সব কিছু
facebook channelkhulna.tv
খুলনা বুধবার , ৩১শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ১৬ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে হুমকিতে খুলনা অঞ্চলের কৃষি | চ্যানেল খুলনা

আমন রোপন সম্পন্ন না হওয়ায় ফলনের সুফল নিয়ে উদ্বিগ্ন কৃষকরা

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে হুমকিতে খুলনা অঞ্চলের কৃষি

সাদিক আল সরকার :: জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি হচ্ছে। লবণাক্ততা, খরা-জলাবদ্ধতায় খুলনা অঞ্চলের (খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা ও নড়াইল) কৃষিতে বিরূপ প্রভাব পড়ছে। ভাদ্র মাস প্রায় শেষ। কিন্তু জমিতে এখনও আমন রোপন সম্পন্ন করা সম্ভব হয়নি। ভারি বৃষ্টি ও বাঁধ ভেঙে আমন ক্ষেত ও বীজতলা নষ্ট হওয়ায় খুলনার চাষিরা দিশেহারা। এখন পর্যন্ত আমন রোপন সম্পন্ন না হওয়ায় প্রত্যাশিত ফলন নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন কৃষকরা।

এদিকে, সুন্দরবন উপকূলবর্তী উপজেলাসহ বাগেরহাট ও খুলনার অধিকাংশ খাল দিয়ে ঠিকমত পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা নেই। ইজারার শর্তভঙ্গ ও দূষণে ভরাট খাল দিয়ে পানি নিষ্কাশন বিঘ্নিত হচ্ছে। এছাড়া চিংড়ি চাষের জন্য খালে লবণপানি তোলায় পানি নিষ্কাশনের সময় উল্টে জমিতে লবণপানি ঢুকে পড়ে।

উপকূলীয় উপজেলার বেশ কয়েকটি এলাকায় কৃষকরা আমন আবাদে ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মাঠে কাজ করছেন। কেউ বীজতলা থেকে ধানের পাতা তুলছেন, জলাবদ্ধতায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ আবার দাকোপসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে বীজ সংগ্রহ ও বপন করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।

কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে আমন রোপন সাধারণত সম্পন্ন হয়। এবার আষাঢ় মাসে বৃষ্টির দেখা মেলেনি। বীজতলাও প্রস্তুত করতে সময় নিতে হয়। শ্রাবণে বীজতলা তৈরি করলেও ভারী বৃষ্টি ও বাঁধ ভেঙে সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় নষ্ট হয়েছে বীজতলা। ফলে বিলম্বে আমন রোপন করতে হচ্ছে। বাইরে থেকে বীজ সংগ্রহ করার কারণে উৎপাদন খরচও বাড়ছে। আমন উত্তোলনের পরে তরমুজ, শীতকালীন সবজিসহ নানা ফসল ফলানো হলেও বিলম্বের কারণে কৃষক ভালো দাম পাওয়া নিয়ে শঙ্কিত। সেচের পানির অভাবে বোরো উৎপাদনেও ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে খুলনা অঞ্চলের ৪ জেলার (খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা ও নড়াইল) রোপা আমন (হাইব্রিড, উফশী ও স্থানীয় জাতের) আবাদের লক্ষ্য মাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে ২,৯৯,৮০২ হেক্টর জমি। যার মধ্যে খুলনার লক্ষ্যমাত্রা ৯৪,৮১০ হেক্টর, বাগেরহাট ৭৩,৩২২ হেক্টর, সাতক্ষীরা ৮৮,৭৭০ হেক্টর ও নড়াইল জেলায় ৪২,৯০০ হেক্টর জমি।

জানা গেছে, খুলনা কৃষি অঞ্চলে আগস্টের শেষ দুই সপ্তাহে বন্যায় ৮৪২.৩৮ হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ, বাঁধ ভেঙে যাওয়া এবং ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে প্রায় ২৮.৫০ কোটি টাকার ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা ও নড়াইল-এ চারটি জেলায় মোট ১২,৮৬১ জন কৃষক ক্ষতির মুখে পড়েছেন। ২,৮৪৫ কৃষকের ১৩৬ হেক্টর জমির আমন বীজতলা নষ্ট হয়ে যাওয়ায় ৬৮ কোটি ৬০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানান তারা। বন্যায় ২,৯৮০ কৃষকের মালিকানাধীন মোট ১৫৭৩ হেক্টর জমির রোপা আমন নষ্ট হয়েছে এবং ৬১ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে এবং ৪৩০ কৃষকের ২৫ হেক্টর জমির আউশ ধান নষ্ট হয়েছে এবং ৩০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া ৪ হাজার ৭২৬ জন কৃষকের মোট ১৪৪ হেক্টর সবজি চাষের জমি ধ্বংস হয়েছে এবং প্রায় ৫ কোটি ৩৮ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। ৪৮ হেক্টর জমিতে তরমুজ, ১ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ, ১০ হেক্টর জমিতে শিম, ৩ হেক্টরে টমেটো, ৩ হেক্টরে কলা, ৫ হেক্টর জমিতে পেঁপে, ১৮ হেক্টরে আদা, ২ হেক্টর জমিতে হলুদ এবং ৫ হেক্টর জমিতে পান চাষ হয়েছে।

