শেখ মাহতাব হোসেন:: ডুমুরিয়া (খুলনা )পদ্মা সেতু চালুর পর খুলনা ডুমুরিয়া উপজেলার উৎপাদিত সবজির একটি অংশ ক্ষেত থেকে এখন সরাসরি ঢাকায় যাচ্ছে। ডুমুরিয়া উপজেলার বেশ কয়েকজন কৃষক ইতোমধ্যে ক্ষেত থেকে সবজি উঠিয়ে সরাসরি রাজধানীতে পাঠাচ্ছেন। খুলনা জেলার ডুমুরিয়া উপজেলায় চলতি মৌসুমে চিংড়ি ঘেরের আইলের ১৫শত হেক্টর জমিতে সবজি চাষ হয়েছে। নিচে মাছের চাষ হওয়ায় এই সবজির ক্ষেতে কোন রকম বিষ প্রয়োগ করা হয় না। ফলে সম্পূর্ণ বিষমুক্ত সবজি বাজারে তোলা সম্ভব হচ্ছে।
ডুমুরিয়া উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মোঃ ইনসাদ ইবনে আমিন জানায়, বিগত কয়েক বছর ধরে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে মাছের ঘেরের পাড়ে সবজি চাষ। ‘সাথী ফসল’ হিসেবে শুরু হলেও এখন মূল ফসলের সঙ্গে পাল্লা দিচ্ছে সমানে সমান। মাচায় বা ঘেরের আইলে সবজি আর নিচের পানিতে মাছ চাষ হচ্ছে। জেলায় প্রতি বছর যে পরিমাণ সবজি উৎপাদন হয়ে থাকে তার ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ উৎপাদিত হয় ঘেরের আইলে মাচা পদ্ধতিতে। ঘেরের আইলে সবজি চাষ লাভজনক হওয়ায় জেলার অধিকাংশ মৎস্য ঘেরে সবজির চাষাবাদ দিন-দিন বাড়ছে। ফলে জেলার চাহিদা মিটিয়ে দেশের অন্যান্য জেলায়ও পাঠানো হচ্ছে সবজি।
কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি বছর ডুমুরিয়া উপজেলায় ১৫শত হেক্টর জমির (মৎস্য ঘেরের বেড়ি) আইলে বিভিন্ন প্রকারের সবজি চাষ হয়েছে। এরমধ্যে খুলনা জেলার ডুমুরিয়া উপজেলায় ৮০ হেক্টর জমির আইলে সবজির চাষ হয়েছে। এসব জমি থেকে হেক্টর প্রতি গড় ১৯ মেট্রিকটন হারে মোট ১৬ হাজার ৬২৫ টন সবজি উৎপাদনের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
সরেজমিনে জেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, অধিকাংশ মৎস্য ঘেরে যতদূর চোখ যায় সবুজের হাতছানি। ঘেরের আইলে ও ঘেরের আইলের উপরে নির্মিত সারি-সারি মাচায় ঝুলছে করলা, ঢেঁড়শ, পুঁইশাক, কুমড়া আর শসা। বর্ষাকালীন সবজির পাশাপাশি আগাম শীতকালীন সবজি চাষও শুরু করেছেন অনেকে।
সাতক্ষীরা-খুলনা মহাসড়ক সংলগ্ন ডুমুরিয়া উপজেলার আটলিয়া ইউনিয়নের বরাতিয়া ও খর্নিয়া ইউনিয়নের বিল শিংগা,বিলে শত-শত বিঘা জমির মৎস্য ঘেরে মাচা পদ্ধতিতে লাউ, কুমড়া ও করলার চাষাবাদ করা হয়েছে। মাচায় ঝুলছে হাজার-হাজার করলা, শতশত লাউ ও কুমড়া। একই সাথে ঘেরের পাড়ে লাগানো হয়েছে পুঁইশাক ও ঢেঁড়স।
টিপনা গ্রামের নওশের আলু সরদারের ছেলে কৃষক ফারুক সরদার জানান, আমি ২ একর জমিতে মৎস্য ঘের করেছি। তার তিন পাশে সবজি চাষ করেছি। আবহাওয়া অনূকুলে থাকলে ও বাজারদর ভালো পেলে আশাকরি আমি দেড় থেকে দুই লাখ টাকার সবজি বিক্রি করতে পারবো।
একই এলাকার অপর মৎস্য ঘের ব্যবসায়ী মোহর আলী জানান, তিনি প্রায় ১ একর জমিতে মৎস্য ঘেরের পাশাপাশি সবজি চাষ করেছেন। ঘেরের বেড়ির চারপাশ দিয়ে ডাবল সিস্টেমে বেড়া দিয়ে সবজির মাচা দিয়েছেন। তিনি বলেন, আমার লক্ষ্য ঘেরের সবজি থেকে ৫০হজার টাকার বেশি মুনাফা অর্জন করা।
ডুমুরিয়া উপজেলা অতিরিক্ত কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মোঃ ওয়ালিদ হোসেন জানান, উপজেলার জেলার অধিকাংশ ঘেরের পাড়ে এখন সবজি চাষ হচ্ছে। এর মধ্যে- লাউ, উচ্ছে, শসা, পটল, ঢেঁড়স ও বরবটি বাজারে উঠেছে। কৃষকেরাও ভালো দাম পাচ্ছেন। তিনি আরো বলেন, পদ্মা সেতু চালুর পর এখন খুলনা ডুমুরিয়া থেকে ৩/৪ ঘন্টায় ঢাকায় যাওয়া যাচ্ছে। খুলনা ডুমুরিয়া উপজেলার বেশ কয়েকজন কৃষক ইতোমধ্যে ক্ষেত থেকে সবজি উঠিয়ে সরাসরি ঢাকায় পাঠাতে শুরু করেছেন।