সব কিছু
facebook channelkhulna.tv
খুলনা রবিবার , ৫ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ১৯শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
ডুমুরিয়ায় এক ঘন্টার দুধের হাট বিক্রিয়‌ হয় লক্ষ লক্ষ টাকা | চ্যানেল খুলনা

ডুমুরিয়ায় এক ঘন্টার দুধের হাট বিক্রিয়‌ হয় লক্ষ লক্ষ টাকা

শেখ মাহতাব হোসেন:: খুলনা জেলার ডুমুরিয়া দুধের হাট ঘড়ির কাটায় সময় তখন সকাল ৬টা। কুয়াশার চাদরে চারদিক ঢাকা। রোদ ওঠতে অনেক দেরি। এরই মধ্যেই কনকনে শীতের মধ্যে দুধের বোতল নিয়ে হাজির ফয়েজ উদ্দিন, দুলাল, কামরুজ্জামানসহ শতাধিক দুধ বিক্রেতা। তাদের সকলের কাছে একেবারে দেশি গরুর খাঁটি দুধ। সারিবদ্ধভাবে বসে দুধের দাম হাঁকছেন আর ক্রেতারা এসে দুধ কিনছেন।

এ যেন দুধের হাট। প্রতিদিন ভোর হলেই কয়েক গ্রামের মানুষ তাদের বাড়িতে লালন পালন করা দেশীয় প্রজাতির গাভীর দুধ বিক্রি করতে সমেবেত হন এখানে। এতে দুধ বিক্রেতা আর ক্রেতাদের ভিড়ে মিলন মেলায় পরিণত হয় স্থানটি। বেলা উঠার আগেই তারা দুধ বিক্রি করে ট্যাকে করে টাকা নিয়ে ফিরে যান বাড়িতে। এটা শুধু একদিনের জন্য নয়। গত দুই দশক ধরে চলছে এইভাবে সম্মিলিত ও সারিবদ্ধভাবে দুধ বিক্রির প্রচলন। শুধু তাই নয়, দুধ বাজারকে ঘিরে একই সময়ে কাঁচা তরকারি, মাছ- মাংস, হাঁস- মুরগীসহ বিক্রি হয় নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র।

সরেজমিনে ডুমুরিয়া উপজেলার টিপনা গ্রামের স্বপন গ্রামে গিয়ে এমনই দৃশ্য দেখা যায়। খলনা শহর থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার পশ্চিমে ডুমুরিয়া উপজেলা সংলগ্ন ডুমুরিয়া বারো আনি বাজারে দুধের হাট বসে। এই হাটে বিভিন্ন এলাকা থেকে দুধ কিনতে আসেন ক্রেতারা। ক্রেতাদের বেশিরভাগই সাধারণ মানুষ। হাতে গোনা কয়েকজন আছেন ঘোষ। তারা প্রয়োজনীয় দুধ সংগ্রহ করে বাড়িতে তৈরি করেন দুধের ছানা এবং হরেক রকম মিষ্টি। এ হাটে সকাল ৬টা থেকে শুরু হয় দুধ বিক্রি, সাতটা বাজতে বাজতে শেষ হয়ে যায় বেচা-কেনা। অর্থাৎ রোদ ওঠার আগেই হাটের কেনা বেচা শেষ।

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান গাজী হুমায়ূন কবির বুলু (৭০) জানান, ১৯৬৪ সাল‌ থেকে দুধের হাটটি গড়ে ওঠে। এক সময় জমজমাট হাট বসতো এখানে। যোগাযোগের কোন রাস্তাঘাট না থাকায় নদী ও খাল দিয়ে নৌকায় করে মালামাল আনা নেওয়া হতো। ক্রেতা বিক্রেতাদের সমাগমে হাটটি খ্যাতি লাভ করে। পরবর্তীতে যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়ন হওয়ায় এবং যত্রতত্র বাজার গড়ে ওঠায় হাটের অবস্থা দুর্বল হয়ে যায়। এখন কোন মতে টিকে আছে হাটটি। তাও আবার দুধের ওপর নির্ভর করে।