বাগেরহাটের রামপালের কৃষকরা বলেন, “জলবায়ু পরিবর্তন সাম্প্রতিক বছরগুলিতে অন্যান্য এলাকার ন্যয় রামপাল উপজেলার কৃষির উপর উল্লেখযোগ্য প্রতিকূল প্রভাব ফেলেছে। সমুদ্রের পানির উচ্চতা বাড়ার কারণে এই অঞ্চল লবণ পানির গ্রাসে পড়েছে৷ লবণাক্ততার কারণে ফসল ও গাছপালার ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। লবণাক্ততার প্রভাবে জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হবে। উদ্ভিদ প্রজাতি ও স্বাদু পানির মাছ হ্রাস পাচ্ছে। প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে ওঠা প্রজাতি বিলুপ্ত হওয়ার ফলে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা বাড়ছে, নিরাপদ খাবার পানির তীব্র সঙ্কট দেখা দিয়েছে, ফসলি জমি নষ্ট হচ্ছে, কৃষক-জেলে তাদের পেশা হারাচ্ছেন। ঝুকির মধ্যে পড়ছে জীবনজীবিকা। আশ্রয় বা আবাস হারিয়ে অন্য এলাকায় চলে যাচ্ছেন।”

খুলনার কয়রা উপজেলার মাদারবাড়ি, লক্ষীখোলা, দেয়াড়া বিলের পানি সরানোর সহজ পথ বেড়ের খাল দিয়ে। তবে বেড়ের খালে বাঁধ দিয়ে লবন পানির চিংড়ি চাষ করায় পানি নিষ্কাশনে সমস্যা হয়। বিগত কয়েকবছর ওই বিলের চাষিদের উৎপাদন খরচ না উঠায় অনেকেই আমন ধান চাষের আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। নারায়নপুর খালে স্লুইজ গেট থাকার পরেও ইজারা দেওয়ায় পাশ্ববর্তী বিলের পানি নিষ্কাশনে চরম বেগ পেতে হচ্ছে।

শুধু কয়রায় নয়, পাইকগাছার ধামরাইল, হরিনগর, কাওয়ালী, ঢ্যামশাখালী, লক্ষীখোলা, মাঝির বিল, বোয়াল মারিয়া, হুলোর বিল, কাটিপাড়া উত্তর চরবিল, ধোপা খোলার বিল, বাকার চর, রূপসার নর্ণিয়া, বাগমারা ও জাবুসাসহ দাকোপ, বটিয়াঘাটা, তেরখাদা, ডুমুরিয়া ও দিঘলিয়া উপজেলার বিভিন্ন বিলে জলাবদ্ধতায় আমন রোপনে ব্যাপক সমস্যা হচ্ছে।

কয়রা উপজেলার কালনা বিলের কৃষক নূরুল ইসলাম ও ইউনুস আলী জানান, ভারী বৃষ্টিতে তাদের ৮০ ভাগ বীজতলা নষ্ট হয়েছে। পরে অন্যস্থানে বীজতলা তৈরি করেছেন। এখনও বিলে পানি বেশি থাকায় আবাদ করা সম্ভব হচ্ছে না। শাকবাড়িয়া খাল দিয়ে এই বিলসহ পাশ্ববর্তী চারটি বিলের পানি সরানো হয়। ওই খালে বাঁধ ও নেট-পাটা দিয়ে কয়েকটি খন্ডে বিভক্ত করা হয়েছে। খালের পশ্চিম ভাগের কালভার্ট সম্পূর্ণ বন্ধ করে মাঠ তৈরি করা হয়েছে। আর পূর্বভাগের ব্রীজ ঘূর্ণিঝড় আইলায় ভেঙে যাওয়ায় বাঁধ দেওয়া হয়। সেই বাঁধ কেটে পানি সরবরাহ করতে হয়। স্লুইস‌গেট না থাকায় জোয়ারের লবণপানি জমিতে ঢুকে পড়ে।

