শেখ মাহতাব হোসেন, ডুমুরিয়া (খুলনা) প্রতিনিধি::
খুলনার ডুমুরিয়ার এক সময়কার খর স্রোতা শোলমারী নদী পলিতে ভরাট হয়ে সমতল ভুমিতে পরিণত হয়েছে। নদীর দুইপার জুড়ে জেগে উঠেছে বিশাল চর। জোয়ারে ডুবে আর ভাটায় ভাসে। ভাটায় নদীর বুক দিয়ে হেটে পারাপার হয় দু’পারের মানুষ। নদী সিলটেড হওয়ায় স্থায়ী জলাবদ্ধতার হুমকীতে পড়তে যাচ্ছে খুলনা নগরীসহ যশোরের ভবদহ, খুলনার ডুমুরিয়া, রংপুর, গুটুদিয়া, রঘুনাথপুর, ভান্ডারপাড়া, বটিয়াঘাটার জলমা ইউনিয়নের বিলাঞ্চলসহ অন্তত অর্ধশত গ্রাম। দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তর বিলডাকাতিয়ার পানি নিষ্কাশনের একমাত্র পথ এই নদী।
জানা যায়, খুলনা শহরের কোল দিয়ে বয়ে গেছে ভৈরব ও রূপসা নদী। শহরের দক্ষিনে বটিয়াঘাটা সদরের পাশদিয়ে কাজীবাছা নদী পশুর নদীর সঙ্গে মিশে সুন্দরবনে মিলেছে। কাজীবাছা নদী শোলমারী হয়ে সালতার সাথে মিশে ভদ্রা নদী হলে শিপসা হয়ে সুন্দরবনে মিলেছে। এক যুগ আগেও প্রায় ১’শ হাত গভিরতা ছিলো এ নদীর। বটিয়াঘাটা বাজার এলাকা থেকে বারোআড়িয়া পর্যন্ত প্রায় ২৫ কিলোমিটার পর্যন্ত নদীর নাব্যতা একেবারই হারিয়ে গেছে। বটিয়াঘাটা, শোলমারি, শরাফপুরসহ বেশ কয়েকটা জায়গায় প্রায় সমতয় ভ‚মিতে পরিণত হয়েছে। পলি ভরাট হয়ে শোলমারি ১০ ভেন্টের সুইজ গেট এবং রামদিয় ৯ ভেন্টের সুইজ গেটের কপাট আটকে পড়েছে।
গত দুই সপ্তাহ যাবত শোলমারী গেটের মুখে পলি অপসারণ কাজ করছেন এলাকার জনগণ। বিলে অনেক বোরো ক্ষেতে এখনো ১ ফুট পানি রয়েছে। এবার ধান ঘরে তুলতে কৃষকের প্রায় দ্বিগুন টাকা শ্রমিকের পেছনে গুনতে হচ্ছে। নদী সিলটেড হওয়ায় ভিতরের জমি ছাড়া অন্তত ১০/১২ ফুট উঁচু হয়ে গেছে নদীর বুক। ফলে স্থায়ী জলাবদ্ধতার কবলে পড়তে যাচ্ছে পাউবো’র ২৭ ও ২৮ নম্বর পোল্ডার আওতায় হাজার হাজার হেক্টর জমি। এদিকে নদীর নাব্যতা ফেরাতে জোয়ার-ভাটার বিকল্প কিছুই মনে করছেন না সুধিজনেরা।
এ বিষয়ে ব্যবসায়ী শেখ ইকরামুল কবির বলেন, এই নদীটির দুই দিকে জয়েন্ট। একদিকে শিবসা আর একদিকে কাজীবাছা নদী। এ নদীর সাথে শোলমারী, সালতাসহ বড় বড় নদী ও অনেকগুলো খাল-জলাশয় ছিলো। কিন্তু নদীর মুখগুলোতে সুইজ গেট করে দেয়া হয়। এরপর আস্তে আস্তে নদীর স্রোত বিমুখ হয়ে যায়। দুই দিক দিয়ে জোয়ার আসার পর থমথম হলে পলি নিচে পড়ে ভাটায় পরিস্কার পানি বের হয়। ফলে দ্রুত পলিতে ভরাট হয়ে গেছে নদীটি। নদীর নাব্যতা ফেরাতে হলে স্রোত মুখর করতে হবে। সেক্ষেত্রে ¯সুইজ গেট দিয়ে পানি উঠা-নামা করা একান্ত জরুরী বলে তিনি মনে করেন।
এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুর রহমান তাজকিয়া বলেন, ‘নদীটি অনেক বড়, এটি খনন করতে অনেক টাকার প্রয়োজন। সেক্ষেত্রে বর্ষা মৌসুমের আগে গেটের কপাট ও মুখের পলি অপসারণ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তবে টিআরএম বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা এডিপি প্রকল্প ছাড়া সম্ভব না। এটা হওয়া অনেক জটিলতা রয়েছে।’
সাবেক মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী নারায়ন চন্দ্র চন্দ এমপি বলেন, ‘নদীটিতে দুই দিকের পানি এসে থিতে যেয়ে দ্রুত সময়য়ের মধ্যে ভরাট হয়ে গেছে। স্রোতের ব্যবস্থা ছাড়া এ নদী বাঁচানো সম্ভব নয়। তবে যেটা হোক দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে জলাবদ্ধতার কবলে পড়বে এই অঞ্চল। শুধু ডুমুরিয়া তা কিন্তু না। জলাবদ্ধতায় পড়বে যশোরের ভবদহ ও খুলনা মহানগরের একটি অংশ।
তিনি বলেছেন, সরকারের যত উন্নয়ন তা পানিতে তলিয়ে এক নিমিষেই শেষ হয়ে যাবে। তবে স্থায়ী সমাধানে কৃত্রিম স্রোত বা টিআরএম যেটাই হোক দ্রুত করতে হবে।’
এদিকে ভৈরব নদী ও রূপসা নদীর সাথে মিশে আছে খুলনার প্রাণ। প্রচন্ড খরস্রোতার নদী দুইটিও বর্তমানে নাব্যতা হারিয়েছে। যে কারণে শেষ ভাটায় ছাড়া শহরের পানি আর নামছে না। তবে খুলনা মহানগরের পানি নিষ্কাশনে মাস্টার প্লানে কাজ চলছে। ৮’শ কোটি টাকায় ময়ুর নদীসহ ২২টি খাল পুনঃখননের টেন্ডার কাজ চলমান রয়েছে বলে সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক জানিয়েছেন।
তিনি বলেছেন, ‘বর্তমানে ভৈরব ও রূপসা নদীতেও পলি পড়ে ভরাট হয়েছে। শেষ ভাটায় ছাড়া শহরের পানি নামছে না। এ নদী মারা গেলে খুলনা নগরী জলাবদ্ধতায় রূপ নেবে নিশ্চিত।’