শেখ মাহতাব হোসেন :: ডুমুরিয়ায় বাণিজ্যিক ভাবে বারোমাসি শজনের চাষ করছেন নবদ্বীপ মল্লিক। এ জাত প্রায় সারা বছরই ফলন দেবে।
ডুমুরিয়া উপজেলার বরাতিয়া গ্রামের রাষ্ট্রীয় পুরস্কার প্রাপ্ত চাষী এবার তিনি ৩৩ শতাংশ জমিতে বাণিজ্যিক ভাবে বারোমাসি শজনের চাষ করছেন ।
তিনি জানান এবার প্রথম আমি এক বিঘা জমিতে বারো মাসি সজিনার চাষ করে লাভবান হবো , এখন প্রতি সপ্তাহে ১/২মন করে বাজারজাত করছি, আগামী আরো বাড়বে,প্রতি মন বাজারে বিক্রিয় করছি ৫/৬ হাজার টাকা এতে করে আমি সজিনার চাষ করে লাভবান হবো। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট নতুন একটি শজনের জাত উদ্ভাবন করেছে। এর নাম বারি শজনে- বারোমাসি এই শজনের জাত প্রায় সারা বছরই ফলন দেবে। এটি সম্প্রতি জাতীয় বীজ বোর্ড থেকে অনুমোদন পেয়ে মাঠপর্যায়ে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।
নতুন এই শজনের বিশেষত্ব হচ্ছে, এটি প্রায় সারা বছর ফল ধারণক্ষমতাসম্পন্ন বাংলাদেশের প্রথম শজনের জাত। বাছাইপ্রক্রিয়ার মাধ্যমে এ জাতটি অবমুক্ত করা হয়। দেশে শজনের অত্যধিক চাহিদা আছে এবং বছরব্যাপী এই জাত ফল ধারণে সক্ষম হওয়ায় বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদের পর্যাপ্ত সুযোগ রয়েছে।
বারি শজনে-১ গাছে জানুয়ারি থেকে ফুল আসা শুরু হয় এবং অক্টোবর পর্যন্ত ক্রমাগত ফুল আসে। ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি ছাড়া বছরের প্রায় সময়েই গাছে ফুল বা ফল পাওয়া যায়। বারি শজনে-১ জাতের শজনেগাছে বছরে তিন থেকে ছয়বার ফল ধরে। গাছটির পাতা যৌগিক, ছোট, পত্রকগুলো উপবৃত্তকার বা ডিম্বাকার। ফল লম্বা এবং সবুজ বর্ণের, বীজ ত্রিকোণী ও ডানাবিশিষ্ট। ফল পাকলে ফেটে বীজ ছড়িয়ে পড়ে। প্রতি ফলের গড় ওজন ৩০ গ্রাম, ফল দেখতে হালকা সবুজ বর্ণের। ফল সাধারণত একক
এবং গুচ্ছাকারে ধরে। পাঁচ বছর বয়সী প্রতিটি গাছে গড় ফলের সংখ্যা ১ হাজার ৪৫০টি এবং ফলন গাছপ্রতি বছরে ৪৫ কেজি।
শজনে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলের একটি উদ্ভিদ, তবে উষ্ণ অঞ্চলেও জন্মে। প্রায় সব ধরনের মাটিতে শজনে চাষ করা যায়। তবে উঁচু ও সুনিষ্কাশিত বেলে দোআঁশ থেকে দোআঁশ মাটি শজনে চাষের জন্য উত্তম। শজনে নিরপেক্ষ থেকে হালকা অম্লীয় মাটিতে ভালো হয়। এটি পাহাড়ি এলাকাসহ বাংলাদেশের সর্বত্র চাষযোগ্য। শজনেগাছ রৌদ্রোজ্জ্বল পরিবেশে ভালো জন্মে, কিন্তু জলাবদ্ধতা সহ্য করতে পারে না। বীজ বা কলমের মাধ্যমে (শাখা কলম, দাবা কলম, গ্রাফটিং) শজনের বংশ বিস্তার করা হয়।
বারি শজনে-১–এর জন্য ভালোভাবে চাষ, মই দিয়ে জমি সমতল ও আগাছামুক্ত করে নিতে হবে। চারা রোপণের জন্য বর্গাকার বা আয়তাকার পদ্ধতি ব্যবহার করা যেতে পারে। চারা রোপণের জন্য ৮০ বাই ৮০ বাই ৮০ সেন্টিমিটার গর্ত করে ৫ কেজি জৈব সার, ২০০ গ্রাম ইউরিয়া, ২৫০ গ্রাম টিএসপি, ১৫০ গ্রাম এমওপি এবং ২৫ গ্রাম বরিক অ্যাসিড সার প্রতিটি গর্তে প্রয়োগ করতে হবে। ফাল্গুন- জ্যৈষ্ঠ মাস (মার্চ-মে) চারা লাগানোর উপযুক্ত সময়।
শজনেগাছে বছরে তিনবার সার প্রয়োগ করা উচিত। গাছ বৃদ্ধির সঙ্গে সারের পরিমাণ বৃদ্ধি করতে হবে। জৈব ও অজৈব সার গাছের গোড়া থেকে এক মিটার দূরে প্রয়োগ করে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিতে হবে। সার ৩ ভাগে এবং ৩ কিস্তিতে প্রয়োগ করতে হবে। প্রথম কিস্তি বর্ষার শুরুতে (মে-জুন), দ্বিতীয় কিস্তি বর্ষার শেষে (সেপ্টেম্বর-অক্টোবর) এবং তৃতীয় কিস্তি ফেব্রুয়ারি মাসে।
গাছের গোড়া সব সময় আগাছামুক্ত রাখতে হবে। এক–দুই বছর পর্যন্ত গাছে কোনো ফল না রাখাই উত্তম। তাই এ সময়ে ফুল ধারণ করলেও ফুল ফেলে দেওয়া হলে গাছের বৃদ্ধি ভালো হয়। গাছের উচ্চতা ৩ ফুট না হওয়া পর্যন্ত ডাল ছাঁটাই করা উত্তম। মরা, রোগ-পোকা আক্রান্ত ডাল ছাঁটাই করতে হবে। শজনের এই জাতে প্রায় সারা বছরই ফল উৎপন্ন হয়, তবে ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাসে খুবই কম ফল হয়। বছরে প্রায় তিন থেকে ছয়বার (এপ্রিল- নভেম্বর) ফল সংগ্রহ করা যায়। ডুমুরিয়া উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মোঃ ইনসাদ ইবনে আমিন ওরফে তুহিন জানান, শজনে একটি জনপ্রিয় এবং পুষ্টিকর সবজি। দেশের প্রায় সব জায়গায় শজনের চাষাবাদ হয়। শজনের পাতা, ফুল ও অপরিপক্ব ফল সবজি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। শজনে ভিটামিন এ, ভিটামিন সি এবং খনিজ পদার্থ যেমন ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ও আয়রনসমৃদ্ধ সবজি।