চ্যানেল খুলনা ডেস্কঃ নড়াইলে টিসিবি’র পন্য বিক্রয়ে চরম দূর্ণীতি অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। জানা গেছে, নড়াইল শহরের টিসিবি ডিলাররা অধিক লাভের জন্য সাধারণ ক্রেতাদের নিকট পন্য বিক্রয় না করে জেলার বিভিন্ন বাজারের মুদি ব্যবসায়ীদের নিকট পন্য বিক্রয় করছেন।
গত কয়েকদিন যাবত সরজমিন অনুসন্ধানে জানা গেছে, নিম্ন আয়ের মানুষেরা সারাদিন টিসিবি ডিলারের বিক্রয় কেন্দ্রের সামনে লম্বা লাইনে দাড়িয়ে থেকে পন্য না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন। অথচ ডিলারদের গুদামে ও বাড়িতে পর্যাপ্ত পরিমান পন্য মজুদ রয়েছে। তারা একদিকে মজুদ রাখছেন, অপরদিকে ব্যবসায়ীদের নিকট পন্য বিক্রি করছেন। সাধারণ ক্রেতাদের নিকট বিক্রির ক্ষেত্রে মানা হচ্ছে না বিক্রয় নীতিমালা। অধিকাংশ ক্রেতা তেল, চিনি ও ছোলা ক্রয়ের জন্য যাচ্ছেন। তাদেরকে ওই পন্যের সাথে অন্যান্য নি¤œমানের অধিক মূল্যের কিছু পন্য কিনতে বাধ্য করা হচ্ছে।
ক্রেতার উপর জোর পূর্বক চাপিয়ে দেয়া ওই সব পন্যের অতিরিক্ত দাম নেয়া হচ্ছে। যে কারনে স্বল্প আয়ের মানুষেরা টিসিবি’র পন্যে কিনতে পারছেন না। আর এই সুযোগে ডিলাররা রাতের অন্ধকারে বিভিন্ন ব্যবসায়ীর কাছে টিসিবি’র পন্যে বিক্রি করে দিচ্ছেন। বসুন্ধরা গ্রæপের ৫ লিটারের সয়াবিন তেলের বোতলের লেভেল ছিড়ে ফেলে ওই তেল বিক্রয় করা হচ্ছে। অনেক সময় বোতল থেকে তেল ব্যারেলে ঢেলে সেই তেল প্রকাশ্যে বিক্রি করায় কেউ বিষয়টি ধরতে পারছেন না। যে কারনে টিসিবি কর্তৃক সরবরাহ করা বসুন্ধরা গ্রুপের ৫ লিটারের সয়াবিনের শত শত খালি বোতল পাওয়া যাচ্ছে চিত্রা নদীতে। টিসিবি ডিলারের নিকট হতে বিপুল পরিমান ৫ লিটার সয়াবিনের বোতল কেনার অভিযোগ উঠেছে জেলার লোহাগড়া উপজেলার মিঠাপুর বাজারের মেসার্স লক্ষী ভান্ডারের বিরুদ্ধে।
মিঠাপুর বাজারের মেসার্স লক্ষী ভান্ডারে গিয়ে তাদের দোকানে ও গুদামে টিসিবি কর্তৃক সরবরাহকৃত ৫ লিটার সয়াবিনের বিপুল পরিমান খালি বোতল দেখা যায়। ওই নতুন খালি বোতলগুলির অধিকাংশর লেভেল ছিড়ে ফেলানো হয়েছে। সাংবাদিকদের দেখে এ দোকানের মালিক একটি ভ্যানে করে দোকান হতে প্রায় ১’শ খালি বোতল অপসারন করেন। এ সময় সাংবাদিক ও পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে খালি বোতল সম্পর্কে সন্তোষজনক কোন জবাব দিতে পারেনি এ দোকান মালিকের ছেলে লিটন পোদ্দার। তাদের গুদামে টিসিবি’র ৫ লিটার সয়াবিনের খালি বোতল সম্পর্কেও কোন সঠিক তথ্য দিতে পারেননি।
গুদামের মধ্যে থাকা টিসিবি’র চিনির খালি বস্তা সম্পর্কেও কোন জবাব দিতে পারেননি। এ সময় এলাকার লোকজন মন্তব্য করেন টিসিবি’র বস্তা হতে চিনি বের করে সাধারণ বস্তায় ভরা হচ্ছে এবং বোতল হতে তেল ব্যারেলে ঢেলে ফেলা হচ্ছে। এরপর চিনির খালি বস্তা ও তেলের খালি বোতল চিত্রা নদীতে ফেলা হচ্ছে। চুরি ঢাকতে এ কৌশল করা হয়েছে। নড়াইল শহরের রূপগঞ্জ বাজার ও মিঠাপুর বাজার এলাকার চিত্রা নদীতে গত কয়েকদিন যাবত টিসিবি’র খালি বস্তা ও তেলের খালি বোতল ভাসতে দেখা যাচ্ছে। ওই বস্তা ও বোতল নদীতে ভাসতে দেখে এলাকার মানুষ সহজেই বুঝতে পেরেছেন এসব বস্তা কারা নদীতে ফেলেছেন। স্থানীয়রা অনেক বস্তা নদী হতে তুলে নিয়ে গেছেন।
মিঠাপুর বাজার এলাকা হতে কিছু বস্তা পুলিশ আলামত হিসেবে জব্দ করে নিয়ে গেছে। মিঠাপুর বাজারের মেসার্স লক্ষী ভান্ডারের মালিক গোবিন্দ পোদ্দারের নিকট টিসিবি’র খালি বস্তা ও তেলের বোতল সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি এ সম্পর্কে কোন কথা বলতে চাননি। একই ভাবে নড়াইল সদরের গোবরা, বাহিরগ্রাম ও তুলারামপুর বাজারের একাধিক দোকানে টিসিবি’র সীল যুক্ত চিনি ভর্তি বস্তা ও ৫ লিটার সয়াবিনের অসংখ্য খালি বোতল দেখা যায়। অভিযোগ রয়েছে নড়াইলের টিসিবি ডিলাররা তাদের অধিকাংশ পন্য অধিক লাভের জন্য চোরাই পথে অসৎ ব্যবসায়ীদের নিকট বিক্রি করছেন।
ডিলার পরিতোষ কুন্ডু’র চোরাই পথে বিক্রি করা পণ্য পুলিশ নাকসী বাজার হতে উদ্ধার করেছে। তার নামে মামলাও দিয়েছে। তারপরও নড়াইলের ডিলাররা বেপরোয়া ভাবে নিয়ম নীতি লংঘন করে টিসিবি পণ্য বিক্রি করছেন। সেই সাথে চোরাই পথে পণ্য বিক্রি করছেন। ডিলারদের বদৌলতে চিত্রা নদীতে ভাসছে টিসিবি’র চিনির খালি বস্তা ও তেলের খালি বোতল। সচেতন মহল এসব অসাধু ডিলারদের বিরূদ্ধে তদন্তপূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের দাবি জানিয়েছেন।