সব কিছু
facebook channelkhulna.tv
খুলনা বৃহস্পতিবার , ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ২১শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
ডুমুরিয়ার সীমান্তবর্তী সুইচ গেট মরন ফাদে পরিনত | চ্যানেল খুলনা

ডুমুরিয়ার সীমান্তবর্তী সুইচ গেট মরন ফাদে পরিনত

শেখ মাহতাব হোসেন :: ডুমুরিয়া(খুলনা) যশোর-খুলনার ৪টি উপজেলার ১০ লাক্ষাধীক মানুষের মরন ফাদে পরিনত হয়েছে ভবদাহ এলাকার ২১, ৯ ও ৩ ভেল্ট সুইচ গেট। এর মধ্যে ৯ ভেন্ট ও ৩ ভেন্টের গেট দুটি একবারে বন্ধ হয়ে গেছে। এদিকে ২১ ভেন্টের মধ্যে মধ্যে ১৮টি ভেন্টও গেছে পলির নিচে তলিয়ে। যার ফলে পানি চলা চলের পথ গেছে বন্ধ হয়ে।
ভবদাহ এলাকা ঘুরে জানা গেছে সুইচ গেট বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারনে গত বছরের তুলনায় এবার ফসল হবে অর্ধেক জমিতে। সুইচ গেটের কপাট সংস্কার করা না হলে আগামী বছর থেকে ভয়াবহ পানি বন্দী হওয়ার আশঙ্কা করছে এলাকাবাসী। চলতি বর্ষা মৌসুমে আবারও বড় ধরনের বণ্যার কবরে পড়বে যশোরসহ খুলনার বেশ কয়েকটি উপজেলার মানুষ।
বর্ষা মৌসুমে পানির কাছে হেরে যাচ্ছে যশোরের ভবদহ অঞ্চলের মানুষ। খেতের ফসল, ঘেরের মাছ সবই কেড়ে নিয়েছে এই পানি। কেড়ে নিয়েছে থাকার জায়গাটুকুও। বর্ষা মৌসুমে কবর দেওয়ার জায়গাও পাওয়া যায় না। সর্বগ্রাসী ভবদহ ভেঙেচুরে চুরমার করে দিয়েছে লাখো পরিবারের সাজানো-গোছানো ঘর-গৃহস্থালি। পক্ষান্তরে সরকারি অর্থ লোপাটের কারখানা হিসেবে পরিচিত হয়েছে যশোরের দুঃখ ভবদহ।
সরেজমিনে দেখা যায়, যশোর-খুলনার ৪টি উপজেলা অভয়নগর, কেশবপুর, মনিরামপুর ও ডুমুরিয়ার সীমান্তে অবস্থিত দুঃখ দুর্দশার অপর নাম ভবদাহ। এখানে বয়ে যাওয়া তিনটি নদী মুক্তেশ্বরী, শ্রীহরি ও টেকা নদীর মোহনা। এই মোহনার সবচেয়ে বড় ২১ ভেল্ট সুইচ গেটের দু’পাশে ১৮টি কপাট নদীর পলির নিচে পড়ে পানি চলাচল বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। ভবদহে শ্রীহরি, টেকা ও মুক্তেশ্বরী এ তিনটি নদীতে পলি জমে নাব্যতা হারিয়েছে। জোয়ারের সময় ১-২ ফুট পানি হলেও ভাটির সময় নদীগুলো শুকিয়ে যায়। এদিকে ৯ ও ২ ভেন্টের গেট দুটি একেবারেই বন্ধ হয়ে গেছে।
এলাকাবাসীরা জানান, পলি জমে নদীর নব্যতা হারানোর ফলে প্রতিবছর ব্যাপক এলাকা পানি বন্দী সৃষ্টি হয়। অপরদিকে প্রতি বছর লাখ লাখ টাকা ব্যয়ে নদী খনন করে যে সামান্য নাব্যতা ফিরে পায় তা ম্লান হচ্ছে অপরিকল্পিত মৎস্য খামারের কারনে। শ্রীহরি নদীর উজানে ও ভাটিতে একাধিক স্থানে নদীর জমি দখল করে স্থাপনা ও মৎস্য খামার গড়ে ওঠেছে। এক বিল থেকে অন্য বিলে পানি নিস্কাশনের যে সমস্থ খাল রয়েছে তার অধিকাংশ দখল করে মাছের খামর গড়ে উঠেছে। উঁচু বিল থেকে নিচু বিলে পানি প্রবহের যে সব দাড়া রয়েছে তা দখল হয়ে গেছে।
জানা গেছে, জয়েন্ট পাকিস্থন আমলের সবচেয়ে বড় প্রকল্প ভবদহ সুইসগেট। ১৯৫৮ সালে পাকিস্থানের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট আইযুব খানের শাসনামলে সবুজবিপ্লব বাস্তবায়নের জন্য যশোরের মনিরামপুর, কেশবপুর, অভয়নগর ও সদর উপজেলা এবং খুলনার ডুমুরিয়া, ফুলতলা ও বটিয়াঘাটা উপজেলায় এক লাখ ২৮ হাজার হেক্টর জমি লবণাক্ততার হাত থেকে রক্ষার জন্য ২৭টি
বিলের পানি নিষ্কাশনের প্রয়োজনে ভবদহ সুইসগেট নির্মাণের প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। নেহালপুর ইউনিয়নসংলগ্ন টেকা-মুক্তেশ্বরী নদীর ওপর ভবদহ নামক স্থানে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্থানের পানি উন্নয়ন বোর্ড ভবদহ সুইসগেট নির্মাণ করে (১৯৬২-৬৩)। তখন এলাকায় ব্যাপক ফসল হতে থাকে।

