চ্যানেল খুলনা ডেস্কঃআম্পানে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ৯০ দিন পরে এসে খুলনার কয়রা ও পাইকগাছা উপজেলা এবার আমাবশ্যার প্রবল জোয়ারের পানিতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। বৃহস্পতিবার কয়রায় ৫টি স্থান ভেঙ্গে ৪টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে ১০ হাজার মানুষ দুর্ভোগে রয়েছেন। কপোতাক্ষ আর কয়রা নদীর পানি উপচে পড়েও প্লাবিত হচ্ছে। নতুন করে প্লাবিত হয়েছে ২নং কয়রা, গোবরা, ৩নং কয়রা ও বেদকাশি গ্রাম। বৃহস্পতিবার বিকাল থেকে লোকজন স্বেচ্ছাশ্রমে ভেঙ্গে যাওয়া স্থানগুলো আটকাতে চেস্টা করে। এর আগে বুধবার কয়রা উপজেলার কাজী পাড়া, পুটিহারী, হরিণখোলা, কাশিরহাট খোলা, ঘাটাখালি প্লাবিত হয়েছিল।
এছাড়া পাইকগাছা উপজেলার শিবসা নদীর পানির চাপে হাড়িয়ার বাধ বুধবার ভেঙে মাজরাবাদ, বয়ারঝাপা ও টেংরামারী গ্রাম প্লাবিত হয়। স্থানীয় লোকজন বৃহস্পতিবার স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁধটি আটকানোর কাজ করে।
কয়রার সামাজিক সংগঠন জাগ্রত যুব সংঘের সহ-সভাপতি কামাল হোসেন বলেন, জোয়ারের পানির চাপে কয়রার হরিণখোলা, গাটাখালী ও ২নং কয়রায় ৫টি স্থানের বাঁধ ভেঙে গেছে। এতে আরও ৪টি গ্রাম প্লাবিত হয়ে ২৫০০ পরিবার সঙ্কটে পড়েছেন। সাধারণ মানুষ স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁধ আটকানোর কাজ বিকাল ৪টা থেকে শুরু করেছে। হঠাৎ করে অতিরিক্ত জোয়ারের পানিতে কয়রা ডুবেছে।
কয়রা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম বলেন, জোয়ারের পানির চাপে ঘাটাখালী, ২ ও ৩নং কয়রায় বাধ ভেঙে গেছে। সাধারণ মানুষের চেস্টায় বাঁধ আটকানোর কাজ চলছে। আর কিছু জায়গায় বাঁধ ও পাকা সড়ক উপচে গ্রামে গ্রামে পানি প্রবেশ করছে।
উত্তর বেদকাশি গ্রামের বাসিন্দা ইব্রাহিম হোসেন বলেন, অতিরিক্ত পানি বাড়ায় কয়রার উত্তরবেদকাশি আবারও লবণ পানিতে প্লাবিত হয়েছে।
কয়রার গাজী পাড়ার সিরাজুল ইসলাম বলেন, আম্পানের পর কোন মতে ঘরে ফিরে বসবাস করছিলাম। কিন্তু জোয়ারের পানিতে আমরা ফের প্লাবিত হয়েছি। এখন আমার ঘরে পানি।
কয়রা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ইমতিয়াজ উদ্দিন বলেন, হঠাৎ করে বুধবার জোয়ারের অতিরিক্ত পানির তোড়ে বাঁধ উপচে বিভিন্ন গ্রামে পানি ডুকেছে। এতে নতুন করে ভোগান্তি তৈরি হয়েছে। বৃহস্পতিবারও ৫টি জায়গা ভেঙেছে।
কয়রা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অনিমেষ বিশ্বাস বলেন, জোয়ারের পানির চাপে বিভিন্ন স্থান ভেঙ্গে ও সড়ক উপচে গ্রামে পানি প্রবেশ করছে। জোয়ার কমলে এ সব স্থানে প্রয়োজনীয় মেরামত করা সম্ভব হবে। আর বিভিন্ন স্থানে স্বেচ্ছাশ্রমের কাজে বস্তা সরবরাহ করা হচ্ছে।