বটিয়াঘাটা উপজেলার কৃষক শাহাদাত হোসেন জানান, বিলে পানি থাকায় আমন দেরিতে রোপন করতে হচ্ছে। আমন ধান কেটে তরমুজ চাষ করা হয়। বিলম্বের ফলে তরমুজের ভালো দাম পাইনা।

কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের খুলনা অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক বিভাষ চন্দ্র সাহা জানান, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে খুলনা অঞ্চলের ৪ জেলার রোপা আমন (হাইব্রিড, উফশী ও স্থানীয় জাতের) আবাদের লক্ষ্য মাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে ২ লক্ষ ৯৯ হাজার ৮০২ হেক্টর জমি। ইতোমধ্যে ৪ জেলায় রোপা আমন ধানের আবাদের অগ্রগতি হয়েছে ২,৭৭,৪৮৮ হেক্টর জমিতে, যার হার ৯৩%। আশাকরা যাচ্ছে অল্প সময়ের মধ্যে রোপা আমন আবাদের অগ্রগতি শতভাগ সম্পন্ন হবে। একই সাথে আশা করা যাচ্ছে আবহাওয়াসহ সার্বিক দিক প্রতিকূলে থাকলে রোপা আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হলে খুলনা অঞ্চলে ৮,৭১,৯৪০ মে. টন চাউল উৎপাদন সম্ভব হবে।

তিনি বলেন, “কৃষি মন্ত্রণালয়ে প্রণোদনার জন্য চিঠি পাঠানোয় কৃষকদের ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে আগাম রবিশস্য চাষে কৃষকদের উৎসাহিত করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত দরিদ্র কৃষকদের মধ্যে বীজ বিতরণ করা হয়েছে। কৃষকদের প্রণোদনা বা স্বল্প সুদে ঋণ নিয়ে দাঁড়ানোর সুযোগ দেওয়া উচিত, কারণ মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা দরিদ্র কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছেন এবং সর্বোচ্চ সহায়তা দিচ্ছেন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, বাগেরহাটের উপ-পরিচালক শঙ্কর কুমার মজুমদার বলেন, “জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাগেরহাটে বোরো ধানের উৎপাদন বেশি ক্ষতির মুখে পরে। কারণ লবণাক্ততা বেড়ে যায়। বৃষ্টি না হওয়ার কারণে মিঠা পানির ঘটতি থাকে। গত বছর ঘূর্নিঝড় মিধিলার প্রভাবে সৃষ্ঠ ঝড়ো বাতাস ও বৃষ্টিতে আমাদের ১৫ হাজার ২৫৪ হেক্টর জমির ফসল আক্রান্ত হয়েছে। সব থেকে বেশি ক্ষতি হয়েছে আমন ধান।”

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সাতক্ষীরার উপ-পরিচালক মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, “জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সাতক্ষীরার কৃষিতে মারাত্মক। অতি বৃষ্টি, অনাবৃষ্টিতে আউশ, আমন ও বোরো হুমকিতে পরে। লবণাক্ততা বেড়ে ধানসহ অন্যান্য ফসল উৎপাদন বিঘ্নিত হয়।”

জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুতে কাজ করা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এওসেড এর প্রধান নির্বাহী শামীম আরেফিন বলেন, “বিশ্ব নেতাদের ঘোষণা ছিল ১.৫ ডিগ্রির নিচে তাপমাত্রা রাখা। কিন্তু তা সম্ভব হচ্ছে না। এ মাত্রা ২.২ তে উঠেছে। যা শঙ্কার জায়গায় রয়েছে। এ কারণেই পৃথিবীর উষ্ণায়ন বাড়ছে। পৃথিবী জুড়েই জলবায়ুর উল্টো পাল্টা আচরণ দেখা যাচ্ছে। বাংলাদেশ এর বাইরে না। আর ভৌগোলিক কারণেই বাংলাদেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চল ঝুকিপূর্ণ এলাকা। জলবায়ু পরিবর্তনের এ ঝুঁকি আরও ব্যপকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এরই অন্যতম বাস্তব উদাহরণ হলো এ অঞ্চলের কৃষকরা সময়ের মধ্যে আমন চাষ করতে পারছেন না। জলবায়ু বিশেষজ্ঞরা আগেই সতর্ক করেছেন জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে সাউথ এশিয়াসহ এ অঞ্চলে খাদ্য উৎপাদন হৃাস পাবে। এবার আমন মৌসুমে আমন চাষ সম্পন্ন করতে পারছি না।”

