শেখ মাহতাব হোসেন :: ডুমুরিয়ায় নতুন করে আনারসের আবাদ হয়েছে। ফলনও ভাল হচ্ছে। খেতে সুস্বাদু পুষ্টিগুণে ভরা এ ফলটি চাষ করে চাষিরাও লাভবান। ক্রেতা ও পাইকার সবার কাছেই রয়েছে ডুমুরিয়ার এই আনারসের কদর।
এক সময় এ জেলায় তেমন একটা চাষ হতো না আনারসের। বর্তমানে ভালো ফলন ও লাভজনক হওয়ায় আগ্রহ বেড়েছে চাষিদের। ডুমুরিয়ার মাটিতে এ ফলটি বছরজুড়েই চাষ হচ্ছে। চাহিদা থাকায় দিন দিন চাষেরও পরিধি বাড়ছে।
খুলনা জেলার আটলিয়া ইউনিয়নের বরাতিয়ার আব্দুস সামাদ তার পতিত জমি আবাদ করে চাষিরা ক্যালেন্ডার ও জলঢুপি জাতের আনারস চাষ করছেন।
পরিদর্শনকালে দেখা গেছে, জেলার ডুমুরিয়া এলাকার পতিত জমিতে চাষ হয়েছে আনারসের। মন কেড়ে নেয় আবাদকৃত আনারসের ফলন। চাষ করেছেন এলাকার নিকটবর্তী বাসিন্দারা। আনারসের বাম্পার ফলনে মুখে হাসি ফুটেছে তাদের। চাষিরা মনে করছেন এবার আনারস বিক্রি করে তারা খুবই লাভবান হবেন। একজন চাষি জানালেন, এখানের আনারস বিষমুক্ত। কারণ, এর ফলনে কীটনাশকের প্রয়োগ হয়নি।
বিষমুক্ত বলে এখানের আনারসের কদর রয়েছে ক্রেতাদের কাছে। কয়েক বছর আগে থেকেই প্রচুর জমি পতিত পড়ে থাকত। এসব জমিতে কোন ফসল চাষ হতো না। দিন দিন লোক সংখ্যা বাড়ছে। তার সঙ্গে কর্মসংস্থানের প্রয়োজনে পতিত জমিতে আবাদ করে এখন পুরোদমে আনারসসহ নানা ধরণের ফসলের চাষ হচ্ছে।
আলাপকালে বাহুবল উপজেলার আনারস চাষি আব্দুস সামাদ বলেন, ‘বেকার ছিলাম। এখন আর বেকার নই। বছরজুড়ে আনারসসহ নানা ধরণের ফসল চাষ করে সৎপথে জীবিকা নির্বাহ করতে পারছি।
এখানের আরেক চাষি তপন মল্লিক বলেন, ‘অনেকে বার মাস আনারস চাষ করছেন। তবে আমরা এক মৌসুমই এ ফল চাষ করছি। কারণ সময়ের ফল সময়ে চাষ করলে কেমিক্যাল প্রয়োগ করতে হয় না।
তিনি বলেন, ‘আনারস পাকা শুরু হয়েছে। এবার আনারসের ভাল হয়েছে। আশা করছি ভাল দামও পাব।
চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এখানের দেশীয় উৎপাতে আনারস চাষে বেশ ঝুঁকি রয়েছে। আনারস পরিপক্ক হওয়ার আগেই দল বল এসে বাগানে ঢুকে ফলগুলো পাকা আনারস খেয়ে ফেলে।
ডুমুরিয়া বাজারে আনারস বিক্রেতা নাজমুল বলেন, ‘আমাদের এখানে দুই ধরনের আনারস পাওয়া যায়।
এরমধ্যে আকারে বড় ‘ক্যালেন্ডার’ ও আকারে ছোট গোলাকৃতির ‘জলঢুপি’। বৈশিষ্ট্যের দিক থেকে দু’টির স্বাদ আলাদা। রসালো জলঢুপি খেতে মিষ্টি।
ক্যালেন্ডারে মিষ্টির পরিমাণ কিছুটা কম। বঙ্গবন্ধু মেডিকেল হাসপাতালের ডা. তুহিন বলেন,‘মৌসুমী ফল আনারসের অনেক গুণ। আনারস পুষ্টির বেশ বড় একটি উৎস। আনারসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ এবং সি, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম ও ফসফরাস। এসব উপাদান আমাদের দেহের পুষ্টির অভাব পূরণে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। দেহে রক্ত জমাট বাঁধতে বাধা দেয় এই ফল।
ফলে শিরা-ধমনির (রক্তবাহী নালি) দেয়ালে রক্ত না জমার জন্য সারা শরীরে সঠিকভাবে রক্ত যেতে পারে। হৃদপিন্ড আমাদের শরীরে অক্সিজেনযুক্ত রক্ত সরবরাহ করে। আনারস রক্ত পরিষ্কার করে হৃদপিন্ডকে কাজ করতে সাহায্য করে।
খুলনা জেলার ডুমুরিয়া উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মোঃ ইনসাদ ইবনে আমিন ওরফে তুহিন বলেন, ‘বর্তমানে আনারসের কদর বেড়েছে। তাই দাম বেড়েছে কিছুটা। সাধারণত টিলা বা এমন এলাকায় আনারস চাষ হয়ে থাকে।
যে কারণে খুলনা জেলা ডুমুরিয়া উপজেলা বরাতিয়া এলাকায় আনারসের ভাল ফলন হচ্ছে। বর্তমানে এলাকার প্রায় ২একর জমিতে এ ফলটি চাষ হচ্ছে।