শেখ মাহতাব হোসেন :: ডুমুরিয়ার ইন্দ্রজিৎ মন্ডল ইঁদুর নিধন করে ফসল ও মাছ উৎপাদনে বিশেষ অবদান রাখছেন। তিনি রাতে এলাকার কৃষক দল বেঁধে কচুড়িপনা তুলে তার ভিতরে কোচ দ্বারা ও বিভিন্ন ভাবে ইঁদুর মেরে
খুলনা জেলা থেকে পুরস্কার অর্জন করেছেন। তিনি ২০২০.সালে ১৯,১৯৫ টি ইঁদুর নিধন করে মাছ উৎপাদনে বিশেষ অবদান রাখেন।
আবহমান বাংলার গৌরবময় ইতিহাস ঐতিহ্য মিশে আছে কৃষির সঙ্গে। প্রাচীনকাল থেকে আমাদের অর্থনীতিতে কৃষি ও কৃষকের অবদান অসামান্য। এদেশের কৃষকের অক্লান্ত পরিশ্রম ও কৃষিবান্ধব সরকারের সময়োপযোগী পদক্ষেপের কারণে দেশের জনগণের দৈনন্দিন খাদ্য ও পুষ্টি চাহিদা পূরণ, শিল্পোৎপাদন, কর্মসংস্থানসহ কৃষি খাতের অবদান উল্লেখযোগ্য এবং রপ্তানি বাণিজ্যের সম্ভাবনা সমুজ্জল। উৎপাদনের এই ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে রোগ-বালাই ও অন্যান্য ক্ষতিকর প্রাণীর আক্রমণ থেকে ফসল রক্ষা করা একটা চ্যালেঞ্জ। বাংলাদেশের ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য অনিষ্টকারী মেরুদ-ী প্রাণী দমন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মাঠের ফসল উৎপাদন ও গুদামজাত শস্য সংরক্ষণের ক্ষেত্রে ইঁদুর এক বড় সমস্যা। মাঠের শস্য কেটে কুটে নষ্ট করে, খায় এবং গর্তে জমা করে। গুদামজাত শস্যে মলমূত্র ও লোমের সংমিশ্রণ করে, মানুষ ও গবাদি পশুদের মধ্যে রোগ-বালাই সংক্রমণ করে, সর্বোপরি পরিবেশ দূষিত করে। সরকারি বেসরকারি খাদ্য গুদাম, বেকারি, হোটেল, রেস্তোরাঁ, পাইকারি ও খুচরা পণ্য বিক্রির দোকানে বিপুল পরিমাণে খাদ্য ইঁদুর নষ্ট করে যার প্রকৃত কোন পরিসংখ্যান পাওয়া যায়নি। যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিষয়ক সংস্থার এক গবেষণায় দেখা যায় যে, গঙ্গা- ব্রক্ষ্মপুত্র অববাহিকা বিশ্বের অন্যতম ইঁদুর উপদ্রুত এবং বংশবিস্তারকারী এলাকা, যার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। এখানকার উপকূলীয় লোনা ও মিঠা পানির মিশ্রণের এলাকাগুলো ইঁদুরের বংশবিস্তারের জন্য বেশ অনুকূল। মাঠের ফসল ছাড়াও এই অববাহিকায় অবস্থিত হাট বাজার ও শিল্পাঞ্চলগুলোতেও ইঁদুরের দাপট বেশি।
আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা ইন্সটিটিউট (IRRI) ইঁদুরের উৎপাতের কারণে ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া ১১টি দেশকে চিহ্নিত করেছে। ইরির হিসেবে, ফসলের মোট ক্ষতির বিবেচনায় ইঁদুরের কারণে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশ ফিলিপাইন। দেশটির উৎপাদিত ধানের ২০ শতাংশ ইঁদুর খেয়ে ফেলে ও নষ্ট করে। এর পরেই আছে লাওস নামক দেশটি। দেশটির প্রায় ১৫ শতাংশ ধান ইঁদুরের পেটে যায়। ইরির এক গবেষণায় বলা হয়েছে বাংলাদেশের প্রায় ১০ শতাংশ ধান- গম ইঁদুর খেয়ে ফেলে ও নষ্ট করে। বাংলাদেশে ইঁদুরের কারণে বছরে আমন ধানের শতকরা ৫-৭ ভাগ, গম ফসলে ৪-১২ ভাগ, গোল আলুতে ৫-৭ ভাগ, আনারস ৬-৯ ভাগ নষ্ট হয়। গড়ে মাঠ ফসলের ৫-৭ % এবং গুদামজাত শস্য ৩-৫% ক্ষতি করে। ইরির ২০১৩ সালের এক গবেষণা মতে, এশিয়ায় ইঁদুর বছরে যা ধান-চাল খেয়ে নষ্ট করে, তা ১৮ কোটি মানুষের এক বছরের খাবারের সমান। আর শুধু বাংলাদেশে ইঁদুর ৫০-৫৪ লাখ লোকের এক বছরের খাবার নষ্ট করে। ১৭০০টি ইঁদুর জাতীয় প্রাণীর মধ্যে বাংলাদেশে ১২টির অধিক ক্ষতিকারক ইঁদুর জাতীয় প্রজাতি শনাক্ত করা হয়েছে। প্রজাতিভেদে এদের ওজন ৭০-৪৫০ গ্রাম পর্যন্ত হতে পারে। ইঁদুর আকারে ছোট হলেও সারা বছরে সব ধরনের ক্ষতি মিলিয়ে ব্যাপক ক্ষতি করে। ইঁদুর বেড়িবাঁধ ও বিভিন্ন বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে গর্ত করে এবং মাটি সরিয়ে বাঁধ দুর্বল করে ফেলে যার কারণে বাঁধ ভেঙে পানি দ্বারা প্লাবিত হয়ে বাড়ি ঘর, ফসলাদি ও গবাদিপশুর ক্ষতি হয়ে থাকে। ইঁদুর মাঠের ও ঘরের শস্য নষ্ট করা ছাড়া বৈদ্যুতিক তার, টেলিফোন তার ও কম্পিউটার যন্ত্র কেটেও নষ্ট করে। এদের দ্বারা ক্ষতির পরিমাণ পরিসংখ্যানগত ভাবে নির্ণয় করা স্বভাবতই কঠিন।