সব কিছু
facebook channelkhulna.tv
খুলনা বুধবার , ১৯শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ৪ঠা ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
জাল দলিলে সম্পত্তি হাতিয়ে নিচ্ছে চক্র | চ্যানেল খুলনা

জাল দলিলে সম্পত্তি হাতিয়ে নিচ্ছে চক্র

জাল দলিলের জালিয়াতিতে ৪০ বছরেরও বেশী সময় ধরে ভোগ দখলে থাকা জমির মালিক আজ দিশেহারা। পদ্ম সেতু চালুর পর থেকে দক্ষিণাঞ্চল তথা খুলনায় জমির দাম তুঙ্গে। চাহিদার তুলনায় শহরে জমি কম থাকায় মহানগরের আশাপাশ এলাকায় জমি কেনায় রয়েছে ব্যাপক চাহিদা। সে সুযোগ কাজে লাগিয়ে সম্পত্তি হাতিয়ে নিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে ভূমিদস্যুদের সংঘবদ্ধ একটি চক্র। অভিযোগ রয়েছে, জাল দলিল তৈরি করে অন্যের জমি নামজারি করে নিজেদের মধ্যেই বিক্রি করে জমি হাতিয়ে নিচ্ছে চক্রটি। শুধু নামজারি নয়, বেশ কয়েকটি মূল্যবান সম্পত্তির মালিক বনে যাওয়ার লক্ষে জাল দলিলের মাধ্যমে আদালতে মামলাও করেছে এই চক্র।
খুলনা ডুমুরিয়ার উপজলার মোস্তফার মোড় এলাকায় এভাবে আসল জমির মালিককে অন্ধকারে রেখে একজনের জমি অন্যের নামে রেজিস্ট্রি করে হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। আর এ জালিয়াতি ও প্রতারণার ঘটনা ঘটিয়েছে রায়েরমহল এলাকার বাসিন্দা মো. মকিতুর রহমান ও তার সংঘবদ্ধ চক্র। এক সময় এই মকিতুরের পূর্ব পুরুষ ওই এলাকায় অনেক জমির মালিক থাকায় জমি হাতাতে নিজেই সাজেন দাতা। যাতে হাতিয়ে নেওয়া জমি বিক্রিতে কারো সন্দেহ তৈরী না হয়। আর গরিব ভূমি মালিকের অসহায়ত্বের সুযোগ নেয় চক্রটি।
খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, মো. মকিতুর রহমানের নামে গত ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ তারিখে খুলনা ডুমুরিয়া উপজেলার চক আসানখালী মৌজার ৮৯২৯ খতিয়ানে নামজারির আবেদন অনুমোদিত হয় এবং তিনি ডিসিআর কাটেন। মকিতুর অক্টোবর মাসে মিজান মোল্লার ছেলে সৈকত মোল্লার কাছে এই আট শতক জমি বিক্রি করেন। পরে মকিতুর লোকজন নিয়ে দলিল ও নামজারি দেখিয়ে চক্রটি জমির দখল নেয়।
সরেজমিন দেখা যায়, ডুমুুরিয়া উপজেলার চক আসানখালী মৌজার মোস্তফার মোড় থেকে কৈয়া বাজার যেতে রাস্তার পাশে একই জমিতে দুটি সাইনবোর্ড। একটি সাইনবোর্ডে লেখা ওয়ারেশ সূত্রে শেখ আকতার হোসেন, শেখ ফেরদাউষ হোসেন ও শেখ রফিকুল ইসলাম মুকুল এক দশমিক ৭০একর জমির মালিক। পাশেই নতুন করে ঘেরা দেওয়া আট শতক জমি। সাইনবোর্ড দেওয়া জমিতে। সেখানে লেখা ক্রয় সূত্রে এই জমির মালিক সৈকত মোল্লা।
জমির মূল মালিক শেখ ফেরদাউষ হোসেন বলেন, ৪০ বছরেরও বেশী সময় ধরে ওয়ারেশ সূত্রে আমরা তিন ভাই এ জমি ভোগ দখলে আছি। কিছুদিন আগে হঠাৎ জানতে পারি আমাদের ১৭০ শতক জমির মাঝে সামনে থেকে ৮ শতক জমি ঘেরাও দিয়ে সৈকত মোল্লা সাইনবোর্ড লাগিয়েছে তার লোকজন নিয়ে। পরে তাদের সাথে আলাপ করলে তারা জানায় সে জমি কিনেছে মকিতুর রহমানের কাছ থেকে। আমরা ভূমি অফিসে খোজ নিয়ে দেখি মকিতুর জাল দলিল দিয়ে নামজারি করে আমাদের জমি বিক্রি করে দিয়েছে। এখন এই চক্রের হাত থেকে রেহাই পেতে আমরা দ্বারে দ্বারে ঘুরছি। প্রশাসনের হস্তক্ষেপ ছাড়া এ জমি পাবো কিনা জানি না। আমরা অসহায় হওয়ায় আমাদেরকে নানাভাবে হুমকি দিচ্ছে এই মকিত মিজান চক্র।
