শেখ মাহতাব হোসেন :: খুলনা জেলায় ডুমুরিয়া উপজেলায় ১৪টি ইউনিয়নে সজিনার বাম্পার ফলন হয়েছে। গ্রামে-গঞ্জে, হাটে- বাজার ভরপুর সজিনাতে। উৎপাদন খরচ ও পরিচর্যা কম বলেই চাষীরা সজিনা চাষে আগ্রহী। জেলার চাহিদা মিটিয়ে এখানকার উৎপাদিত সজিনা এখন রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হচ্ছে।
প্রতিদিন পাইকারী ব্যবসায়িরা জেলার ডুমুরিয়ার বিভিন্ন বাজার থেকে সজিনা ক্রয় করে ঢাকা, খুলনা, চট্টগ্রাম, বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন মোকামে বিক্রি
করছে।
চলতি মৌসুমের শুরুতে ডুমুরিয়ার বিভিন্ন হাটে-বাজারে ৭০টাকা থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে সজিনা বিক্রয় হয়েছে বলে জানিয়েছে ক্রেতারা। তবে কিছু দিন পরে তা কমে আসবে ৪০থেকে ৫০টাকা ।
স্বাদে ও গুণে ভরপুর এ সবজিটি সকলের কাছে খুব জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। গ্রাম পর্যায়ে সজিনার ব্যাপক চাষ হয়ে থাকে। এছাড়া জমির আইল, সড়কের ধার, অনাবাদি জমিতে সজিনার চাষ হয়। তবে বাণিজ্যিকভাবে সজিনার উৎপাদন করতে পারলে অন্যান্য যেকোন সবজি উৎপাদনের থেকে এটি লাভজনক হবে।
ডুমুরিয়া উপজেলার খর্নিয়া ইউনিয়নের টিপনা গ্রামের ইঞ্জিনিয়ার শেখ আশরাফুজ্জামান ( সামু) ও ঢাকা পি জি হাসপাতালে ডাক্তার তুহিন জানান, ইংরেজিতে সজিনার নাম ‘ড্রামস্ট্রিক’ যার অর্থ ঢোলের লাঠি।
সজিনার ইংরেজি নামটি অদ্ভুত হলেও এটি একটি অতি প্রয়োজনীয় জীবন রক্ষাকারী উদ্ভিদ। বাংলাদেশে এটি নিয়ে তেমন গবেষণা না হলেও বিশ্বের বহু দেশে এ নিয়ে অনেক গবেষণা হয়েছে।
বিশেষ করে গাছ বৃদ্ধিকারক হরমোন, ওষুধ, কাগজ তৈরী ইত্যাদি বিষয়ে। বহুদিন হতেই আমাদের দেশে এটি সবজির পাশাপাশি ওষুধ হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে।
তিনি আরও জানান, সজিনার ফুল ও পাতা শুধু শাক হিসেবেই নয়, পশু খাদ্য হিসেবেও ব্যবহার হয়ে থাকে। এর পাতা শারীরিক শক্তি ও আহারের রুচির
উন্নতি হয়। এর মধ্যে আছে ভিটামিন এ, বি, সি, নিকোটিনিক এসিড, প্রোটিন ও চর্বি জাতীয় পদার্থ, কার্বোহাইড্রেট ইত্যাদি। ভারতীয়রা এটির স্যুপ খেয়ে
থাকে। এ সময়ে ঋতু পরিবর্তনের কারণে অনেকেরই মুখে স্বাদ থাকে না। আর এ স্বাদকে ফিরিয়ে আনতে সজিনার জুড়ি নেই।
সজিনার ফুল সর্দি কাশিতে, যকৃতের কার্যকারীতায়, কৃমি প্রতিরোধে এবং শক্তি বৃদ্ধিতে সহয়তা করে। সজিনার ডাটাতে প্রচুর এমাইনো এসিড আছে। সজিনার বীজ থেকে তেল ও পাওয়া যায় যা বাতের ওষুধ তৈরির কাজে ব্যবহার হয়ে থাকে এবং ঘড়ি ঠিক করার জন্য যে বেল অয়েল ব্যবহার হয় তা এর বীজ হতে পাওয়া যায়। খুলনার উপ-পরিচালক মোঃ হাফিজুর রহমান জানান, ২০ হতে ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় সজিনা ভাল জন্মায় এবং যেসব এলাকায় ২৫০ হতে ১৫০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত সজিনা চারে জন্য উপযুক্ত ক্ষেত্র। বেলে দোঁআশ হতে দোআঁশ এবং পিএইচ ৫ দশমিক ০ হতে ৯ দশমিক ০ সম্পন্ন মাটি সহ্য করতে পারে। সজিনা চাষে সারের তেমন প্রয়োজন হয়না। তবে ইউরিয়া এবং জৈব সার প্রয়োগ করলে গাছ ভাল হয়। সজিনা বৃক্ষটি বীজ ও ডাল এর মাধ্যমে বংশ বিস্তার করে। তবে সাতক্ষীরাতে ডাল পুঁতে অঙ্গজ বংশ বিস্তারের মাধ্যমে সজিনার চাষ হয়।
ডুমুরিয়া উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মোঃ মোছাদ্দেক হোসেনের নিকট আমাদের ডুমুরিয়া খুলনা প্রতিনিধি শেখ মাহতাব হোসেন জানতে চাইলে তিনি জানান, খুলনা জেলায় ডুমুরিয়া উপজেলায় ১৪টি ইউনিয়নে চলতি বছরে ৩শত ৫০হেক্টর জমিতে সজিনার চাষ হয়েছে যাহার ফলন হয়েছে ২৫ থেকে ৩০মেটি্ক টন যাহার মূল্য ১৫ লক্ষ টাকা। সজিনা খাদ্যের পুষ্টিগুণ অনুযায়ী সজিনাতে প্রতি ১০০ গ্রামে খাদ্যপোযোগী পুষ্টি উপাদান হচ্ছে জ্বলীয় অংশ ৮৩ দশমিক ৩ গ্রাম, খনিজ ১ দশমিক ৯ গ্রাম, আঁশ ৪ দশমিক ৮ গ্রাম, খাদ্যশক্তি ৬০ কিলোক্যালোরি, প্রেটিন ৩ দশমিক ২ গ্রাম, চবি ০ দশমিক ১ গ্রাম, শর্করাা ১১ দশমিক ৪ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ২১ দশমিক ০ মিলি গ্রাম, লোহা ৫ দশমিক ৩ মিলি গ্রাম, ক্যারোটিন ৭৫০ মাইক্রো গ্রাম, ভিটামিন এ ০ দশমিক ০৪ মিলি গ্রাম, ভিটামিন বি (১)০ দশমিক ০২ মিলি গ্রাম।
তিনি আরও জানান, সজিনা চাষ একটি লাভজনক ব্যবসা। রোগবালাই প্রায় নেই এবং উৎপাদন খরচ খুব কম। তাই কৃষকদের সজিনা চাষে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।