জুলাই গণহত্যার বিচারের দাবিতে খুলনায় ছাত্রশিবিরের বিক্ষোভ মিছিল পরবর্তী সমাবেশে নেতৃবৃন্দ বলেন, অভ্যুত্থানের তিন মাস পার হলেও আওয়ামী লীগ ও তাদের দোসরদের ষড়যন্ত্র থেমে নেই। চব্বিশের আন্দোলনে আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গসংগঠনের সন্ত্রাসীরা যে বর্বর হামলা চালিয়েছে, তাতে হাজারো প্রাণ ঝরে গেছে, যা ইতিহাসে নজিরবিহীন। শহীদ আবু সাঈদ ও শহীদ মুগ্ধসহ অসংখ্য ছাত্র-জনতা ও ছাত্রশিবির কর্মীকে শহীদ করা হয়েছে। এই গণহত্যায় রাষ্ট্রের সব শক্তি প্রয়োগ করে ছাত্র-জনতার ওপর নিপীড়ন চালানো হয়েছে। নেতৃবৃন্দ বলেন, তাদের পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের কারণে জাতি আজ চরম ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। এখনো তারা দেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির পায়তারা করছে। কিন্তু দেশের জনগণ তাদের আর বরদাশত করবে না। নেতৃবৃন্দ চব্বিশে যারা এই গণহত্যার সাথে জড়িত, তাদেরকে দ্রুত বিচারের আওতায় এনে বাংলার মাটিতে বিচার করতে হবে বলে হুশিয়ারি উচ্চারণ করেন। তা না হলে ছাত্র-জনতারাই বিচার করবে। নেতৃবৃন্দ বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানে হিন্দু-মুসলমানসহ সকল ধর্মের ভেদাভেদ ভুলে আন্দোলন করেছিলেন ছাত্র-জনতা। কিন্তু পতিত সরকারের দোসর ও দিল্লির ষড়যন্ত্রে দেশে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লাগানোর ষড়যন্ত্র চলছে। সেই উদ্দেশ্যেই চট্টগ্রামে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে।
বুধবার (২৭ নভেম্বর) বিকেলে নগরীর প্রাণকেন্দ্র ডাকবাংলো মোড়ে ‘জুলাই গণহত্যার বিচারের দাবিতে’ জাতীয় ছাত্র সংহতি সপ্তাহের অংশ হিসেবে খুলনা বিভাগীয় শহরে ‘বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ’ কর্মসূচীতে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ সব কথা বলেন।
বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির খুলনা মহানগরী শাখার উদ্যোগে অনুষ্ঠিত সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন কেন্দ্রীয় কার্যকরী পরিষদের সদস্য ও মহানগরী সভাপতি আরাফাত হোসেন মিলন। মহানগরী সেক্রেটারি এস এম নূরুল্লাহ’র পরিচালনায় সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় ছাত্রকল্যাণ ও ফাউন্ডেশন সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মামুন। বিশেষ অতিথি ছিলেন কেন্দ্রীয় ছাত্র আন্দোলন সম্পাদক মো. আমিরুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় সাবেক তথ্য সম্পাদক মহানগরীর সাবেক সভাপতি আজিজুল ইসলাম ফারাজী ও কেন্দ্রীয় সাবেক স্কুল কার্যক্রম সম্পাদক মহানগরীর সাবেক সভাপতি মোশাররফ হোসেন আনসারী, খুলনা উত্তর জেলা সভাপতি হাফেজ বেলাল হোসাইন রিয়াদ, দক্ষিণ জেলা সভাপতি আবু জর গিফারী, বাগেরহাট জেলা সভাপতি সাঈফ হাসান, সেক্রেটারি মোশেদুল ইসলাম, উত্তরের সেক্রেটারি ইউসুফ ফকির, দক্ষিণের সেক্রেটারি মো. ওয়ায়েজকুরুনী। এতে অন্যান্যের মধ্যে বেলাল হোসেন, তারেক রহমান, হাবিবুল্লাহ রাজু, তৈয়েবুর রহমান, ই¯্রাফিল হোসেন, সাঈদুর রহমান, ইমরানুল হক, আসিফ বিল্লাহ, সোলায়মান আবিদ, আবুল হাসান, মারুফ বিল্লাহ, খায়রুল বাশার, হযরত আলী, মিলন হোসেন রাজ, ইমরান খান, মুহতারাম বিল্লাহ, মো. মহিবুল্লাহ, আব্দুর রশিদ, শিবলুর রহমান, কামরুল হাসান, আল আমিন, সেলিম হোসেন, মিরাজুল ইসলাম, আল আমিন, নাঈমুল ইসলাম, লিমন হোসেন জিহাদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। মিছিলটি নগরীর ডাকবাংলো থেকে শুরু করে নগরীর প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে শিববাড়িস্থ শহীদ মীর মুগ্ধ চত্বরে গিয়ে শেষ হয়। বিক্ষোভ মিছিলে ‘ভারতীয় আগ্রাসন রুখে দাও রুখে দাও’, ‘উগ্রবাদের ঠিকানা এই বাংলায় হবে না’, ‘দিল্লি না ঢাকা, ঢাকা ঢাকা’, ‘হিন্দু মুসলিম ভাই ভাই, ‘সন্ত্রাসীদের ঠিকানা এই বাংলায় হবে না’ ইত্যাদি ল্লোগান দেন।
প্রধান অতিথি বক্তৃতায় আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘আওয়ামী লীগ আমাদের হিন্দু ভাইদেরকে কাজে লাগিয়ে দেশে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লাগানোর চেষ্টা করছে। চট্টগ্রামে প্রকাশ্যে আইনজীবী আলিফ ভাইকে ইসকনের সদস্যরা কুপিয়ে হত্যা করেছে। হিন্দুদের বলতে চাই, আপনাদের সঙ্গে আমাদের কোনো বিরোধ নেই। হিন্দু-মুসলিম ভাই ভাই।
জুলাই বিপ্লবে রক্ত দিয়ে দেশ স্বাধীন হয়েছে। হিন্দু ভাইদের অনুরোধ, আপনারা ষড়যন্ত্রে পা দেবেন না। আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে একসঙ্গে অসাম্প্রদায়িক দেশ গড়ব ইনশাআল্লাহ।
বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় আমিরুল ইসলাম বলেন, পরাজিত ফ্যাসিস্ট এখনো আমাদের সঙ্গে শত্রুতার নীলনকশা তৈরি করছে। তারা দফায় দফায় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লাগাতে চেয়েছে। চট্টগ্রামে আইনজীবী সাইফুল ইসলামকে হত্যা করে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে।
সভাপতির বক্তৃতায় আরাফাত হোসেন মিলন বলেন, শিক্ষার্থীরা যে স্বপ্ন ও আকাঙ্ক্ষা নিয়ে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ছিল, তা তখনই পূর্ণ হবে, যখন এই হত্যাযজ্ঞের নায়কদের বিচারের মুখোমুখি করা হবে। আমরা দেশের বিচারব্যবস্থা ও সামগ্রিক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদেরও বিচার দাবি করছি।