অনুসন্ধানে উঠে আসে, ডুমুরিয়া ভূমি অফিসের নামজারি ১৭২৬/২০২৪-২৫ অনুমোদিত মামলায় ৮৯২৯ খতিয়ানে দেখা যায়, রেকর্ডীয় মালিক আব্দুল করিম এর নিকট থেকে ২৮১০/১৯৯৮ নং কবলা দলিল মূলে মো. মকিতুর রহমান ১২ দশমিক ১৫ শতাংশ জমির মালিক। কিন্তু প্রকৃত পক্ষে এ আবেদনে যে দলিল জমা দেওয়া হয়েছে সেটি একটি জাল দলিল। এ প্রতিবেদক নামজারির আবেদনে উল্লেখিত দলিল নাম্বার তারিখ ঠিক রেখে জেলা রেকর্ড রুম খুলনা জেলা রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ে নকল তুলতে দিলে বেরিয়ে আসে থলের বিড়াল। আসল দলিলে দেখা যায় সেখানে দাতা গ্রহীতা ভিন্ন। আসল দলিলের তথ্যের সাথে অনুমোদিত নামজারির তথ্যের কোন মিল নেই।
এ বিষয়ে ডুমুরিয়া উপজেলা ভূমি অফিসের সহকারী কমিশনার আরাফাত হোসেন বলেন, আমরা দলিল এবং অন্যান্য কাগজপত্র দেখে শুনানীর মাধ্যমে নামজারি অনুমোদন করে থাকি। ভূলবশত জাল দলিলে কোন নামজারি অনুমোদন হয়ে থাকলে ১৫০ ধারায় জমির আসল মালিক আবেদন করলে তা যাচাই বাচাইয়ের মাধ্যমে বাতিল করার সুযোগ আছে। অথবা স্বপ্রনদিত হয়ে এ নামজারি বাতিল করা যাবে।
খোঁজ নিয়ে আরো দেখা যায়, মুকিতুর রহমান বাদী হয়ে এর আগে ডুমুরিয়া উপজেলার বিল পাবলা মৌজায় আরো কয়েকটি জমির মালিকানা দাবী করে মামলা করেন। খুলনার জেলা জজ দ্বিতীয় আদালতে ১০৭৩/৯৩ নম্বর কবলা দলিল মূলে এক একর জমির মালিকানা দাবী করে ১১ আগষ্ট ২০১৬ তারিখে দেঃ ৭৬/১৬ মামলা দাখিল করেন। পরবর্তীতে ২০২১ সালে এসে এই মকিতুর রহমান ১৩৪০/৮৩ দলিল মূলে ৭৫শতক জমির মালিকানা দাবী করে ৩০ জুন ২০২১ তারিখে সিনিয়র সহকারী জজ আদালত, ডুমুরিয়া খুলনায় ১৮৬/২১ মামলা দাখিল করেন। তিনি এ দুটি মামলায় যে দুটি দলিল দাখিল করেছেন জেলা রেকর্ড রুম খুলনা থেকে তার নকল উঠালে দেখা যায়। এ দলিল গুলো জাল। এই নাম্বারের আসল দলিলে দাতা গ্রহীতা ভিন্ন ব্যাক্তি।
সৈকত মোল্লা বলেন, আমি টাকা দিয়ে মকিতুর রহমান এর কাছ থেকে এই জমি ক্রয় করেছি। আমার বাবা মিজান মোল্লা ভালো বলকে পারবেন। তিনি সব কাগজপত্র দেখে এই জমি ক্রয় করেছেন।
সার্বিক বিষয়ে মো. মকিতুর রহমান বলেন, আমি নামজারি করি নাই। নাম জারি করেছে সৈকতের আব্বা। তার বাবা মিজান মোল্লা নিজেই সব কাগজ প্রস্তুত করেছে। আমি যে দলিল দিয়েছি তা আমার বাবার জমি। আর কাগজ ঠিক আছে কিনা তা আদালত সিদ্ধান্ত দেবে। পরক্ষনে তিনি আবার বলেন, আমি যে দলিল দিয়ে মামলা করেছি সেগুলো তখন ঘরে পাইছি। এ কারনে সেগুলো মামলায় দিছি। পরে জানতে পারছি এগুলো ঠিক নাই। তাই কদিন আগে এভিডেভিট করছি।
মিজান মোল্লা বলেন, আমি কাগজ পত্র দেখে আমার ছেলের নামে জমি ক্রয় করেছি। মকিতুর আমার নামে যে অভিযোগ তুলেছে তা মিথ্যা। তার জমি আমি কিভাবে নামজারি করবো। সেই সব করে দিছে। আমি কিনেছি মাত্র।
খুলনা মহানগরের সাব-রেজিস্ট্রার অফিস সংলগ্ন বিভিন্ন কম্পিউটার এর দোকান থেকে এসব জাল দলিল তৈরী করে নেয় ভূমিদস্যু ও জালিয়াত চক্ররা। মূলত মকিতুর রহমান, মিজান মোল্লা ও সৈকত মোল্লা একই সুতায় বাধা একটি চক্র। এদের সাথে রয়েছে ভূমি অফিসের অসাধু ব্যাক্তি। এছাড়া এ জালিয়াত চক্র সাব-রেজিস্ট্রার অফিসের অসাধু রেকর্ডকিপার ও নকলনবিশ অর্থের বিনিময়ে এসব অপকর্ম করে যাচ্ছে বলে তথ্য উঠে আসে।

