ডুমুরিয়া (খুলনা) চলতি মৌসুমে আউশ ধানের ফলন ভালো হয়েছে। বিঘাপ্রতি ১৫ থেকে ১৬ মণ হারে ফলন পাচ্ছেন চাষিরা। তবে বাজারে মনমতো দাম পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ চাষিদের।
ডুমুরিয়া উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মোঃ ইনসাদ ইবনে আমিন বলেন, খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলায় চলতি মৌসুমে ৯০ হেক্টর জমিতে আউশ ধান আবাদ হয়েছে। কৃষকরা সবচেয়ে বেশ চাষ করেছেন ব্রি-৪৮ জাতের ধান। অন্য জাতগুলোর মধ্যে রয়েছে ব্রি-৯৮, বিনা-১৯, ডুমুরিয়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকার মাঠ ঘুরে দেখা যায়, চাষিরা ধান কাটা, মাড়াই ও বিক্রি করতে ব্যস্ত। তবে দাম ভালো পাওয়ায় খুশি চাষিরা। ধানের উৎপাদন খরচ ও পরিশ্রমের সঠিক মূল্য না পাওয়ায় ব্যাবসায়িক সিন্ডিকেটকে দায়ী করছেন তারা।
উপজেলার চহেড়া গ্রামের নফর উল্লাহ নামের এক ধান চাষি বলেন, ‘তিন মাস ফসলের পরিচর্চা করে, ৮ থেকে ৯ হাজার টাকা খরচ করে ফসল উৎপাদন করে যদি ৩-৪ হাজার টাকা লাভ হয়, তাহলে ধান উৎপাদন করে কী লাভ। এ লাভ দিয়ে আমাদের মতো চাষিদের সংসার চলবে কী করে?’
মিকশিমিল গ্রামের ধান চাষী রেহানা বেগম বলেন, ৫০ শতাংশ জমিতে বিনা জাতের ধানের আবাদ করেছিলাম। ধান কাটা ও মাড়াই করে ইতোমধ্যে ১৬ মণ ধান বিক্রি করেছি ৮০০ টাকা মণ দরে। যেখানে প্রতি বিঘায় সার, সেচ, ওষুধ, শ্রমিকসহ উৎপাদন খরচ হয়েছে ৯ হাজার টাকার মতো।
উল্লেখ্য বৃষ্টি নির্ভর আউশ ধানের ফলন ভালো হওয়া সম্ভবনা রয়েছে। সরকার কৃষকদের প্রণোদনা ও ভর্তুকি দেয়ায় উৎসাহী হয়েছেন। উচ্চ ফলন শীল( উফশী) জাতের ধান চাষে অধিক ফলন পাওয়া য়াবে। আউশ ধান প্রধানত বাংলাদেশে উৎপন্ন হয়। পরিবেশ ও কৃষি বান্ধব এই ধান। বর্ষাকালে এই ধানের চাষ করা হয়। এর অপর নাম আষাঢ়ী ধান। আশু শব্দের অর্থ থেকে আউশ শব্দের উৎপত্তি। আউশ শব্দের অর্থ আগাম। ৮০-১০০দিনের মধ্যে ধান পেকে যায় বলে এই নামে ডাকা হয়। দ্রূত (আশু) ফসল উৎপন্ন হওয়ার কারণে এই ধানের নাম করণ করা হয়। আউশ ধানের রং কালো। খাদ্য উৎপাদনে আউশ ধান বড় ভূমিকা পালন করে। ধান কাটা চলমান রয়েছে। ফলন বাম্পার হয়েছে। এ পর্যন্ত ৩০শতাংশ ধান কাটা হয়েছে।
আউশ ধানে প্রণোদনা পায়েছেন ১৭হাজার ৬০০ ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষক। ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় খরিপ ২০২৪-২৫ মৌসুমে উফশী ফসলের আবাদ ও উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষে বিনা মূল্যে প্রত্যেক কৃষক প্রতি বিঘা জমির জন্য ৫কেজি বীজ, ডিএপি ও এমওপি ১০ কেজি করে ২০কেজি সার পায়েছেন। কৃষকদের জন্য ১২০.১২০০০ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। কৃষকদের নগদ টাকার পরিবর্তে বীজ ও সার দেয়া হয়েছে।
সূত্র জানিয়েছেন, প্রণোদনার এসব আউশ বীজ দিয়ে কৃষক জেলায় আবাদ ও উৎপাদন বৃদ্ধি করবেন। উপজেলা পর্যায়ে বীজ ও সার প্রণোদনা কমিটি রয়েছে। কমিটির নির্দেশ মোতাবেক কৃষকের তালিকা করা হয়। তালিকা অনুযায়ী কৃষকদের মাঝে বীজ ও সার দেয়া হয়েছে। হাউব্রিড, উফশী ও স্থানীয় জাতের আউশ ধান আবাদ করা হয়েছে। এ বছর খুলনা কৃষি অঞ্চলের চার জেলায় ২০২৪-২৫ মৌসুমে ৩০০০০হেক্টর জমিতে আউশ ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। আবাদ করা হয়েছে ২৬২৮৭ হেক্টর।আবাদ কম হয়েছে ৩৭১৩ হেক্টর। এই মৌসুমে ৭৯৪৩৮ মেট্রিকটন চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়।
জমির মধ্যে খুলনা জেলায় আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫৬০০ হেক্টর। আবাদ করা হয়েছে ৫১৮৫ হেক্টর। চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ১২৪৯ মেট্রিকটন। খরিফ-১মৌসুমে আবাদ করা হয় আউশ ধানের। আউশে সেচের প্রয়োজন হয়না। স্থানীয় জাতের আউশ ধান জলবাযু মোকাবেলা করতে পারে। সেচ নির্ভর বোরো আবাদ কমিয়ে বৃষ্টি নির্ভর আউশ ধান আবাদ বাড়ানো যেতে পারে।
কৃষি সম্প্রষারণ অধিদপ্তর খুলনা অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক দিভাষ চন্দ্র সাহা বলেন, বীজ তলা তৈরীর সময় একটু বৃষ্টি কম হওয়ায় আবাদ একটু কম হয়েছে । আউশ ধান বৃষ্টি নির্ভর। এ বছর আউশ আবাদ কম হলেও উৎপাদন ভালো হয়েছে। এখন আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় আশা করা যাচ্ছে কাঙ্খিত ফলন হবে এবং চাল উৎপাদনে লক্ষ্যমাত্র পূরণ হবে।