ডায়াবেটিস একটি মারাত্মক রোগ। ডায়াবেটিস একবার হয়ে গেলে তা হয়ে যায় সারা জীবনের সঙ্গী। শিশু থেকে বৃদ্ধ যে কেউ এ রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। ডায়াবেটিসের কারণে হতে পারে হৃদ্রোগ ও স্ট্রোকের মতো গুরুতর রোগ।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব অনুযায়ী, বর্তমানে বিশ্বে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ৪২ কোটিরও বেশি।
শরীরে যখন ইনসুলিন তৈরি হতে পারে না অথবা এটা ঠিকমতো কাজ না করে তখনই ডায়াবেটিস হয়। এর ফলে রক্তের মধ্যে চিনি জমা হতে শুরু করে, যা শরীরের জন্য খুবই ক্ষতিকর। তাই যে করেই হাক রক্তে চিনির পরিমাণকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
তাই ডায়াবেটিক রোগীকে খাবার গ্রহণের বিষয়ে বিশেষভাবে সচেতন থাকতে হবে । রিডার্স ডাইজেস্ট পত্রিকা জানাচ্ছে ডায়াবেটিস রোগীর উপযুক্ত খাবারগুলো কী কী।
ব্রকোলি: এই সবজিটি ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য খুবই উপকারী একটি খাবার। ব্রকোলিতে রয়েছে সালফোরাফেন নামে একটি যৌগ, যা রক্তের শর্করাকে নিয়ন্ত্রণ করে এবং হৃদযন্ত্রের কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখে। এটি ভিটামিন সি এর আদর্শ একটি উৎস।
ব্লু বেরি: যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, যারা ১২ সপ্তাহের জন্য প্রতিদিন আড়াই কাপ ব্লু বেরির রস খেয়েছেন তাদের রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা উল্লেখযোগ্য পরিমাণে হ্রাস পেয়েছে। ব্লু বেরিতে রয়েছে অ্যান্থোসায়ানিন ফ্ল্যাভোনয়েড, যা ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমায়। ব্লু-বেরিকে প্রকৃতির সুপার ফুডও বলা হয়।
মাছ: মাছ হচ্ছে ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিডের চমৎকার উৎস যা ডায়াবেটিসের জন্য খুবই উপকারী। গবেষণায় দেখা গেছে, মাছের ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড ইনসুলিনের কার্যকারিতা বাড়ায় ও রক্তে কোলেস্টেরল কমায়। এতে চর্বিহীন প্রোটিন রয়েছে।
অলিভ অয়েল: অলিভ অয়েল বা জলপাইয়ের তেল শরীরে ইনসুলিনের মাত্রাকে নিয়ন্ত্রণ করে এবং কার্বোহাইড্রেট শোষণ করে। গবেষণায় দেখা গেছে, অলিভ অয়েলে স্বাস্থ্যকর ফ্যাট রয়েছে, যা শরীরের পক্ষে ভাল। নিয়মিত অলিভ অয়েল খেলে শরীরে শর্করার পরিমাণ কমে যায়।
মিষ্টি আলু: সাধারণ আলু ডায়াবেটিসের জন্য ভালো নয়। তবে মিষ্টি আলু ব্যাতিক্রম। এটি ইনসুলিনের কার্যকারিতা বাড়ায় ও রক্তের কোলেস্টেরল হ্রাস করে।
পালং শাক: পালং শাক ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমাতে দুর্দান্ত একটি খাবার। এতে ভিটামিন কে ছাড়াও রয়েছে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান যা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। পালং শাকে থাকা আলফা লিপোইক অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ইনসুলিনের কার্যকারিতা বাড়িয়ে দেয়।
আখরোট: ক্যালরির পরিমাণ বেশি থাকলেও আখরোট শরীরের ওজন বাড়ায় না। আখরোট শরীরে ইনসুলিনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। সপ্তাহে অন্তত দুই দিন নিয়মিতভাবে আখরোট খেলে টাইপ টু ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি একেবারে কমে আসবে।
দারুচিনি: বেশ কয়েকটি গবেষণায় দেখা গেছে যে এই সুস্বাদু মসলা রক্তে শর্করা হ্রাস করতে সহায়তা করে। ডায়াবেটিস কেয়ার জার্নালে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, টাইপ ২ ডায়াবেটিস আছে এমন ব্যক্তিদের মধ্যে যারা প্রতিদিন এক বা একাধিক গ্রাম দারুচিনি গ্রহণ করেছেন তাদের রক্তে শর্করার পরিমাণ, যারা দারুচিনি গ্রহণ করেননি, তাদের তুলনায় ৩০ শতাংশ বেশি হ্রাস পেয়েছে।
বেশ কিছু গবেষণায় জানা গেছে, দারুচিনি রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে অত্যন্ত কার্যকর। প্রতিদিন আধা চা চামচ দারুচিনি গুড়া ৪০ দিন খেলে কোলেস্টেরলের মাত্রা ১৮ শতাংশ ও রক্তে শর্করার মাত্রা ২৫ শতাংশ পর্যন্ত হ্রাস করে।
হলুদ: হলুদ প্রায় পাঁচ হাজার বছর ধরে সমগ্র ভারতীয় উপমহাদেশের স্বাস্থ্য রক্ষা করে আসছে। একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে নিয়মিত কাঁচা হলুদ খাওয়া শুরু করলে দেহের অভ্যন্তরে এমন কিছু উপাদানের মাত্রা বাড়তে শুরু করে, যার প্রভাবে ইনসুলিনের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাওয়ার সুযোগই পায় না।
ডায়াবেটিস রোগীদের তাই প্রতিদিন হলুদ খাওয়া উচিত। কাঁচা হলুদে থাকা কারকিউমিন যেকোনো ধরনের ক্ষত সারায়। ডায়াবেটিক রোগীদের ক্ষত যখন সারে না, তখন এক টুকরো কাঁচা হলুদ অনেক কাজ দেবে।