শেখ মাহতাব হোসেন:: খুলনার ডুমুরিয়ায় পোকার মাধ্যমে ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছে হাজার হাজার শিরীষগাছ। উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নে লক্ষ লক্ষ শিরীষগাছ রয়েছে। এর মধ্যে গত এক মাসে প্রায় ৮০ হাজার গাছ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মরে গেছে। বাকি জীবিত গাছগুলোও শিগগির মরে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ মুহূর্তে রোগটিকে চিহ্নিত করে প্রতিকারের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন ডুমুরিয়া বাসী। জানা গেছে, এ শিরীষগাছগুলো শিশুগাছ নামে পরিচিত। আবার কেউ কেউ এগুলোকে রোড শিরীষ নামেও চেনেন।
খর্নিয়া ইউনিয়নের রানাই গ্রামের ইউনুছ আলী বলেন, ‘আমার বাগানে প্রায় ছোট-বড় ২০০ শিরীষগাছ রয়েছে। এগুলোর প্রায় ৬০ শতাংশ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। প্রথমে ভাইরাসগুলো গাছের ডালে সাদা সাদা দেখা যায়, পরে পোকার জন্ম নেয়। গাছগুলো
ভাইরাসে আক্রান্ত হলে ১৫ থেকে ২০ দিনের মধ্যে ডালের রস চুষে ফেলে এবং সব পাতা পড়ে গাছ শুকাতে শুরু করে। তিনি ইতিমধ্যে প্রায় ৪০টি গাছ অল্প দামে বিক্রি করে দিয়েছেন।
একই এলাকার রাজ আলী বিশ্বাস জানান, ‘আমার একটি গাছ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়। পরে এক সপ্তাহের মধ্যে আরও ১০টি গাছ আক্রান্ত হয়েছে। এভাবে জুলফিকার, রহমত ও রাজুর গাছ আক্রান্ত হয়েছে। কাঠ ব্যবসায়ী আমিরুল ইসলাম, আব্দুল কাদের
ও আজিবর রহমান জানান, উপজেলার শোভনা ,সাহস, মাগুরা ঘোনা,আটলিয়া গুটুদিয়া ইউনিয়ন থেকে ভাইরাসে আক্রান্ত শিরীষগাছ কিনে এখন বিক্রি করতে পারছি না। এসব ইউনিয়নে প্রায় ৮০ শতাংশ শিরীষগাছ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। এ গাছ কিনে বিক্রি না হওয়ায় বেশির ভাগ ব্যবসায়ীর লোকসান গুনতে হচ্ছে।
এদিকে ডুমুরিয়ার আশপাশের এলাকার নারী-পুরুষ-শিশু-কিশোরেরা প্রতিদিন ভোরে উঠেই বেরিয়ে পড়ছে শিরীষগাছের কথিত ভাইরাস পোকার সন্ধানে। স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কাছে প্রতি কেজি পোকা বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত। তবে এই পোকা কিনে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে, তা কেউ জানে না। শোনা যাচ্ছে, ওষুধ তৈরির জন্য এগুলো খুলনা ও ঢাকায় নেওয়া হচ্ছে।
ব্যবসার সঙ্গে জড়িতদের অনেকেই জানান, বিভিন্ন অঞ্চল থেকে কপিলমুনির নাছিরপুর, রেজাকপুর, কাজিমুছাসহ কয়েকটি স্পট থেকে এজেন্ট হিসেবে পোকা কিনে তাদের তত্ত্বাবধানে নির্দিষ্ট গন্তব্যে চালান পাঠাচ্ছে। প্রথমে পোকার দাম প্রতি কেজি ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হলেও ক্রমশ জোগান বেড়ে যাওয়ায় দাম কমেছে।
উপজেলার খর্নিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শেখ দিদার হোসেন বলেন, কয়েক দিন ধরে বিভিন্ন এলাকায় রোড শিরীষগাছের ভাইরাস সংক্রমিত ডাল কেনাবেচার কথা শুনছি। ভোরে উঠেই বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ বেরিয়ে পড়ছে শিরীষগাছের কথিত ভাইরাস পোকার সন্ধানে। এ ভাইরাস সংক্রমিত হলে শিরীষগাছের ডাল ও ধীরে ধীরে সংক্রমিত গাছটিই মারা যাচ্ছে। এ মুহূর্তে এ সংক্রমিত পোকার আক্রমণ ঠেকাতে না পারলে এক বছরের মধ্যে গোটা উপজেলার গাছ মারা যাবে এবং পরিবেশ মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়বে।
ডুমুরিয়া উপজেলা বন কর্মকর্তা বলেন, ‘শিরীষগাছে পোকার আক্রমণ প্রায় এক বছর ধরে চলছে। গত এক মাসে এটি মহামারি আকার ধারণ করেছে। এ সময়ে প্রায় ৮০ শতাংশ গাছ মারা গেছে, তা সঠিক। তবে আমরা এ রোগের ছত্রাক নিয়ে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠিয়েছিলাম, কিন্তু তারা কোনো ফলাফল আমাদের দেয়নি। তবে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।