বেড়িবাঁধ ভেঙে আমনে ক্ষতি

২৯ আগস্ট পাইকগাছা উপজেলার দেলুটি ইউনিয়নের কালীনগর গ্রামে ভদ্রা নদীর ৩০০ ফুট বাঁধ ভেঙে ১৩ গ্রামে পানি প্রবেশ করে। পাঁচ দিন পরে বাঁধ মেরামত সম্ভব হলেও ক্ষতচিহ্ন রয়ে গেছে। ওই ইউনিয়নে দুই হাজার দুইশ হেক্টর জমিতে আমন রোপনের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। ইতোমধ্যে রোপনকৃত ৯৫০ হেক্টর আমন ধানক্ষেত ভেসে গেছে। এছাড়া ২২৫ হেক্টর বীজতলা নষ্ট হয় বলে কৃষি দপ্তর জানায়। ফের বীজতলা তৈরির জন্য তিন মেট্রিক টন বীজ দিয়েছে কৃষি বিভাগ।

পাইকগাছা উপজেলার কৃষক শাহিনুর ইসলাম বলেন, “কখনও ভারী বৃষ্টিতে বিল-মাঠ ডুবে যাচ্ছে, কখনও মোটেও বৃষ্টি হচ্ছে না। এ বছর বাঁধ ভেঙে আমন ক্ষেতসহ বীজতলা ভেসে যাওয়ায় চিন্তিত।”

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ও বৃষ্টিপাতে তারতম্য

আবহাওয়া অফিস জানায়, বাগেরহাট ও খুলনায় ২০২২ সালে জুনে ৭৬ মিলিমিটার, জুলাইয়ে ১১৬ মিলিমিটার এবং আগস্টে ১৮৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। ২০২৩ সালে জুনে ২২৮ মিলিমিটার, জুলাইয়ে ১৫১ মিলিমিটার ও আগস্টে ৩০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়। চলতি বছরে জুনে ৬৩ মিলিমিটার, জুলাইয়ে ৪১৬ মিলিমিটার ও আগস্টে ৪৬৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। কয়রায় ২০২১ সালে জুনে ৬৯৯ মিলিমিটার, জুলাইয়ে ৬৮২ মিলিমিটার ও আগস্টে ২৫৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়। ২০২২ সালে জুনে ১১৪ মিলিমিটার, জুলাইয়ে ৩৪২ মিলিমিটার ও আগস্টে ৩৬৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়। ২০২৩ সালে জুনে ৪০৪ মিলিমিটার, জুলাইয়ে ২৯৫ মিলিমিটার ও আগস্টে ৩৬৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়। চলতি বছরে জুনে ১৩৯ মিলিমিটার, জুলাইয়ে ৩৪৫ মিলিমিটার ও আগস্টে ৯৩৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। রিপোর্টে দেখা যায়, বর্ষাকালে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত হচ্ছে না। এছাড়া কোনো বছর অতিবৃষ্টি, কখনও অনাবৃষ্টি হচ্ছে।

খুলনা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবহাওয়াবিদ আমিরুল আজাদ বলেন, “২০১৯ ও ২০২২ সালে বৃষ্টিপাত অনেক কম ছিল। আবার ২০২১, ২০২৩ ও চলতি বছরে বৃষ্টিপাত বেশি। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধিতেএমন হচ্ছে। বেশি বেশি গাছ রোপনের পরামর্শ দেন তিনি।”

কৃষি দপ্তরের সুপারিশ

কয়রা উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ দপ্তর প্রাথমিক পর্যায়ে ৩৯টি খাল নিয়ে মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন দাখিল করে। এছাড়া পানি নিষ্কাশনের জন্য স্লুইসগেট নিয়েও প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন। ওই প্রতিবেদনে কয়রার ২০টি স্লুইসগেটের মধ্যে ৬টি সম্পূর্ণ অকেজো ও ১৪টি সংস্কারযোগ্য উল্লেখ করা হয়েছে। হোগলা, বীণাপানী, খিরোল ও নাকশাতে নতুন ৪টি স্লুইসগেট নির্মাণের সুপারিশ করেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কয়রার ৩৯টি খালে নোনা পানির অনুপ্রবেশ বন্ধ এবং খন‌নের মাধ‌্যমে মিষ্টি পানি সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা গেলে খাল সং‌শ্লিষ্ট জ‌মিতে বছরে ৩৭০ কোটি ৮০ লাখ টাকার ফসল উৎপাদন সম্ভব। তন্মধ্যে বোরো, আউশ ও আমন ধানের উৎপাদন বৃদ্ধির কথা উল্লেখ রয়েছে। খালগুলোর মধ্যে ১৮টি খাল ১০ লাখ ৮২ হাজার ৬২৫ টাকায় ইজারা দেওয়া রয়েছে। পাইকগাছা উপজেলার ১৫টি খাল ও ১৫টি স্লুইসগেট সংস্কারের সুপারিশ করে একই রকম প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে।

