শেখ মাহতাব হোসেন :: খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলা কাকড়া চাষী ও ব্যবসায়ীদের মুখে হাসি ফুটেছে। করোনা ভাইরাসের সংক্রমনের কারণে দির্ঘ ২বছর কাঁকড়া রপ্তানি বন্ধ থাকার পর আবার রপ্তানি শুরু হয়েছে।
চীনের দেওয়া বেশকিছু শর্ত পূরণের পর ২ জুন থেকে নতুন করে রপ্তানি চলছে বলে মৎস্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়। নতুন করে পাঁচটি প্রতিষ্ঠানকে চীন তালিকাভুক্ত করেছে।
এর মধ্যে কাঁকড়া ও কুচিয়ার ৩৪টি চালান চীনে পাঠানো হয়েছে। রপ্তানি করা কাঁকড়া ও কুচিয়ায় সীসা ও ক্যাডমিয়াম ধরা পড়ার পর ২০২০ সালের জুনে চীন কিছু শর্ত আরোপ করে। তখন মৎস্য অধিদপ্তরের ল্যাবরেটরি থেকে পরীক্ষা করে সার্টিফিকেট ইস্যু করার মাধ্যমে রপ্তানি সচল করা হয়। পরে সেপ্টেম্বরে এক রপ্তানিকারক জাল সার্টিফিকেট দিয়ে ধরা পড়ার পর রপ্তানি আবার বন্ধ হয়। প্রতারক প্রতিষ্ঠান বিএম ট্রেডার্সকে এজন্য কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।
চীনের সব শর্ত পূরণ করে নতুন করে রপ্তানি শুরু হয়েছে বলে সূত্র নিশ্চিত করে। ঢাকার সাভার, চট্টগ্রাম ও খুলনায় মৎস্য অধিদপ্তরের তিনটি ল্যাবরেটরিতে নতুন প্রযুক্তির স্থাপনের মাধ্যমে ১২/১৩টি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর এখন রপ্তানির সার্টিফিকেট দেওয়া হচ্ছে। আগে চীনের এ ধরনের টেস্ট রিকোয়ারমেন্ট ছিল না। যার ফলে কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষার ছাড়াই যে কেউ চায়নায় কাঁকড়া কুচিয়া রপ্তানি করতে পারতেন। তাদের নতুন শর্ত অনুযায়ী, ইংরেজি ও চীনা ভাষায় এখন সার্টিফিকেট দিতে হচ্ছে। ২০২০ সালের শুরুতে কভিড-১৯ মহামারীর শুরুর দিকেই চীনে কাঁকড়া রপ্তানির বাজারে ধস নামে।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) হিসাবে, ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে প্রায় ৩৫ মিলিয়ন ডলারের কাঁকড়া রপ্তানি হলেও পরের বছর ২০২০-২০২১ অর্থবছরে তা ১২ মিলিয়ন ডলারে নেমে আসে।
হংকং, মিয়ানমার, ভিয়েতনাম, জাপান, মালয়েশিয়াসহ আরও কিছু দেশে কাঁকড়া রপ্তানি হলেও মূল বাজার চীন।
চীনের বাজার বন্ধ হয়ে যাওয়ার প্রভাবে সামগ্রিক রপ্তানি ৫০ শতাংশ কমে যায়।
বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফিশ এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট এস হুমায়ুন করিব জানান, মূলত দুই কারণে গত বছর কাঁকড়া রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছিল চীন। দেশটি কিছু ল্যাবরেটরি টেস্টের প্রতিবেদন চেয়েছিল। তখন ওইসব টেস্টের ল্যাব বাংলাদেশে ছিল না। দ্বিতীয়ত কিছু ‘অসাধু ব্যবসায়ী’ জাল সার্টিফিকেট তৈরি করে রপ্তানি করতে গিয়ে ধরা পড়েছিল।
এদিকে রপ্তানি বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর বাংলাদেশের সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, খুলনাসহ কাঁকড়া চাষের জন্য উপযুক্ত অঞ্চগুলোতে খামারিরা ব্যাপক লোকসানের মধ্যে পড়েন। ইতোমধ্যেই অনেকেই এই চাষাবাদ থেকে হাত গুটিয়ে নিয়েছেন।
ডুমুরিয়া থেকে কাঁকড়া সংগ্রহ করে ঢাকায় রপ্তানিকারকদের কাছে বিক্রি করতেন বাবলুর রহমান চীনের বাজার বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর বাজার পড়ে গেছে বলে জানান তিনি। তিনি বলেন আগে ৫০০ গ্রাম ওজনের প্রতি কেজি কাঁকড়া ৭০০ টাকা থেকে ৮০০ টাকায় কেনাবেচা হত। এখন সেটা ৫৫০ টাকায় নেমে এসেছে। কাঁকড়া সংগ্রহ ও চাষাবাদেও ভাটা পড়েছে।
এদিকে নতুনভাবে কাঁকড়া ও কুচিয়া রপ্তানি শুরু হওয়ায় ডুমুরিয়ার কাঁকড়া কুঁচিয়া চাষিরা আবার নতুন ভাবে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন। গত বছর প্রায় সকল চাষি যেখানে কাঁকড়া কুঁচিয়া চাষ বন্ধ করে দিয়েছিলেন সেখানে এবার তারা সকলেই পুনরায় কাঁকড়া চাষ শুরু করেছেন। ডুমুরিয়ার শোলগাতিয়ার কাঁকড়া চাষি আরিফ বলেন “উপজেলা মৎস্য দপ্তরের পরামর্শে আমরা আবার কাঁকড়া চাষ শুরু করেছি। অফিস থেকে আমাদের খামার প্রস্তুতি ও কাঁকড়া মোটাতাজাকরনের যাবতীয় পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে। অফিস থেকে বলেছেন কাঁকড়া রপ্তানি শুরু হয়েছে। এ বছর থেকে ভালো দাম পাওয়া যাবে।”
সিনিয়র উপজেলা মৎস্য অফিসার মো. আবুবকর সিদ্দিক বলেন ডুমুরিয়ায় উপজেলায় চলতি বছর ১৯.৫০ হেক্টরের ২২০ টি খামারে কাঁকড়া ও ৫০ টি খামারে কুঁচিয়া চাষ হচ্ছে। কাঁকড়া ও কুঁচিয়া চাষে রোগবালাইয়ের ঝুঁকি কম। এ জন্য চাষিরা কাঁকড়া কুঁচিয়া চাষে বেশি লাভবান হন।
মৎস্য অধিদপ্তর খুলনা বিভাগের উপপরিচালক মো. আবু ছাইদ বলেন “ডুমুরিয়ার খামার ও জলবায়ু কাঁকড়া কুঁচিয়া চাষের জন্য উপযুক্ত। চীনের চাহিদা অনুযায়ী আমরা সার্টিফিকেট প্রদান করে কাঁকড়া কুঁচিয়া রপ্তানির ব্যবস্থা করছি। আশা করি কাঁকড়া কুঁচিয়া চাষিরা এবার ভালো দাম পাবেন।”
উল্লেখ্য, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ডুমুরিয়া উপজেলায় ৭৮.৪ মে. টন কাঁকড়া উৎপাদিত হলেও করোনার কারনে ২০২০-২১ অর্থবছরে তা ৪৫.৫ মে.টনে নেমে আসে।