১৯৮২ সালে প্রথম সুইসগ গেটে জোয়ারের পানি বাধাগ্রস্থ হওয়ায় নদীর তলদেশে পলিমাটি জমতে থাকে। তখন থেকে শুরু হয় ব্যাপক ফসলহানি। রাস্থাঘাট ও স্কুল-কলেজে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। সামাজিক ও অর্থনৈতিক যোগাযোগব্যবস্থাও ভেঙে পড়ে।
জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি পেতে এলাকার মানুষ ১৯৯৭ সালে নদীর বেড়িবাঁধ কেটে জোয়ারের পানি পাশের ভায়না বিলে ঢুকিয়ে দেয়। এরপর সরকার ভবদহে টাইডাল রিভার ম্যানেজমেন্ট (টিআরএম) প্রকল্প গ্রহণ করে। ফলে ২০০৪ সাল পর্যন্ত ভবদহে জলাবদ্ধতা হয়নি। কিন্তু পরের তিন বছর আবার জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। ২০০৭ সালে বিল খুকসিয়ায় সরকার ফের টিআরএম চালু করে। এর পরের কয়েক বছর আবার জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি পায় ভবদহবাসী। সর্বশেষ গত তিন বছর ভবদহ অঞ্চলে আবার জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। বর্তমানে ভবদহের জলাবদ্ধতা নিরসনে এলাকার কোনো বিলে টিআরএম কার্যকর নেই।
ফলে বর্ষা মৌসুমে ভবদহে শত শত গ্রাম জলমগ্ন হয়ে পড়ে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যায়। হাজার হাজার হেক্টর জমির আমন নষ্ট হয়ে যায়। পানিবন্দি মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি বেড়ে যায়। ফলে ভবদহ অঞ্চলের সার্বিক জীবনব্যবস্থায় দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাবসহ অর্থনীতির ব্যাপক ক্ষতি হয়।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ভবদহ অঞ্চলের মানুষের আন্দোলনের ফলে ১৯৯৪ সালে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) আর্থিক ও কারিগরি সহায়তায় যশোর-খুলনা পানি নিষ্কাশন প্রকল্প (কেজিডিআরপি) গ্রহণ করা হয়। ব্যয় নির্ধারণ করা হয় ২৫৭ কোটি টাকা। সমুদয় অর্থ ব্যয় হওয়ার পরও জলাবদ্ধতার নিরসন হয়নি। অভিযোগ আছে, ওই অর্থের বড় অংশই লুটপাট হয়। পর্যায়ক্রমে ২০০১-০২ অর্থবছর থেকে ২০০৪-০৫ অর্থবছরে এসে পানি উন্নয়ন বোর্ড বরাদ্দ করে ২৯ কোটি টাকা, ২০০৭ সালে ৫৯ কোটি ৫৯ লাখ টাকা এবং ২০১০ সালে ৭৩ কোটি ৬০ লাখ টাকা। দফায় দফায় টিআরএমসহ ছোট ছোট প্রজেক্টে কোটি কোটি টাকা ব্যয় দেখানো হয়। চার-পাঁচ বছর আগে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে কাজ করার পর থেকে ভবদহ এলাকার ভুক্তভোগী মানুষ সামান্য আশার আলো দেখতে পেলেও কোনো সমাধান হয়নি। সর্বশেষ ভবদহ গেটের উত্তর পাশে শ্রীনদী ড্রেজিংয়ে চলতি বছর এক কোটি সাত লাখ টাকার কাজ চলছে। তবে দায়সারাভাবে কাজ করার ফলে তা কোনো কাজেই আসছে না।
ভবদহ সংগ্রাম কমিটির নেতা ও পানি বিশেষজ্ঞ কমরেড গাজী হামিদ জানান, ভবদহ সুইজগেটের কার্যকারিতা হারিয়ে গেছে। এই গেটের কারণে নদনদী ও খালবিলের পানি নিষ্কাশিত হচ্ছে না। এ কারণে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। ভবদহ সুইচগেট সম্পূর্ণভাবে তুলে দিয়ে ভবদহের আশপাশের সব নদী খনন করে উজানের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন এবং বিল কপালিয়াসহ খালবিলে টাইডাল রিভার ম্যানেজমেন্ট (টিআরএম) চালু করলে ভবদহ সমস্যার স্থায়ী সমাধান হতে পারে। ভবদহ পানি নিষ্কাশন কমিটির উপদেষ্টা ইকবাল কবীর জাহিদ জানান, দীর্ঘ আন্দোলনের পর টিআরএম প্রকল্প অনুমোদিত হয়। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা ওই অঞ্চলকে জলাশয় দেখিয়ে টিআরএম বাতিল করে দেয়। ভবদাহ সমস্যার স্থায়ী সমাধান না হলে আসছে বর্ষায় যশোর সদরের কিছু অংশসহ পুরো ভবদহ অঞ্চল তলিয়ে যাবে আর ভবদহ সমস্যা জিইয়ে রেখে সরকারি অর্থ লোপাট করা হচ্ছে। তাই বস্তবসম্মত কার্যকর প্রজেক্ট গ্রহণ এবং একইসঙ্গে লুটপাটের তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা করতে হবে।