স্থানীয়রা জানান, প্রতিদিন পারবিশা হাটে ১০০ থেকে ১৫০ জন দুধ বিক্রি করেন। প্রতিদিন ১০-১২ মণ দুধ বিক্রি হয়। বাড়িতে লালন পালন করা একেবারে দেশীয় জাতের গরুর খাঁটি দুধ। সকাল ৬ টা থেকে ৭টার মধ্যে দুধ কেনাবেচা শেষ হয়। এ নিয়ে এলাকায় বিশাল কর্মযজ্ঞ সৃষ্টি হয়েছে। এতে একদিকে স্থানীয়দের দুধের চাহিদা মিটছে, অপরদিকে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হচ্ছেন গাভী পালনকারিরা। বামুন্দিয়া গ্রামের হরেন্দ্র ৭৫) ও মহসিন (৫৫) জানান, তাদের ৬ টি গাভী রয়েছে। এদের মধ্যে ২টি গাভী দুধ দেয় প্রতিদিন ৩-৪ কেজি করে। যা নিম্নে ৪০ টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৬০
টাকা দরে বিক্রি করেন এই ডুমুরিয়া দুধের হাটে। একই গ্রামের আব্দুল ওয়াদুদ (৬৫) জানান, তার দুই গরুর দুধ হয়। ৪টি গরু আছে।

প্রতিদিন ৪-৫ কেজি করে দুধ বিক্রি করেন। বাড়ির পাশে দুধের হাট হওয়ায় তারা খুব সহজেই দুধ বিক্রি করেন। এখানকার দুধের চাহিদা রয়েছে অনেক। কারণ, এই এলাকার পালিত গাভীগুলো দেশীয় প্রজাতির এবং খড়, খৈল, ঘাসসহ স্বাভাবিক খাবার খায়। কোন প্রকার ক্ষতিকারক খাবার খাওয়ানো হয় না। এজন্য দুধের গুণাগুণ ভালো।

একই কথা জানালেন, দুধ বিক্রেতা দুলাল (৫০),সাইদুর রহমানসহ (৪৫) আরো অনেকে। প্রতিদিন দুধ কিনতে আসা শ্যামল দাস, শামসুজ্জামান সেন্টু, মেহেদী হাসান, সাইফুল ইসলাম জানান, ডুমুরিয়া দুধের হাটে বিক্রীত দুধ খাঁটি ও গুণেমানে ভালো।  কোন প্রকার ভেজাল বা পানি মেশানো থাকে না। এছাড়া অন্যান্য এলাকার তুলনায় এখানকার দুধের দাম অনেক কম। তাই তারা প্রতিদিন এখান থেকে দুধ কিনে নিয়ে যান।

ভান্ডার ইউনিয়নের তেলি খালী গ্রামের সন্তোষ ঘোষ জানান, ডুমুরিয়া হাট থেকে কেনা দুধে ছানা ভালো হয়। তাই গুণগত মানসম্পন্ন  মিষ্টিও তৈরি করা যায়। দেশীয় জাতের গরুর দুধের কারণে ছানার মান ভালো। তাই বিভিন্ন এলাকা থেকে  ঘোষেরা এসে এখান থেকে দুধ কিনে নিয়ে যান। স্থানীয় বিষু ঘোষ, কালু ঘোষও এখানে প্রতিদিন দুধ কিনতে আসেন। প্রায় সারা বছরই তারা এখান থেকে দুধের চাহিদা মেটান এবং ছানা প্রস্তুত করে বাজারজাত করে থাকেন।

ডুমুরিয়া সদর ইউনিয়নের খাজুরা গ্রামের নুরুল ইসলাম জানান, এই এলাকায় বিশেষ করে ডুমুরিয়া সহ বিভিন্ন গ্রামে প্রতিটি বাড়ি বাড়ি দেশীয় প্রজাতির গাভী পালন করা হয়। সারা বছর দুধ বিক্রি করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন অনেক মানুষ। দুধ বিক্রি করে ডুমুরিয়া সহ আশপাশের কয়েকটি গ্রামের অর্থনৈতিক চিত্র পাল্টে গেছে। অনেকে নির্ভরশীল হয়ে পড়েছেন এই দুধ বিক্রির ওপর। তিনি বলেন, গত ২০ ধরে ডুমুরিয়া  হাটে সকালে দুধ বিক্রী হয়। তবে ১০ বছর ধরে কেনা বেচা আরো জমজমাট হয়। তার মতে, গড়ে প্রতিদিন ১০-১২ মন দুধ আমদানি হয়। ১ হাজার ৬০০ থেকে ২ হাজার টাকা মণ দরে দুধ বিক্রি হয়। সে হিসেবে গড়ে ১ হাজার ৬০০ টাকা মণ দরে গড়ে ১০ মণ দুধের দাম দাঁড়ায় ১৬ হাজার টাকা। অর্থাৎ প্রতিদিন গড়ে ১৬ হাজার টাকার দুধ বিক্রি হয় এ হাটে। আর মাসে দুধ বিক্রি হয় ৪ লাখ টাকা থেকে ৫ লাখ টাকার। আর বছরে অন্তত ৫৭ থেকে ৬০ লাখ টাকার দুধ বিক্রি হয় এই ডুমুরিয়াখর্নিয়া হাটে। তবে এখানে কাউকে কোন প্রকার টোল বা খাজনা দিতে হয়, বলে জানান তিনি।

