ডুমুরিয়া বাজারে নিত্যপণ্য চাল, ডাল, ভোজ্য তেল, মাছ-মাংস, আটা-ময়দা, সবজিসহ সব ধরনের পণ্যের দাম দিন দিন নাগালের বাইরে যাচ্ছে। নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি ঠেকাতে চলছে ডুমুরিয়া উপজেলা প্রশাসনের নজরদারি ও অভিযান। কিন্তু এতে মিলছে না সুফল।
ভোক্তারা বলেছেন, রোজায় যেসব পণ্যের চাহিদা বেশি থাকে সেসব পণ্যের দাম অযথা বৃদ্ধি হয়। আর এখন বাজারের সব পণ্যের দামই ঊর্ধ্বমুখী। করোনা কারণে সাধারণ মানুষ এমনিতেই কষ্টে আছে।
খাদ্যপণ্যের ক্রমাগত দাম বৃদ্ধি তাদের কষ্ট আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
খুলনা শহরের বড়বাজার দৌলতপুর ও বৈকালী বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ১৫ দিন আগেও বড় দানার মসুর ডাল ছিল প্রতিকেজি ৮০ টাকা। এখন তা বিক্রি
হচ্ছে ১১০-১২০ টাকায়। খোলা সয়াবিনের দাম ছিলো ১২২-১২৪ টাকা। বর্তমানে তা বিক্রি হচ্ছে ১৫৫- ১৬০ টাকা। বোতলজাত সয়াবিন ১৩০- ১৩৫ টাকা থেকে বেড়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ১৮৫ টাকায়। একইভাবে চিনি ৬৫-৭০ থেকে বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৮০-৮৫ টাকায়। গুঁড়া দুধের দাম ছিলো প্রতিকেজি ৫০০- ৬৩০ টাকা। এখন একই মানের দুধের দাম ৬৯০-৭০০ টাকা।
ব্রয়লার মুরগি ১১০-১২০ থেকে বেড়ে এখন ১৬০-১৭০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়া সরু চালের দাম ছিলো ৫৮-৬৪ টাকার মধ্যে। এখন একই মানের চাল বিক্রি হচ্ছে এখন ৬৫-৭০ টাকায়। তবে যেকোনো ধরনের মোটা চাল ৫০ টাকার উপরে বিক্রি হচ্ছে। আলু দাম বেড়েছে সবচেয়ে বেশি। একমাস আগেও আলু কেজি ছিলো সর্বোচ্চ ৩০ টাকা। সেই আলু এখন ৬০-৭০ টাকা কেজি। এছাড়া পটল, বেগুন, বরবটি, কাকরোল, কচুর গাটি, করলা, টমেটো বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে। আগে যে লাউ মিলতো ৪০ টাকায়, সেই লাউ এখন ৮০-৯০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। আর দেশি টমেটো বিক্রি চ্ছে ২৫-৩০ টাকায়। গরুর মাংসের দাম ৫২০ থেকে বেড়ে একলাফে ৬৫০ টাকায় দাঁড়িয়েছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দামের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতিতে সবচেয়ে ভোগান্তির শিকার হচ্ছে সাধারণ মানুষ।
আয়ের তুলনায় ব্যয়ের পরিমাণ বাড়ায় পরিবারগুলোতে তৈরি হয়েছে বাজার ভীতি।
টিসিবির লাইনও দেখা যাচ্ছে অনেক দীর্ঘ। অনেকেই লাইনে দাঁড়িয়ে পণ্য না পেয়ে খালি হাতে ফিরছেন।
মিজানুর নামে এক শিক্ষক বলেন, ২২ হাজার টাকা বেতনে আগে পরিবারে সব ধরনের খরচ মেটানোর পর মাস শেষে কিছু সঞ্চয় হতো। কিন্তু এখন পরিবারের চাহিদা পূরণ করতেই হিমশিম খাচ্ছি। যদি নিত্যপণ্যের দাম এভাবে বাড়তে থাকলে মানুষের জীবনে এর নেতিবাচক প্রভাব আরও গভীর হবে। জাকারিয়া নামে এক ব্যাংক কর্মকর্তা বলেন, নিয়মিত ব্যয় বাড়লেও আয় আগের মতোই আছে। সবকিছুর দাম প্রায় দ্বিগুন হয়েছে। আমরা এখন কোথায়
যাবো। গৃহবধূ আমেনা বেগম বলেন, সবকিছুর দাম বেশি। গত মাসের তুলনায় দাম বাড়ছে। আমরা সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছি। মতিন নামের এক ক্রেতা জানান তেল, পেঁয়াজ, আলুর দাম বাড়েছে। রোজা উপলক্ষে দাম যেন আর না বাড়ে সে ব্যাপারে উপজেলা প্রশাসনের সজাগ দৃষ্টি রাখা প্রয়োজন।
খুচরা পেঁয়াজ ব্যবসায়ী খালেক জানান, কাঁচামাল আমদানি কম হলে দাম বাড়ে। নতুন পেঁয়াজ উঠা শুরু হচ্ছে। রোজার আগে দাম কমবে। রমজানে পেঁয়াজের দাম বাড়ার সম্ভাবনা নেই। কাঁচামরিচ ব্যবসায়ী রফিক জানান, মাঠে মরিচ তুলে ধান চাষ হচ্ছে। এজন্য দাম বাড়ছে। সরবরাহ না
থাকলে দাম আরও বাড়তে পারে। আদা- রসুন ব্যবসায়ী হান্নান জানান, আদা- রসুনের বাজারে তেমন পরিবর্তন নেই।
দাম যা ছিল তাই-ই আছে। কেজিতে অল্প বেড়েছে।
তেল ব্যবসায়ীরা জানান, বাজার স্থিতি হলে তাদের জন্যও ভালো হয়। হঠাৎ করে দাম বাড়লে বিক্রিতেও সমস্যা
হয়। যে দামই হোক মূল্য নির্ধারিত হলে সবার জন্যই ভালো। কারণ গত এক মাসে তেলের দাম ৩০-৫০ টাকা বেড়েছে। সবজি বিক্রেতা শামীম বলেন, বাজারে ক্রেতা না কমলেও চাহিদা কমেছে। যেসব ক্রেতা আগে ব্যাগভর্তি সবজি কিনতেন তারা এখন হিসেব করে কিনছেন।
দৌলতপুর আড়ৎদার ও ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক বলেন, বাজারে বর্তমানে তেল ও পেঁয়াজ নিয়ে ক্রেতাদের ক্ষোভ বেশি। তেলের বাজার নিয়ন্ত্রণ করে সরকার। সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে যেন কোনো ব্যবসায়ী তেল বিক্রি না করে সেজন্য প্রতিদিন কমিটির পক্ষ থেকে নজরদারি করা হচ্ছে।
আর পেঁয়াজ আমদানি কম ছিল তাই দাম বেড়েছে। এখন প্রতিদিন আমদানি বাড়ছে, দামও কমতে শুরু করেছে। রোজায় পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির সম্ভাবনা নেই। বাজারে অভিযান পরিচালনাকারী নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আবদুল ওয়াদুদ বলেন, বাজারে তেল পেঁয়াজসহ
নিত্যপণ্যের দাম যেন অযথা না বাড়ে সেজন্য উপজেলা প্রশাসন প্রতিনিয়ত নজরদারি ও অভিযান পরিচালনা করছে।
রমজানেও এ অভিযান অব্যাহত থাকবে। রমজানে টিসিবি অনেক বড় একটা সাপোর্ট নিয়ে আসছে। আমরা সেটাও সঠিকভাবে মনিটরিং করবো।