শেখ মাহতাব হোসেন:: খুলনা জেলার ডুমুরিয়া উপজেলায় চলতি রবিশস্য মৌসুমে এবার আলুর বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে। উপজেলার১৪টি, ইউনিয়নের প্রতিটি মাঠজুড়ে এখন আলু গাছের সবুজ পাতার রঙে মুখরিত ফসলের মাঠ। আলু চাষের উপযোগী আবহাওয়ার কারণে রোগ-বালাই কম হওয়ায় আলুর গাছগুলো খুবই ভালো হয়েছে। আবহাওয়া অনুক‚লে থাকলে ডুমুরিয়া উপজেলায় এ বছর আলুর বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষকরা।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি রবিশস্য মৌসুমে এবারে ডুমুরিয়া উপজেলার ২ হাজার ৮শ’ হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নিধার্রণ করলেও এ বছর উপজেলায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অধিক জমিতে আলুর আবাদ হয়েছে। মাঠ পর্যায়ে আলু চাষিদের কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে যথাযথ পরামশর্ ও প্রত্যক্ষ কারিগরি সহযোগিতার কারণে আলু ক্ষেত অনেকটা রোগ-বালাই মুক্ত হওয়ায় বাম্পার ফলনের আশা করছেন কৃষকরা। উপজেলার খর্নিয়া ,আটলিয়া শরিফপুর ইউনিয়নে সবচেয়ে বেশি আলু চাষ হয়েছে বলে কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে।
এ বছর বন্যা না হওয়ার কারণে রোপা-আমন ধান কাটার সঙ্গে সঙ্গে রবিশস্যের উপযোগী চাষযোগ্য জমিতে কৃষকরা আগাম জাতের আলু চাষে ব্যস্ত হয়ে ওঠে। সরকারিভাবে কৃষকদের মাঝে কৃষি উপকরণসহ রাসায়নিক সার বিনা মূল্যে যথাসময়ে বিতরণ করায় এই উপজেলার কৃষকদের আগাম আলু চাষ করা সম্ভব হয়েছে। ভালো ফলনের আশায় উপজেলার কৃষকরা রাত-দিন পরিশ্রম করে যাচ্ছে। কৃষকের পাশাপাশি বসে নেই কৃষি কমর্কতার্রাও। এবারে চলতি রবিশস্য মৌসুমে কোনো প্রকার প্রাকৃতিক দুযোর্গ হানা না দেয়ায় এবং আলু চাষের পরিবেশ অনুক‚লে থাকায় আলুর পাশাপাশি সরিষা, গম ও ভূট্টার বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে। উপজেলার গ্রামীণ জনপদের কৃষকরা এই আলু যথাসময়ে ঘরে তুলতে পারলে এবং বিক্রয় মূল্য ভালো পেলে বন্যার কারণে রোপা-আমন ধানের ক্ষতি পুষিয়ে ইরি- বোরো ধান চাষে কৃষকদের আগ্রহ বৃদ্ধি পাবে বলে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কমর্কতার্রা মনে করছেন।
খুলনা জেলার খাদ্যশস্য ভান্ডার হিসেবে খ্যাত ডুমুরিয়া উপজেলার মাঠগুলো এখন কৃষকদের পদভারে মুখরিত হয়ে উঠেছে। উপজেলার টিপনা গ্রামের কৃষক রফিক সরদার জানান, আমি এ বছর ৩৩ শতাংশ জমিতে আলুর চাষ করেছি। আলুর বীজ উপজেলা কৃষি অফিস থেকে দেওয়া আমার জমিতে রপন করেছি। আলুর চাষ ভালো হওয়ায় মনে হচ্ছে এবার আলুর আশানুরূপ ফলন পাব। বাজারে মূল্যে ভালো পেলে বিগত দিনের বন্যার ক্ষতি পুষিয়ে পুরোদমে ইরি-বোরো চাষ করতে পারব।
একই গ্রামের কৃষক বাবর আলী সরদার জানান, আমি চলতি মৌসুমে প্রায় সাড়ে ২৫ শতাংশ জমিতে জাতের আলুর আবাদ করেছি। কোনো প্রকার দুযোর্গ ও রোগ-বালাই না থাকায় এ বছর আলুর বাম্পার ফলন পাব বলে আমি আশা করছি। উপজেলার খর্নিয়া ব্লাকের উপ-সহকারী কৃষি কমর্কতার্ মোঃ ইকবাল হোসেন জানান, শুরুতেই আলুর ক্ষেতে নানা ধরনের পোকা-মাকড়ের আনাগোনা দেখা দিলেও মাঠ পর্যায়ে আমরা কৃষকদের কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে যথাযথ পরামশর্ ও প্রত্যক্ষ কারিগরি সহযোগিতা দিয়ে আসছি। বতর্মানে আলু ক্ষেতে প্রায় শত ভাগ রোগ-বালাই মুক্ত হওয়ায় বাম্পার ফলনের আশা করছি।
এ বিষয়ে ডুমুরিয়া উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মোঃ ইনসাদ ইবনে আমিন বলেন, এবারে ডুমুরিয়া উপজেলায় বিগত বছরের তুলনায় সবচেয়ে বেশি পরিমাণ আলু চাষ হয়েছে। যথাসময়ে জমি চাষযোগ্য হওয়ায় এলাকার কৃষকরা সুযোগ বুঝে আলুর আবাদ করেছে। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে তাদের যথাযথ পরামশর্ ও পরিচযার্র বিষয়ে দিক নিদের্শনা দেয়া হচ্ছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগে কোনো প্রকার ক্ষতি না হলে ডুমুরিয়া উপজেলায় আলুর বাম্পার ফলনের সম্ভবনা রয়েছে। শুধু তাই নয়, আলু চাষের জমিগুলোর উবর্রতা বেশি থাকায় কৃষকরা ইরি-বোরো চাষেও এর সুফল পাবে।