পাইকগাছায় গত ২ দিনে আমাবশ্যার প্রবল জোয়ারের পানির চাপে ৪টি ইউনিয়নের ৭টি স্থানে ওয়াপদার বাঁধ ভেঙ্গে ও উপচে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। যাতে মৎস্য ঘের, ফসলের ক্ষেত ও বাড়ী-ঘর ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও পাউবো’র উদ্যোগে সাময়িকভাবে বাঁধ মেরামত করা হলেও বেতবুনিয়ার আবাসন প্রকল্পের ৫ শতাধিক পরিবার পানির মধ্যে বসবাস করছে।
দেখা যায়, উপজেলার সোলাদানা ইউনিয়নে বেতবুনিয়া আবাসন ও গুচ্ছগ্রাম পানিতে থৈ থৈ করছে। একই ইউনিয়নের টেংরামারী ও ভাঙ্গা হাড়িয়ার ওয়াপদার বাঁধ ভেঙ্গে বুধবার ৫ হাজার বিঘা চিংড়ি ঘের প্লাবিত হয়ে ফসল ও মাছের ব্যাপক ক্ষতি হয়। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও প্রশাসনের উদ্যোগে রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত সহ¯্রাধিক লোক ভাঙ্গনরোধ করলেও বৃহস্পতিবার দুপুরে কিছু অংশ ভেঙ্গে যায়। বিকেলে ভাটার সময় স্থানীয় চেয়ারম্যান এস,এম, এনামুল হক ৪ শতাধিক লোক নিয়ে স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে বাঁধটি মেরামত করে। এ সময় শতাধিক লোক টেংরামারী পুরাতন গেট সংলগ্ন ওয়াপদার ভাঙ্গনও মেরামত করে। অপরদিকে, দেলুটি ইউনিয়নের চকরি-বকরি বদ্ধ জলমহল ও গেওয়াবুনিয়ার ওয়াপদার বাঁধ উপচিয়ে জোয়ারের পানি এলাকায় প্রবেশ করে। যাতে এলাকায় ব্যাপক মাছ ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান রিপন মন্ডল বলেন, দ্বীপ বেষ্টিত দেলুটি সব সময় প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার। বুধবার গদাইপুরের কচুবুনিয়া ও লতার কাঠামারীর ওয়াপদার রাস্তা জোয়ারের পানি উপচে শ শ বিঘার চিংড়ি ঘের প্লাবিত হয়। পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ সাময়িকভাবে বাঁধ দিয়ে রক্ষা করার চেষ্টা করেন।
পাইকগাছার সোলাদানার ভাঙ্গাহাড়িয়ার ভাঙ্গন স্থানীয় লোকদের নিয়ে বুধবার বিকেল থেকে অধিক রাত পর্যন্ত মেরামত করেছে বলে স্থানীয় ইউিপি চেয়ারম্যান এসএম এনামুল হক নিশ্চিত করেছেন। এ সময় পাইকগাছা উপজেলা ইউএনও এবিএম খালিদ হোসেন সিদ্দিকী ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে সকলকে বাঁধ মেরামত কাজে উৎসাহি করেন।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ- সহকারী মোঃ ফরিদউদ্দীন জানান, ইতোপূর্বে ৪ বার সরকারি ও স্থানীয়ভাবে বাঁধ মেরামত করা হলেও টেকসই মেরামতের অভাবে বারবার পাইকগাছার এ এলাকাটি ভেঙ্গে জোয়ারের পানি ঢুকছে। স্থায়ী বাঁধ মেরামতের জন্য ৩ লাখ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
মহিলা ইউপি মেম্বর কল্যাণী ম-ল বলেন, বাধ ভেঙে ৩টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে চিংড়ি ঘের ভেসে গেছে। ১৫ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
পাইকগাছা উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবিএম খালিদ হোসেন সিদ্দিকী বলেন, ভাঙ্গন কবলিত এলাকা আপাতত আটকানে হয়েছে। এখানে দ্রুত টেকসই বাঁধ দেয়ার ব্যাপারে জরুরী ব্যবস্থা নেয়া হবে।