিনের পথে। প্রতিবছর গ্রামের অনেক জমি ও ঘরবাড়ি নদীর গর্ভে চলে যাচ্ছে। তাই গ্রামের মানুষ সাধ্যমতো তাদের বাড়িঘর অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন। কিন্তু গ্রামের অধিকাংশ লোকই গরিব (দিন আনে দিন খায়) হওয়ায় তাদের বিকল্প জমি ও আর্থিক ব্যবস্থা নেই। তাই তারা ঘরবাড়ি ভাঙার ভয় নিয়ে আকড়ে পড়ে রয়েছেন। এসব গ্রামের ৮০ ভাগ সাধারণ মানুষই কৃষি কাজে’র সাথে জড়িত। কৃষি জমি নদীতে বিলিন হওয়ায় কৃষকরা খুবই কষ্টে জীবনযাপন করছে। নদী ভাঙন কবলিত এলাকার অনেকে এরই মধ্যে বসত বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিতে শুরু করেছে। কেহ কেহ আবার সড়কের পাশেই খড়কুটো দিয়ে ছাপড়া ঘর বানিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। গ্রামগুলোতে শত বছরের পুরানো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (শুকনাকাঠি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়), শত বছরের পুরানো একটা মসজিদ (শুকনাকাঠি জামে মসজিদ) ও ঐতিহ্যবাহী বাজার (ফজরগঞ্জ নতুন বাজার) রয়েছে। ইতোমধ্যে এই বাজারটিরও অর্ধেক নদীর গর্ভে বিলিন হয়ে গেছে।

উল্লেখ্য, ইতিপূর্বে উলানিয়া মেঘনা নদীর তীর রক্ষা প্রকল্পের মাধ্যমে বাঁধ নির্মানের ফলে ঐতিহ্যবাহী জমিদার বাড়ি, উলানিয়া বাজার, উলানিয়া করনেশন মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়সহ ভাঙন কোলে থাকা কয়েকটি গ্রাম রক্ষা পেয়েছে। সূত্র মতে, শুকনাকাঠি জামে মসজিদটি গত বছর প্রায় ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে আধুনিকীকরণ করা হয়েছে। তাছাড়া স্কুলটিতেও গতবছর সরকারীভাবে নতুন একটা দ্বিতল ভবন স্থাপন করা হয়েছে। এসবই এখন প্রবল ভাঙ্গনের সম্মুক্ষে। গ্রামের বেশিরভাগ রাস্তা নদীর পাড় ঘেষে হওয়ায় এখন সেগুলো ভেঙ্গে যাচ্ছে, যার ফলে এলাকার মানুষের চলাচলে অনুপযোগী হয়ে পড়ছে।
মেহেন্দিগঞ্জের উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. নূর নবী বলেন, ‘মেহেন্দিগঞ্জের বেশিরভাগ এলাকায় ভাঙনের মুখে। যেহেতু এটি পানি উন্নয়ন বোর্ডের দায়িত্ব। শিগগিরই এ ব্যাপারে বরিশাল জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে অবহিত করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

স্থানীয়রা বলছেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড এর গাফিলতি আছে যেমন ঠিক স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদেরও গাফিলতি আছে। সকল সমস্যা মওকুফ করে শুকনাকাঠি গ্রাম সহ মেহেন্দিগঞ্জ এর নানা এলাকার সাধারন মানুষ নদী ভাঙ্গন থেকে রক্ষা পাবে এবং সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তর তাদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করবে এটুকুই কামনা করছেন স্থানীয়রা। এ বিষয়ে আরো জানতে চাইলে চানপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. বাহাউদ্দীন ঢালী বলেন, ‘এই বিষয়টি সম্পূর্ণ সংসদ সদস্য পঙ্কজ দেবনাথ এর আওতায়। তার মাধ্যমে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী, সচিবসহ উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাগণ, মেহেন্দিগঞ্জ এর ঝুঁকিপূর্ণ নদী ভাঙন কবলিত এলাকাসহ এসব ভাঙ্গন কবলিত গ্রাম পরিদর্শন করেন। এ নিয়ে নানান ধরনের মিটিং হয় এবং এলাকাবাসী সহ ইউনিয়ন পরিষদ যথাসম্ভব চেষ্টা করেন তবুও কোন সুফল পাওয়া যায়নি।’

