শেখ মাহতাব হোসেন:: খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার টিপনা গ্রামের শিক্ষক শেখ জাহিদুর রহমান, ২০ শতাংশ বরাতিয়া গ্রামের ইসলাম বিশ্বাস ২০ শতক, মাহাবুবুর বিশ্বাস ১৪ শতক, মেহেদী হাসান ১০ শতক, আজিজুর মোড়ল ১০ শতক। এমন আরো অনেকে পতিত জমিতে বিনা চাষে রিলে পদ্ধতিতে সরিষা আবাদসহ মোট সাড়ে ৩হেক্টর পতিত জমিতে বিলে চাষের মধ্য দিয়ে এ উপজেলায় রিলে চাষে নতুন সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
বিলে চাষ হচ্ছে যখন একটি জমিতে একটি ফসল সংগ্রহের পর পরই আরেকটি ফসলের বীজ বুনে বছরে দুই বা ততোধিক ফসল উৎপাদন করা যায়, তখন তাকে বলে পর্যায়ক্রমিক বা রিলে ফসল চাষ। দুই ফসলের জমিতে তিনটি ফসল চাষ করার অন্যতম উপায় এ রিলে পদ্ধতিতে চাষাবাদ। এ পদ্ধতিতে একটি ফসল জমিতে থাকাকালীন বিনা চাষে অন্য একটি ফসল রোগণ করা হয়। যার ফলে অর্থ ব্যয় ও পরিশ্রম অনেক কম হয়। রিলে পদ্ধতিতে যে ফসলগুলো আবাদ হয় তার মধ্যে অন্যতম হল ধানের সাথে সরিষার চাষ।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, রিলে পদ্ধতিতে চাষাবাদ এ উপজেলায় কৃষিতে নতুন সম্ভাবনার জায়গা তৈরি হয়েছে। ডুমুরিয়া উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা প্রকাশ মন্ডল জানান, এ পদ্ধতিতে একজন কৃষক সরিষার চাষ করে খরচ বাদে প্রতি হেক্টর জমিতে ৭০- ৮০ হাজার টাকা লাভবান হতে পারবে। ৭০ ৭৫ দিনের মধ্যে কৃষক তার ফসল ঘরে তুলতে পারবেন। এছাড়া আমন এবং এবং বোরো চাষের মাঝখানে যে সময়টুকু কৃষকের জমি খালি বা পতিত পড়ে আবাদ একটি ফসল উৎপাদনের মাধ্যমে কৃষকও অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবেন এবং দেশের ফসল উৎপাদনও বৃদ্ধি পাবে।
উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মো. ইনসাদ ইবনে আমিন বলেন, এ মৌসুমে আমন চাষ শেষ হয়ে রবি ফসলের কার্যক্রম চলছে। ডুমুরিয়া উপজেলায় এ বছর সাড়ে হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে এরমধ্যে সাড়ে ৩ শত হেক্টর জমিতে এ বছর সর্বপ্রথম রিলে চাষের মাধ্যমে আবাদ শুরু হয়েছে। আর এ উপজেলায় রিলে পদ্ধতিতে সরিষা আবাদের মধ্য দিয়ে একটা নতুন সম্ভাবনার জায়গা তৈরি হয়েছে। আমন মৌসুমে ধান আবাদের পরে যখন জমি পতিত থাকে তখন এ সময়টা আমরা কৃষকদের রিলে পদ্ধতিতে সরিষার চাষে উদ্বুদ্ধ করেছি। রিলে চাষের মাধ্যমে কৃষকরা এখন থেকে বছরে দুইটা ফসলের পরিবর্তে তিনটা ফসল পাবে। এই পদ্ধতি গ্রহণের মধ্য দিয়ে কৃষকরা আর্থিকভাবে লাভবান হবে। আমন মৌসুমে ৭৫ ও ৮৭ জাতের ধান যেগুলো স্বল্প জীবনকালীন সেই ধান কেটে নেওয়ার ১০ দিন আগে জমির রস বা জো থাকা অবস্থায় এ বছর কৃষকদের আমরা বিনামূল্যে বিন-৯ জাতের সরিষার বীজ দিয়েছি। সেগুলি কৃষকরা জমিতে ছিটিয়ে দেওয়ার পর ধানটা কেটে নেওয়ার পর সারা দেশের ন্যায় দেশের দক্ষিণ পশ্চিম উপকূলীয় এলাকায় ডুমুরিয়া উপজেলা জুড়ে এ বছর সরিষার ভালো ফলনে কৃষকের মুখে হাসি।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে এখন হলুদ রঙের সরিষা ফুলের সমারোহ। সরিষা আবাদের পাশেই মৌ চাষের প্রচলনও বেড়েছে। মাঠের পাশে বাক্স বসিয়ে মৌ চাষিরা মধুও সংগ্রহ করছেন। ফলে সরিষা চাষি ও মৌচাষি উভয়ই লাভবান হওয়ায় সরিষা চাষে কৃষকের আগ্রহ বেড়েছে। বাজার ফেরত ক্রেতাদের মতে দেশে তেল উৎপাদন বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। এছাড়া বাজারে কৃত্রিম সঙ্কট, ভোজ্যতেলের সিন্ডিকেটের কারণে যে নিয়ন্ত্রণহীন বাজার তাও নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে নিজের উৎপাদিত তেলে বাজার নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হলে।
ডুমুরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোঃ ইনসাদ ইবনে আমিন বলেন, বিনা চাষে উপজেলায় ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে সাড়ে ৩ শত হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ হচ্ছে। তিনি আরো জানান এবং চলতি মৌসুমে ডুমুরিয়া উপজেলায় ৪০০ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ হয়েছিল। তিনি বলেন, স্বল্প সময়ের মধ্যে কৃষক যেন অধিক ফলন পেতে পারে এ ব্যাপারে সার্বক্ষনিক কৃষকের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে উপজেলা কৃষি অফিস। আশা করছি এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে সরিষা চাষে বাম্পার ফলন পাবে চাষিরা।