জলবায়ু-২০২১ বিষয়ে বৈশ্বিক শীর্ষ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তার ভাষনে বলেছেন জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে কয়েক মিলিয়ন মানুষের জীবন-জীবিকা এখন হুমকীর মুখে। এটি মোকাবেলায় টেকসই উদ্যোগ গ্রহণের এখনই উপযুক্ত সময়।
বৃহস্পতিবার (২২ এপ্রিল) সন্ধ্যায় যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি জো বাইডেনসহ বিশ্বের সকল মানুষের উদ্যেশ্যে দেওয়া ভার্চুয়ালি বক্তৃতায় মোদী বলেন, ‘আমি এই উদ্যোগ গ্রহণের জন্য রাষ্ট্রপতি বাইডেনকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। এই মুহূর্তে সমগ্র মানবজাতি এক বৈশ্বিক মহামারীর সাথে লড়াই করছে এবং এই ঘটনাটি একটি সময়োচিত ইঙ্গিত যে জলবায়ু পরিবর্তনের মারাত্মক হুমকিটি এখনও শেষ হয়ে যায়নি।’ ‘সত্যি বলতে, জলবায়ু পরিবর্তন বিশ্বজুড়ে কয়েক মিলিয়ন মানুষের জন্য একটি জীবন্ত বাস্তবতা কারণ তাদের জীবন ও জীবিকা ইতোমধ্যে এর বিরূপ পরিণতির সম্মুখীন হয়েছে।’
ভারতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য মানবজাতিকে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নিতে হবে। আমাদের অতিশীঘ্র, বৃহত্তর পর্যায়ে ও বিশ্বব্যাপী এই জাতীয় ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। ভারতে আমরা আমাদের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছি। ২০৩০ সালের মধ্যে ৪৫০ গিগাওয়াটের উচ্চাভিলাষী নবায়নযোগ্য জ্বালানির লক্ষ্যমাত্রা আমাদের প্রতিশ্রুতিবদ্ধতারই প্রতিফলন করে।’ ‘অনেক উন্নয়ন চ্যালেঞ্জ থাকা সত্ত্বেও আমরা দূষণহীন জ্বালানি, শক্তি সক্ষমতা, বনায়ন এবং জৈব-বৈচিত্র্য বিষয়ে অনেক সাহসী পদক্ষেপ নিয়েছি। এ কারণেই আমরা কয়েকটি দেশের মধ্যে রয়েছি যাদের ন্যাশনালি ডিটারমাইন্ড কন্ট্রিবিউশন (এনডিসি) ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে রয়েছে। আমরা আন্তর্জাতিক সৌর জোট, লিডআইটি, এবং দুর্যোগ প্রতিরোধক অবকাঠামো জোটের মতো বৈশ্বিক উদ্যোগকেও উৎসাহিত করেছি ‘
“ভারত-মার্কিন জলবায়ু এবং দূষণহীন জ্বালানি এজেন্ডা ২০৩০ অংশীদারিত্ব” ঘোষণা করে মোদী বলেন, ‘জলবায়ু-দায়বদ্ধ উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে ভারত তার অংশীদারদের ভারতে টেকসই উন্নয়নের মানদণ্ড তৈরিতে স্বাগত জানায়। এগুলি অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশগুলোকেও সহায়তা করতে পারে, যাদের গ্রিন ফাইন্যান্স এবং দূষণহীন প্রযুক্তিতে সাশ্রয়ী প্রবেশাধিকার প্রয়োজন।
সে কারণেই, রাষ্ট্রপতি বাইডেন এবং আমি “ভারত-মার্কিন জলবায়ু এবং দূষণহীন জ্বালানি এজেন্ডা ২০৩০ অংশীদারিত্ব” ঘোষণা করছি। আমরা একসঙ্গে বিনিয়োগ সংগঠিত করতে, দূষণহীন প্রযুক্তি প্রচার করতে এবং সবুজ সহযোগিতা সক্ষম করতে সহায়তা করব।’
ভারতের মাথা পিছু কার্বন নিঃসরণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বৈশ্বিক জলবায়ু কার্যক্রম নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি আমার একটি ভাবনা আপনাদের জানাতে চাই। ভারতের মাথাপিছু কার্বন নিঃসরণ বৈশ্বিক গড়ের তুলনায় ৬০ শতাংশ কম I এর কারণ আমাদের জীবনযাত্রা এখনও টেকসই প্রাচীন অভ্যাসের মধ্যে নিহিত। তাই, আজ আমি জলবায়ু কার্যক্রমে জীবনযাত্রার পরিবর্তনের গুরুত্বের উপর জোর দিতে চাই। টেকসই জীবনযাত্রা এবং “ব্যাক টু বেসিকস” দর্শন অবশ্যই কোভিড-পরবর্তী যুগের জন্য আমাদের অর্থনৈতিক কৌশলের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ হতে হবে ‘
ভারতীয় মহান সন্ন্যাসী স্বামী বিবেকানন্দের কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, ‘স্বামী বিবেকানন্দ আমাদের আহ্বান জানিয়েছিলেন, “উঠুন, জাগ্রত হোন এবং লক্ষ্য অর্জন না হওয়া পর্যন্ত থামবেন না।” আসুন, আমরা এই দশককে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেয়ার দশক হিসেবে তৈরি করি।’