ডুমুরিয়া উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর  সূত্রে জানা যায়, ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে মোট দুধ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে প্রায় ২৫ হাজার টন। সেখানে প্রতি মাসে দুধ উৎপাদন হচ্ছে ২ হাজার ১৭০ টন। এ হিসেবে চলতি বছরে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে ৬৪ হাজার ৬৪২ দশমিক ২  টন দুধ পাওয়া যাবে আশা করা হচ্ছে। অর্থাৎ চলতি মাসে অর্জন ৫৪৬৩ দশমিক ০২ টন বেশি দুধ উৎপাদন হবে বলে ধারনা করা হচ্ছে।

ডুমুরিয়া উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মোঃ আশরাফুল কবির জানান, ডুমুরিয়া উপজেলায় রেজিস্ট্রেশনভুক্ত২হাজার‌ ১৩৫টি‌ ডুমুরিয়া  গ্রামের  ডেইরি ফার্মে  ৫০টি গরু, টিপনা গ্রামের শেখ নজরুল ইসলাম হাজির খামারে ১৮ টি গরু ও মির্জাপুর গ্রামের আবুল কালাম আজাদের খামারে গরুর রয়েছে ১২টি। তিনি বলেন, গরুর খামার লাভজনক হওয়ায় গরু লালন পালনে আগ্রহী হচ্ছেন অনেকেই। বিশেষ করে দেশীয় প্রজাতির গরুসহ উন্নত জাতের গরু লালন পালনে মানুষের আগ্রহ অনেক বেশি। এতে একদিকে গরু মোটাতাজাকরণ করার পর বাজারজাত করে লাভবান হচ্ছেন। দুধ বিক্রি করে
অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বীও হচ্ছেন তারা। তিনি বলেন, গবাদি পশুর রোগ বালাই থেকে রক্ষা করতে প্রাণিসম্পদ দপ্তর থেকে সার্বক্ষণিকভাবে চিকিৎসা প্রদানসহ ওষুধ সরবরাহ করা হয়ে থাকে। পাশাপাশি গবাদিপশুর লালন-পালনে সাধারণ মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে সার্বক্ষনিক পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

ডুমুরিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) শেখ নুরুল আলম জানান, ডুমুরিয়া হাটে দুধ বিক্রি করে এ অঞ্চলের খেটে খাওয়া মানুষগুলো অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হচ্ছেন এটা অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। পাশাপাশি তারা এলাকায় দুধের চাহিদাও মেটাচ্ছেন এবং অন্যান্য এলাকার তুলনায় সাশ্রয়ী মূল্যে দুধ পাচ্ছেন এখানকার মানুষ। তাই উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে গবাদি পশুর লালন-পালনে উৎসাহ প্রদান করা হবে।

https://channelkhulna.tv/

খুলনা আরও সংবাদ

অধিকতর অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের পিআইসির সভা অনুষ্ঠিত

খুবিতে ‘একুশ শতকের জন্য পদার্থবিজ্ঞান’ শীর্ষক জাতীয় সম্মেলন উদ্বোধন

ডুমুরিয়ায় তাল গাছ থেকে পড়ে এক মজুরের মৃত্যু

সাংবাদিক এম এ জলিলের বড় বোনের মৃত্যুতে খুলনা ক্রাইম রিপোর্টার্স এসোসিয়েশনের শোক

ইসরাইলের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রেরণের ব্যবস্থা করতে হবে : মাওঃ আব্দুল আউয়াল

পাইকগাছায় গাছ কাটতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পর্শে যুবকের মৃত্যু

চ্যানেল খুলনা মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন  
DMCA.com Protection Status
উপদেষ্টা সম্পাদক: এস এম নুর হাসান জনি
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: শেখ মশিউর রহমান
It’s An Sister Concern of Channel Khulna Media
© ২০১৮ - ২০২২ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত | চ্যানেল খুলনা.বাংলা, channelkhulna.com, channelkhulna.com.bd
যোগাযোগঃ কেডিএ এপ্রোচ রোড (টেক্সটাইল মিল মোড়), নিউ মার্কেট, খুলনা।
ঢাকা অফিসঃ ৬৬৪/এ, খিলগাও, ঢাকা-১২১৯।
ফোন- 09696-408030, 01704-408030, ই-মেইল: channelkhulnatv@gmail.com
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্তির জন্য আবেদিত।