খুলনা জেলার ডুমুরিয়া উপজেলার গোনালী গ্রামের স্কুল শিক্ষক মোঃ মিজানুর রহমান। খুলনা সরকারি বিএল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে বাংলায় স্নাতোকোত্তর পাশ করে ডুমুরিয়ার টিপনা শেখ আমজাদ মেমোরিয়াল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগে শিক্ষকতা করে আসছেন। কৃষি কাজে তাঁর কোন পূর্ব অভিজ্ঞতা ছিলনা। গতবছর করোনা শুরু হলে তার স্কুল বন্ধ হয়ে যায় এবং লকডাউনে বাড়িতে বসে থাকতে তার খুব কষ্ট হয়। অবশেষে, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শে তিনি নেমে যান কৃষি কাজে। প্রথম বছর উপজেলা কৃষি অফিসারের পরামর্শে তিনি তার বসতবাড়ি সংলগ্ন ৩৬ শতাংশ জমিতে থাই এরিনা নামক বেগুনের আবাদ করেন এবং প্রথম বছরেই বাজিমাত। তিনি, তার ৩৬ শতাংশ জমিতে ৩০ হাজার টাকা খরচ করে ২৫০,০০০/- টাকার বেগুন বিক্রি করেন। তিনি এবছর তার ঐ জমিতে থাই এরিনা জাতের বেগুনের সাথে সাথী ফসল হিসাবে পুইশাক লাগান এবং ইতোমধ্যে পুইশাক ৩০,০০০/- টাকা বিক্রয় করেছেন। বর্তমানে, তার জমিতে শোভা পাচ্ছে রকমারি সাজের বিভিন্ন সাইজের বেগুন। দেখলে প্রাণ জুড়িয়ে যায়, সাথে আছে বল্টু জাতের মরিচ। ইতোমধ্যে তার বেগুন বিক্রয় শুরু হয়ে গেছে এবং তিনি ৩০,০০০/- টাকার বেগুন বিক্রয় করেছেন। তিনি, আশা করছেন তিনি তার এ জমি থেকে আরও ২-২.৫ লক্ষ টাকার বেগুন বিক্রি করতে পারবেন। তার এ সাফল্যে অনেক বেকার যুবক এবং স্কুলগামী ছেলে মেয়েরা উৎসাহিত হচ্ছে। অনেকেই নতুন করে তার কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে এ নতুন জাতের বেগুনের আবাদ করছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, করোনা কালিন সময়ে যখন লকডাউন ছিল, আসলে বাড়িতে বসে থাকতে অনেক কষ্ট হত, তখন ভাবলাম এই সময়টা যদি আমি আমার নিজ জমিতে শ্রম দিয়ে কিছু একটা করতে পারি, তাহলে সময় ও কাটবে, পারিবারিক পুষ্টি চাহিদা পূরন হবে এবং কিছু বেকার লোকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারব। যে চিন্তা সেই কাজ। অবশেষে উপজেলা কৃষি অফিসারের পরামর্শে থাই এরিনা জাতের বেগুনের আবাদ করলাম। প্রথম বছরেই আমার ৩৬ শতাংশ জমিতে ২ লক্ষ ২০ হাজার টাকা লাভ করেছিলাম। এবছর বেগুনের সাথে সাথী ফসল হিসাবে প্রথমে পুইশাক ছিল। বর্তমানে বল্টু মরিচ আছে। ইতোমধ্যে ৩০ হাজার টাকার পুইশাক এবং ৩০ হাজার টাকার বেগুন বিক্রি করেছি। বর্তমানে বাজার মূল্য ও খুব ভাল, প্রতিকেজি বেগুন মাঠ থেকে ৪০-৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আশা করছি, আরও ২.৫ লক্ষ টাকার বেগুন বিক্রি করতে পারব। জমিতে কাজ করে বর্তমানে আমার ভালো ভাবে সময় চলে যাচ্ছে। পাশাপাশি প্রায় ২-৩ জন লোক আমার ক্ষেতে নিয়মিত শ্রম দিচ্ছে। ভাবছি, করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও শিক্ষকতার পাশাপাশি আমি কৃষি কাজ চালিয়ে যাব।
উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মোঃ মোছাদ্দেক হোসেন বলেন মোঃ মিজানুর রহমান একজন শিক্ষক হলেও তিনি আর পাঁচ জন কৃষকের মত আধুনিক পদ্ধতিতে বেগুনের চাষ করছেন। তিনি যে কাজটি করছেন, আসলে অত্যন্ত প্রশংসনীয়। তিনি বর্তমানে কৃষিতে এলাকার আইডল। তার এ সাফল্যে অনেকেই উৎসাহিত হচ্ছে, অনেকেই আমার সাথে যোগাযোগ করছেন। আমার উপজেলাতে আরও কয়েক জন শিক্ষক বর্তমানে এ কাজে নিয়োজিত হয়েছেন। আমরা এ সমস্ত কৃষি উদ্যোক্তা গণকে নিয়মিত প্রশিক্ষন এবং পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করে যাচ্ছি। এ ধরনের শিক্ষিত লোকজন কৃষিতে যুক্ত হলে কৃষি আরও দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাবে এবং আমরা সেই লক্ষে কাজ করছি।