নদী ভাঙন নিয়ে কাজ করছে এমন সংস্থা সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্ট এন্ড জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সার্ভিসেস-এর এক জরিপে জানা যায়, ‘বাংলাদেশে সব মিলিয়ে প্রতিবছর প্রায় ছয় হাজার হেক্টর জমি নদীতে হারিয়ে যাচ্ছে। সত্তরের দশক থেকে স্যাটেলাইটের ইমেজ পরীক্ষা করে আমরা নদীগুলোর তখনকার অবস্থা আর এখনকার অবস্থা বিচার করে দেখতে পেয়েছি যে, গত চার দশকে বাংলাদেশের প্রধান তিনটি নদীতে দেড় লাখ হেক্টর জমি হারিয়ে গেছে। আর ফেরত পাওয়া গেছে প্রায় পঞ্চাশ হাজার হেক্টর জমি। সেই হিসাবে বাংলাদেশ নদীতে একলক্ষ হেক্টর জমি হারিয়েছে।’

সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্ট এন্ড জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সার্ভিসেস এর পরিচালক মমিনুল হক সরকার বলছেন, বাংলাদেশে অনেকগুলো নদীরেই ভাঙ্গন প্রবণতা থাকলেও, মূলত পদ্মা, মেঘনা, যমুনা নদীতেই সবচেয়ে বেশি ভাঙ্গনের ঘটনা ঘটে। গত চারদশকে এসব নদীতে বাংলাদেশের দেড় লাখ হেক্টরের বেশি জমি বিলীন হয়েছে।

সচেতন মহলের দাবি, নদী ভাঙন প্রতিরোধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এখনই কোন কার্যকরি ব্যবস্থা না নিলে হারিয়ে যেতে পারে মেহেন্দিগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী বিভিন্ন হাট-বাজার, মাধ্যমিক-প্রাথমিকবিদ্যালয়, মসজিদ, বসত বাড়ি, ফসিল জমি সহ গুরুত্বপূর্ন স্থাপনা। নদী ভাঙ্গন প্রতিরোধে অচিরেই একটি কার্যকরি পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য স্থানীয় সংসদ সদস্যসহ সরকারের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সু-দৃষ্টি কামনা করছেন এলাকাবাসী। ইলিশার ভাঙন প্রতিরোধে কোনো ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে কিনা জানতে বরিশাল-৪ আসনের সংসদ সদস্য পংকজ দেবনাথের সাথে তার মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তা সম্ভব হয়নি।

https://channelkhulna.tv/

সারাদেশ আরও সংবাদ

গণমাধ্যমে ভুলত্রুটি তুলে ধরলে রাজনীতিবিদরা সংশোধনের সুযোগ পাবে : মেয়র

‘দেশের মানুষের দারিদ্রের হার ১৮.৭০ শতাংশে নেমে এসেছে’

অষ্টম শ্রেণির ছাত্রীর বিয়ের আয়োজন, মায়ের কারাদণ্ড

যুবককে কুপিয়ে ইজিবাইক ছিনতাই, ৩৬ ঘণ্টা পর উদ্ধার

কুষ্টিয়ায় রেস্তোরাঁয় ঢুকে ৩ জনকে ছুরিকাঘাত

জার্মানি সফর নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলন শুক্রবার

চ্যানেল খুলনা মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন  
DMCA.com Protection Status
উপদেষ্টা সম্পাদক: এস এম নুর হাসান জনি
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: শেখ মশিউর রহমান
It’s An Sister Concern of Channel Khulna Media
© ২০১৮ - ২০২২ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত | চ্যানেল খুলনা.বাংলা, channelkhulna.com, channelkhulna.com.bd
যোগাযোগঃ কেডিএ এপ্রোচ রোড (টেক্সটাইল মিল মোড়), নিউ মার্কেট, খুলনা।
ঢাকা অফিসঃ ৬৬৪/এ, খিলগাও, ঢাকা-১২১৯।
ফোন- 09696-408030, 01704-408030, ই-মেইল: channelkhulnatv@gmail.com
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্তির জন্য আবেদিত।