শেখ মাহতাব হোসেন:: খুলনা জেলার ডুমুরিয়া উপজেলা ১৪টি ইউনিয়নে বিস্তৃত মাঠ জুড়ে সবজির খেতে পুরুষ শ্রমিকের পাশাপাশি তপ্ত রোদে কাজ করছে নারী শ্রমিকরা। এই সবজির খেতে কাজ করেই নারী শ্রমিকদের পরিবারে এসেছে আর্থিক সচ্ছলতা। নারীরা এখন আর কোনো কাজেই পিছিয়ে নেই। পুরুষের পাশাপাশি কৃষি কাজেও নারীর অংশগ্রহণ দিন দিন বেড়েই চলেছে। ঘরের কাজের পাশাপাশি কৃষি কাজেও পুরুষের সঙ্গে সমান তালে কাজ করছেন নারী শ্রমিকরা। এক সময় গ্রামীণ জনপদে শুধু পুরুষরাই মাঠে কৃষি কাজ করতেন। নারীরা রান্নাবান্না আর সন্তান লালন- পালন নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন। বর্তমানে সেই চিত্র অনেকটাই পালটে গেছে।
সম্প্রতি ডুমুরিয়া উপজেলার খর্নিয়া ইউনিয়নের টিপনা গিয়ে দেখা যায়, মাঠের পর মাঠ কৃষকদের পাশাপাশি কৃষানিরা সবজির বীজ রোপণ করছেন। তপ্ত রৌদ আর দাবদাহের মধ্যেও কৃষানিদের মুখে ঝরছে খুশির ঝিলিক। সারা দিন তরমুজ খেতে বীজ রোপণ করে এক একজন কৃষানি ৩৫০ টাকা থেকে ৪০০ টাকা হাতে নিয়ে বাড়ি ফিরছেন। এই ধান খেতে কাজ করেই তাদের পরিবারে এসেছে আর্থিক সচ্ছলতা।
কৃষানি তাসলিমা বেগম বলেন, আজ থেকে কয়েক বছর আগেও আমার সংসারে খুব অভাব ছিল। শুধু স্বামীর আয়ে সংসার ভালোভাবে চলত না। অনেক দিন দুই বেলা খেতেও পারতাম না। এক ছেলে আর দুই মেয়েকে নিয়ে খুব কষ্টে কেটেছে। তিনি বলেন, খেতে কাজ করে প্রতি ঘণ্টায় ৪০ টাকা করে পাই। দিনে পরিবারে ফিরছে সচ্ছলতা।
কৃষানি আয়শা খানম বলেন, তরমুজ খেতে কাজ করে প্রতি ঘণ্টায় ৪০ টাকা করে পাই। দিনে ছয়-সাত ঘণ্টা কাজ করে প্রতিদিন ৩৫০ টাকা আয় হয়। এখন আর টাকার জন্য স্বামীর কাছে হাত পাততে হয় না। টাকা আয় করতে পারি বলে সংসারে আমার কথার গুরুত্বও বেড়েছে ছয়-সাত ঘণ্টা কাজ করে প্রতিদিন ৩৫০ টাকা আয় হয়। এখন আর টাকার জন্য স্বামীর কাছে হাত পাততে হয় না। টাকা আয় করতে পারি বলে সংসারে আমার কথার গুরুত্বও বেড়েছে।
কৃষানি নাছিমা বেগম জানান, এখন ধান ক্ষেতে কাজ করি, ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল এই তিন মাস তরমুজের খেতে কাজ করবেন। প্রতি ঘণ্টায় তিনি ৪০ টাকা করে পান। প্রতিদিন ছয় ঘণ্টা কাজ করে ৩০০- ৩৫০ টাকা আয় করেন। তিনি বলেন, স্বামীর আয় আর তার আয় দিয়ে তাদের সংসার ভালোভাবেই চলে যাচ্ছে।
কৃষানি কল্যাণী আয়শা বেগম বলেন, তিনি প্রতিদিন সাত থেকে ৯ ঘণ্টা সবজির খেতে কাজ করেন। কাজ শেষে ঘণ্টাপ্রতি ৬০ টাকা করে মজুরি নিয়ে বাড়ি ফেরেন। তিনি বলেন, তারা সংসারে মোট ছয় জন। এর মধ্যে তিন জন প্রতিদিন তরমুজ খেতে কাজ করেন। ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল এই তিন মাস তাদের সংসারে খুব একটা অভাব থাকে না।
সবজির খেতের মালিক মো. শহীদ গাজী বলেন, তারা এবার ২৫ বিঘা জমিতে তরমুজ চাষ করেছেন। তাদের তরমুজ খেতে পুরুষ শ্রমিকের পাশাপাশি নারী শ্রমিকরাও কাজ করছেন। তিনি বলেন, নারী শ্রমিকরা কাজে ফাঁকি দেয় না। কাজ ফেলে তারা গল্পগুজবও করে না। দিন শেষে একেক জন নারী শ্রমিকরা ৩০০- ৪০০ টাকা নিয়েও বাড়ি যায়।
খর্নিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শেখ দিদার হোসেন বলেন, খর্নিয়া ইউনিয়নের কম- বেশি প্রায় সব বাড়ির নারীরাই ধান ওসবজির খেতে কাজ করেন। তারা একেক জন প্রতিদিন ৩০০-৪০০ টাকা আয় করেন। এ আয়ে তাদের সংসার খুব ভালোভাবেই চলে যাচ্ছে। নারীরা আয় করতে পারছে বলে সংসারে তাদের গুরুত্বও বেড়েছে।
ডুমুরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোঃ ইনসাদ ইবনে আমিন বলেন, এ বছর ডুমুরিয়া উপজেলায় ১৫ হাজার ৬০৫ হেক্টর জমিতে তরমুজের চাষ হয়েছে। একেকটি খেতে গড়ে পাঁচ জন নারী শ্রমিক কাজ করছেন। এ হিসাবে ডুমুরিয়াসহ উপজেলায় ২০ হাজারের বেশি নারী শ্রমিক ধান সবজির, তরমুজ চাষের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন। তিনি বলেন, নারীদের আয়ের কারণে তাদের সংসারে আর্থিক সচ্ছলতা এসেছে।