মো. জাহিদুর রহমান সোহাগ: জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে খুলনার দাকোপে বিপুল নারী জনগোষ্ঠি দিন দিন পিছিয়ে পড়ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষতিগ্রস্থ এলাকার তালিকায় দেশের ১৯টি উপকূলীয় জেলার মধ্যে খুলনা ও বাগেরহাট জেলার কয়রা, পাইকগাছা, মোংলা, মোড়েলগঞ্জ, শরণখোলা ও দাকোপ উপজেলার নাম উল্লেখযোগ্য।
সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ৯৯২ বর্গ কিলোমিটার এ উপজেলার মোট জনসংখ্যা ১ লাখ ৫৮ হাজার ৩০৯ জন। এর মধ্যে পুরুষ-৭৯ হাজার ২৮৯ জন ও নারী ৭৯ হাজার ১৭ জন। দেখা যায় প্রায় অর্ধেক জনগোষ্ঠি নারী। এই অর্ধেক নারী জনগোষ্ঠি আজ জলবায়ু পরিবর্তনের বিভিন্ন প্রভাবের কারণে সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ।
নারীদের প্রবল ইচ্ছা শক্তি থাকা সত্তেও তারা সমাজ ও পরিবারের উন্নয়নে আশানুরুপ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হচ্ছেন না। উপকূলীয় এসব অঞ্চলের প্রায় ৭৩% মানুষই সুপেয় খাবার পানির চরম অভাবে ভুগছেন। পাশা পাশি এ উপজেলার নারীদেরও খাবার পানি সংগ্রহে দিনের একটি বড় সময় ব্যয় করতে হয়। এতে তাদের কর্ম ঘন্টা কমে আসছে। পাশা পাশি লবণাক্ততা বৃদ্ধি, উপকূলীয় ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছাস ও নদী ভাঙনের মত প্রাকৃতিক দূর্যোগে নারীরা বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন। এতে একদিকে যেমন নারীরা বা পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠি প্রাকৃতিক দূর্যোগে প্রথম ক্ষতিগ্রস্থ, অন্যদিকে তাদের খাপ খাইয়ে নেওয়ার জন্য সরকারি বেসরকারিভাবে সাহায্যেও অপ্রতুলতা তাদেরকে দিন দিন আরও পিছিয়ে দিচ্ছে। এমতাবস্থায় প্রায় অর্ধেক জনগোষ্ঠিকে পিছনে ফেলে রেখে এ এলাকার উন্নয়ন কতটুকু সম্ভব সেটা চিন্তার বিষয়ে।
নারীনেত্রী ও উপজেলা সিএসও নেটওয়ার্ক কমিটির সদস্য জয়নগর এলাকার রওশন আরা বেগম জানান, জলবায়ু পরিবর্তন থেকে পরিত্রাণের একটি মাত্র উপায় খাপ খাইয়ে নেওয়া। বিভিন্ন প্রকল্প বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য সিএনআরএসের ইভলভ্ধসঢ়; প্রকল্প। তারা প্রান্তিক মানুষদের সক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে স্থানীয় সরকারকে শক্তি শালী করার চেষ্টা করছে। সরকার যদি নারী শিশু ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠিদের উন্নয়নে ইউনিয়ন পরিষদে জেন্ডার বান্ধব ও জলবায়ু সংবেদনশীল কার্যক্রমে খাত ভিত্তিক বাজেট বিভাজন, বাজেট বৃদ্ধি ও বাস্তবায়নে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহন করে তাহলে উপরোক্ত সমস্যা অনেকাংশে সমাধান পাওয়া সম্ভব।
এ ছাড়া উপজেলার দাকোপ, পানখালী, তিলডাঙ্গা, বানিশান্তা, বাজুয়া ও কামারখোলা ইউনিয়ন পরিষদের ২০২৪-২৫ সালের গত ডিসেম্বর পর্যন্ত বাজেট বিশ্লেষণে দেখা যায় জেন্ডার বান্ধব ও জলবায়ু সংবেদন শীল বাজেট প্রস্তাব হয়েছে মোট বাজেটের শতকারা ১৮ শতাংশ। আর সেখানে অনুমোদন হয়েছে সেই ১৮ শতাংশ থেকে মাত্র ১১ শতাংশ এবং বাস্তবায়ন হয়েছে ওই ১১ শতাংশ থেকে মাত্র ৩২ ভাগ।
উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা সুরাইয়া সিদ্ধীকা বলেন, সরকারী ভাবে এ উপজেলায় ৩ হাজার ৪১১ জন নারীকে ভিডাবলুবি সেবা দেওয়া হচ্ছে। এবছরও আগামী ৬ এপ্রিল থেকে এ সেবার জন্য অনলাইনে আবেদন গ্রহন করা হবে। আবেদন হয়তো অনেক পড়বে কিন্তু উল্লেখিত সংখ্যাই আবার নিতে হবে। এ ছাড়া ২ হাজার ৬৭ জন নারীকে মাতৃত্ব কালীন ভাতা দেওয়া হয়। আর প্রতি বছর ২০০ জন নারীকে দক্ষতা উন্নয়ণ প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকি। ৫ বছরে মোট ১ হাজার জন নারীকে এ প্রশিক্ষণ দিয়েছি।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (টিএইচএ) ডাঃ সুদীপ বালা জানান, ধারণা করা হচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে নারীদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি বিশেষ করে সময়ের আগে গর্ভপাত হওয়া, গর্ভপাতের হার ও জরায়ু সমস্যা বেড়ে যাওয়া এবং শারিরিক কর্ম ক্ষমতা কমছে। তাই আমাদের জায়গা থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে এলাকার স্বাস্থ্য সেবার মান ঠিক রাখার চেষ্টা করছি। তবে সরকার বিবেচনা করে পদক্ষেপ নিলে এ সমস্যা সমাধান হবে বলে তিনি মনে করেন।
এবিষয়ে পানখালী ইউপি চেয়ারম্যান সাব্বির আহম্মেদ বলেন, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী প্রকল্পের অধীনে দেওয়া সহায়তাগুলো আমাদের এলাকার জন্য খুবই অপ্রতুল। যেহেতু অত্র এলাকা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের কারণে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন। খুলনায় এক অনুষ্ঠানে জেলা স্থানীয় সরকারের উপ-পরিচালক ইফসুফ আলী ইউনিয়ন পরিষদের বাজেট তৈরীর সময় ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ বরাদ্দ এই সম্পর্কিত বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন সামাজিক নিরাপত্তা খাতে রাখার জন্য নির্দেশনা দেন। কিন্তু তারপরও ভুক্তভোগি পিছিয়ে পড়া স্থানীয় জনগন ও নারীরা মনে করেন সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের নীতি নির্ধারণী পর্যায় থেকে এই বিষয়গুলো আমলে নিয়ে দ্রত স্থানীয় সরকারের বাজেটে নারীদের উন্নয়নে আলাদাভাবে এবং নির্দিষ্ট করে বিভিন্ন কর্মকান্ড গ্রহন করা উচিত। আর এতেই অত্র এলাকার পিছিয়ে পড়া নারী জনগোষ্ঠি জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলা করে স্থানীয় উন্নয়নে সক্রিয় ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে বলে তিনি মনে করেন।