https://channelkhulna.tv/

আজকের টপিক্স আরও সংবাদ

ভারতে সহকারী হাইকমিশনে হামলার প্রতিবাদে খুলনায় বিক্ষোভ মিছিল; নিরাপত্তা জোরদার

সাবেক সেনাপ্রধানের ভাই কারাগারে

পাইকগাছায় নাশকতা মামলায় কয়রার ইউপি চেয়ারম্যান গ্রেফতার

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে আহত ও শহিদদের স্মরণে সভা

খুলনার শিববাড়ী মোড়ে বৈষম্য বিরোধী ছাত্রদের অবস্থান

বর্ণিল আয়োজনে উৎসবমুখর পরিবেশে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উদযাপন

চ্যানেল খুলনা মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন  
DMCA.com Protection Status
সম্পাদক: মো. হাসানুর রহমান তানজির
It’s An Sister Concern of Channel Khulna Media
© ২০১৮ - ২০২৪ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত | চ্যানেল খুলনা.বাংলা, channelkhulna.com.bd
যোগাযোগঃ কেডিএ এপ্রোচ রোড (টেক্সটাইল মিল মোড়), নিউ মার্কেট, খুলনা।
প্রধান কার্যালয়ঃ ৫২/১, রোড- ২১৭, খালিশপুর, খুলনা।
ফোন- 09696-408030, 01704-408030, ই-মেইল: channelkhulnatv@gmail.com
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য অধিদফতরে অনলাইন নিউজ পোর্টাল নিবন্ধনের জন্য আবেদিত।