টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় কিছু মানুষের শরীরে রক্ত জমাট বেঁধে যাওয়ার ঘটনায় ইউরোপের বিভিন্ন দেশ অ্যাস্ট্রাজেনেকার কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের প্রয়োগ স্থগিত করলেও ভারত তাতে উদ্বিগ্ন নয় এবং দেশজুড়ে টিকাদান কর্মসূচি পুরোদমে চলবে বলে জানিয়েছেন নয়াদিল্লির এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা।
ব্রিটেনের ওষুধপ্রস্তুতকারক কোম্পানি অ্যাস্ট্রাজেনেকা এবং অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীদের উদ্ভাবিত করোনাভাইরাসের টিকা তৈরি করছে ভারতের পুনের সেরাম ইনস্টিটিউট। কোভিশিল্ড নামে পরিচিত করোনার এই টিকা দেশটিতে এখন পর্যন্ত প্রায় সাড়ে তিন কোটি মানুষকে দেওয়া হয়েছে।
রক্ত জমাট বেঁধে যাওয়ার কারণে দেখা দেওয়া উদ্বেগে ফ্রান্স, স্পেন, জার্মানি এবং ইউরোপের কিছু দেশ ভ্যাকসিনটির প্রয়োগ স্থগিত করেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) ভ্যাকসিনটি নিরাপদ বলে আশ্বস্ত করলেও তা স্থগিত করেছে ইউরোপের কয়েকটি দেশ। এমনকি ওই অঞ্চলের ওষুধ নিয়ন্ত্রক সংস্থা ইউরোপীয় মেডিসিন্স এজেন্সি ভ্যাকসিনটির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার চেয়ে উপকারিতা বেশি বলে দৃঢ়ভাবে নিশ্চিত করেছে।
ভারত সরকারের অর্থনৈতিক সংস্কার ও পরিকল্পনাবিষয়ক উপদেষ্টা কর্তৃপক্ষ নীতি আয়োগের সদস্য বিনোদ কে পল বলেছেন, ভারতীয় কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন ধরনের তথ্য-উপাত্ত পর্যালোচনা করলেও ভ্যাকসিনের সঙ্গে রক্ত জমাট বেঁধে যাওয়ার ঘটনার মধ্যে কোনও ধরনের সংশ্লিষ্টতার ইঙ্গিত পায়নি।
তিনি বলেন, আমি আপনাদের আবারও আশ্বস্ত করছি যে, এ বিষয়ে আমাদের উদ্বেগের কোনও কারণ নেই। সুতরাং এটা পরিষ্কার— আমাদের টিকাদান কর্মসূচি চলবে। এ কর্মসূচি পুরোদমে অব্যাহত থাকবে। নীতি আয়োগের এই সদস্য বলেন, ভারত অন্যান্য সূত্রের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ওপর নজর রাখছে। কিন্তু আজ পর্যন্ত উদ্বেগজনক কিছু পাওয়া যায়নি।
বিশ্বের কয়েক ডজন দরিদ্র দেশে কোটি কোটি ডোজ অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন সরবরাহ করছে বিশ্বের বৃহত্তম ভ্যাকসিন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট।
এদিকে, বুধবার ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ ঠেকাতে দেশজুড়ে নজরদারি এবং পরীক্ষা বৃদ্ধির নির্দেশ দিয়েছেন। সব রাজ্যের কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক অনলাইন কনফারেন্সে অংশ নিয়ে স্থানীয়ভাবে সংক্রমণের লাগাম টানা সম্ভব না হলে আবারও দেশজুড়ে প্রাদুর্ভাব ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে সতর্ক করে দিয়েছেন তিনি।
বৃহস্পতিবারও দেশটিতে নতুন করে ৩৫ হাজার ৮৭১ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন; যা গত তিন মাসের মধ্যে একদিনে সর্বাধিক। এই আক্রান্তদের প্রায় ৬৫ শতাংশই দেশটির পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য মহারাষ্ট্রের। ভারতে এখন পর্যন্ত এক কোটি ১৪ লাখ ৭০ হাজারের বেশি মানুষ করোনায় আক্রান্ত এবং এক লাখ ৫৯ হাজার ২১৬ জন মারা গেছেন।