শেখ মাহতাব হোসেন:: ডুমুরিয়া বাজারে পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকা সত্ত্বেও সবজির দাম বেড়েছে। শীতের সবজির ভরা মৌসুম এখন। বাজারে সরবরাহও পর্যাপ্ত। সে অনুযায়ী দাম কিন্তু সপ্তাহের ব্যবধানে অধিকাংশ সবজির দাম কেজিপ্রতি ১০ থেকে ৩০ টাকা বেড়েছে। বাজারে নতুন আলুর সরবরাহ বাড়লেও নতুন ও পুরনো দুটির দামই চড়া। সরবরাহ কমার অজুহাত দেখিয়ে বিক্রেতারা কেজিতে ২০ থেকে ৩০ টাকা বাড়িয়েছে রসুনের দাম। তবে নতুন মুড়িকাটা পেঁয়াজের সরবরাহে এই নিত্যপণ্যের দাম কিছুটা কমেছে।
শনিবার (২৩ ডিসেম্বর) ডুমুরিয়ার কাঁচাবাজার, চুকনগর কাঁচাবাজার ঘুরে ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। বিক্রেতারা বলছেন, পাইকারি বাজারে সবজির সরবরাহ কিছুটা কমে যাওয়ায় এর বিরূপ প্রভাব পড়েছে খুচরা বাজারে। বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গত সপ্তাহে মানভেদে যে শিম ৫০ থেকে ৭০ টাকা কেজি ছিল, সেই শিম এখন প্রতি কেজি ৭০ থেকে ১০০ টাকা। বড় গোল বেগুন ছিল ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজি, এটি এখন ১০০ টাকা। লম্বা বেগুন প্রতি কেজি ৫০ টাকা ছিল, এটি এখন ৭০ থেকে ৮০ টাকা। ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজির করলা বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ১০০ টাকায়। লাউ প্রতিটি ছিল ৬০ থেকে ৭০ টাকা, দাম বেড়ে এখন ৮০ থেকে ৯০ টাকা। ১০০ টাকা কেজির কাঁচামরিচ মানভেদে বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৪০ টাকায়। ফুলকপি ও বাঁধাকপি প্রতিটি ১০ টাকা বেড়ে ৫০ থেকে ৬০ টাকা হয়েছে।
বাজারে নতুন আলুর সরবরাহ বাড়ার পরও পুরনো আলুর দাম কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে ৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। নতুন আলু প্রতি কেজি ৭০ টাকা। দেশি রসুন প্রতি কেজি ২৫০ থেকে ২৮০ টাকা এবং আমদানি করা রসুন ২৩০ থেকে ২৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সপ্তাহের ব্যবধানে ডিমের দামও বেড়েছে। ১০ টাকা বেড়ে প্রতি ডজন ফার্মের ডিম ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
ডুমুরিয়া কাঁচাবাজারের সবজি ব্যবসায়ী মো. হানিফ মোড়ল বলেন, ‘পাইকারি বাজারে সব ধরনের সবজির দাম বেড়েছে। খুলনা বাজার থেকে পাইকারিতে গোল বেগুন ৭০ টাকা কেজি দরে কিনতে হয়েছে। বিক্রি করছি ৮০ থেকে ৯০ টাকায়। লম্বা বেগুন প্রতি কেজি কিনেছি ৬০ টাকায়, বিক্রি করছি ৭০ থেকে ৮০ টাকায়। পাইকারিতে প্রতিটি ফুলকপি কিনেছি ৪৫ টাকায়, বিক্রি করছি ৬০ টাকায়। বাঁধাকপি ৪০ টাকায় কিনে ৫০ টাকায় বিক্রি করছি। প্রতিটি লম্বা লাউ ৮৫ টাকায় কিনে বিক্রি করছি ১০০ টাকায়।’
ডুমুরিয়া বাজারের সবজি ব্যবসায়ী সাইফুল ফকির বলেন, ‘অসময়ে বৃষ্টির কারণে এবার শীতের সবজির উৎপাদন কম হয়েছে। এতে পাইকারি বাজারে সবজির সরবরাহ কিছুটা কম। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম হওয়ার কারণে সবজির দাম বাড়তি। সরবরাহ বাড়লে দাম আবার কমে আসতে পারে।’
ডুমুরিয়া বাজারে চড়া দামের কারণে সবজি না কিনেই ফিরে যাচ্ছিলেন আব্দুল গফুর নামের সাবেক এক সেনা কর্মকর্তা। তিনি বলেন, ‘বেগুনের (গোল বেগুন) দাম জিজ্ঞেস করলাম, প্রতি কেজি ১০০ টাকা চাইল। শীত মৌসুমে এত দাম থাকার কারণ কী? ব্যবসায়ীরা তাদের ইচ্ছামতো দাম বাড়িয়ে বিক্রি করছে। বাজারে কোনো নজরদারি না থাকার সুযোগ নিচ্ছে সব ধরনের ব্যবসায়ী। তাদের কাছে ভোক্তারা এখন এক রকম জিম্মি।’
তিনি আরো বলেন, ‘এখন সবজির মৌসুম চলছে। বেগুনের দাম খুব বেশি হলে ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি হওয়ার কথা। কিন্তু এখনো ১০০ টাকা কেজি।’
রসুনের দাম বাড়ার বিষয়ে আমদানিকারক ও চুকনগর পেঁয়াজ-রসুন ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মাল বলেন, ‘চাহিদার তুলনায় বাজারে দেশি রসুনের সরবরাহ খুব কম। এতে দেশি রসুনের দাম এভাবে বেড়েছে। ভারত ও চীনে দাম বাড়ার কারণে আমদানি করা রসুনের দামও বেড়েছে। পাইকারিতে দেশি রসুন মানভেদে ২০০ থেকে ২৪০ টাকা এবং আমদানি করা রসুন ১৯০ থেকে ১৯৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।’
এদিকে ডুমুরিয়া প্রতিনিধি জানিয়েছেন, খুলনার ডুমুরিয়া পাইকারি বাজার খ্যাত মহাস্থানহাটে পাঁচ দিনের ব্যবধানে সব ধরনের সবজির দাম বেড়েছে। বাজারে সবজির সরবরাহ তুলনামূলক কম হওয়ায় দাম বেড়েছে বলে ব্যবসায়ীরা জানান।
শনিবার সকালে ডুমুরিয়া নতুন পাকরি আলু ৬৫ থেকে ৭৫ টাকা ও সাদা আলু ৫৫ থেকে ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। গত শনিবার এই হাটে পাকরি আলু ৬০ থেকে ৭০ টাকা ও সাদা আলু ৫০ থেকে ৫৫ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়।
এদিন প্রতি মণ ফুলকপি বিক্রি হয়েছে এক হাজার ২০০ থেকে এক হাজার ৩০০ টাকায়। গত শনিবার এর দাম ছিল ৯০০ থেকে এক হাজার টাকা মণ। এ ছাড়া পাতাকপি প্রতিটি বিক্রি হয়েছে ২০ থেকে ২৫ টাকায়। গত শনিবার প্রতিটির দাম ছিল ১৪ থেকে ১৫ টাকা। ওই পাইকারি বাজারে এদিন করলা প্রতি মণ দুই হাজার ৪০০ টাকা, বেগুন এক হাজার ৬০০ টাকা, টমেটো দুই হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এ ছাড়া পটোল ৫০ থেকে ৫৫ টাকা, মুড়িকাটা পেঁয়াজ ৮০ থেকে ৮২ টাকা, কাঁচামরিচ ৮০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। এ ছাড়া মিষ্টিকুমড়া ৩৪ থেকে ৩৫ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়।