পাইকগাছা উপজেলার কৃষি অফিসার অসীম কুমার দাশ বলেন, “জলাবদ্ধতা ও খরার কারণে বিগত কয়েক বছর কয়রা ও পাইকগাছাতে বিলম্বে আমন চাষ করতে হচ্ছে। বিগত কয়েকদিনের ভারি বৃষ্টিপাতে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়ে বীজতলা নষ্ট হওয়ায় কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পাইকগাছা উপজেলায় ১৭ হাজার ১২০ হেক্টর ও কয়রায় ১৬ হাজার ২৩৫ হেক্টর জমিতে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। কয়রাতে লক্ষ্যমাত্রার ৩৮ শতাংশ ও পাইকগাছাতে ৫৩ শতাংশ জমিতে চাষাবাদ সম্পন্ন হয়েছে। খালের বাঁধ, নেট-পাটা অপসারণ, খাল খনন, স্লুইসগেট নির্মাণ ও সংস্কারসহ নোনা পানি উত্তোলন বন্ধ করলে কয়রা-পাইকগাছার কৃষি অর্থনীতিতে বিপ্লব ঘটবে বলে তিনি বিশ্বাস করেন।”

ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশের সমন্বয়ক ও বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)’র সাবেক সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল বলেন, “যে কোন খালে বাঁধ কিংবা নেট-পাটা দিয়ে পানি সরবরাহে বাধা সৃষ্টি করলে বা দুষণের শিকার হলে এক সময় তা ভরাট হয় যায়। আর খাল সংলগ্ন এলাকায় বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতা ও শীতের সময় ভূগর্ভস্থ পানির স্তরে সংকট তৈরী করে। খালের ব্যাপ্তি অনুযায়ী কৃষিতে নেতিবাচক প্রভাব সৃষ্টির পাশাপাশি এর দখল সংযুক্ত নদী বা বিলের মৃত্যু ঘটায়।”

খুলনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ দপ্তরের উপ-পরিচালক কাজী জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, “খুলনায় ১০৮ শতাংশ বীজতলা তৈরি করা হয়। ক্ষতির পরে নতুন আরও বীজতলা তৈরি হয়েছে। আশা করছি চারার সংকট হবে না। এ বছর জেলায় ৯৪ হাজার ২৬৫ হেক্টর জমিতে আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে।”

তিনি আরও বলেন, “জেলায় ২২ হাজার ৬শ’ জন চাষিকে বীজ ও সার দেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে উপজেলা পর্যায়ে কয়েকটি খাল খনন করা হয়েছে। বাকি খাল খনন, স্লুইসগেট নির্মাণ-সংস্কারসহ খালের ইজারা ও সম্ভব্য ফসলের তথ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো রয়েছে।”

https://channelkhulna.tv/

খুলনা আরও সংবাদ

দাকোপে তিনটি ইউনিয়নে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের কমিটি গঠন

সাবেক কাউন্সিলর মনি’র স্ত্রীর দাফন সম্পন্ন : বিএনপির শোক

দিঘলিয়া সেনহাটি ইউনিয়নে পূজা মণ্ডপ পরিদর্শন ও আর্থিক সহায়তা প্রদান

বাংলাদেশ কোনো নির্দিষ্ট ধর্মাবলম্বীর জন্য নয়, সবার অধিকার সমান : মঞ্জু

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে একটি ‘অসুর’ শক্তির পতন হয়েছে

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মধ্যদিয়ে এবছর দূর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে

চ্যানেল খুলনা মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন  
DMCA.com Protection Status
সম্পাদক: মো. হাসানুর রহমান তানজির
It’s An Sister Concern of Channel Khulna Media
© ২০১৮ - ২০২৪ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত | চ্যানেল খুলনা.বাংলা, channelkhulna.com.bd
যোগাযোগঃ কেডিএ এপ্রোচ রোড (টেক্সটাইল মিল মোড়), নিউ মার্কেট, খুলনা।
প্রধান কার্যালয়ঃ ৫২/১, রোড- ২১৭, খালিশপুর, খুলনা।
ফোন- 09696-408030, 01704-408030, ই-মেইল: channelkhulnatv@gmail.com
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য অধিদফতরে অনলাইন নিউজ পোর্টাল নিবন্ধনের জন্য আবেদিত।