https://channelkhulna.tv/

বিশেষ প্রতিবেদন আরও সংবাদ

২০ বছরেও শুরু হয়নি শিবসা নদী খননের কাজ: অবৈধ দখল ও গোচারণ ভুমিতে পরিণত

ঘুরে দাঁড়ানোর আশায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে জেলেদের সুমদ্র যাত্রা

মন্নুজান প্রতিমন্ত্রী হওয়ার পর ভাই, ভাতিজিরা শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে গড়ে তুলেছেন অনিয়ম ও দুর্নীতির স্বর্গরাজ্য

বিল ডাকাতিয়া পানির নীচে, মাছ চাষীদের সর্বনাশ

বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত বাংলাদেশ : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

খুলনার ছয়টি আসনে দলীয় প্রার্থী হওয়ার আশায় আওয়ামীলীগে নতুন মুখ

চ্যানেল খুলনা মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন  
DMCA.com Protection Status
সম্পাদক: মো. হাসানুর রহমান তানজির
It’s An Sister Concern of Channel Khulna Media
© ২০১৮ - ২০২৪ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত | চ্যানেল খুলনা.বাংলা, channelkhulna.com.bd
যোগাযোগঃ কেডিএ এপ্রোচ রোড (টেক্সটাইল মিল মোড়), নিউ মার্কেট, খুলনা।
প্রধান কার্যালয়ঃ ৫২/১, রোড- ২১৭, খালিশপুর, খুলনা।
ফোন- 09696-408030, 01704-408030, ই-মেইল: channelkhulnatv@gmail.com
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য অধিদফতরে অনলাইন নিউজ পোর্টাল নিবন্ধনের জন্য আবেদিত।