শেখ মাহতাব হোসেন :: ডুমুরিয়া ( খুলনা)আমন ধান ওঠার পর চালের দাম পড়তির দিকে। এক মাসে কেজিপ্রতি চালের দাম কমেছে চার-পাঁচ টাকা। ডুমুরিয়াসহ দক্ষিণাঞ্চলে এবার আমন মৌসুমের শুরুতে অনাবৃষ্টি ও পরে অতিবর্ষণের ফলে ফলন ও উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছিল। তবে সব শঙ্কা কাটিয়ে খুলনা জেলার ডুমুরিয়া উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নে আমনের ফলন ভালো হয়েছে। একই সঙ্গে ধানের দাম ভালো পাওয়ায় কৃষকের মুখেও হাসি ফুটেছে। ডুমুরিয়া উপজেলার শরাফপুর ইউনিয়নের সেন পাড়া ব্লোকের কৃষক নুর ইসলাম শেখ ৫বিঘা জমিতে আমন চাষ করে বাম্পার ফলন পেয়েছেন।
এদিকে আমন ওঠার পর খুলনা। অঞ্চলের বাজারে চালের দামও পড়তির দিকে। ক্রেতাদের মধ্যেও স্বস্তি এসেছে কিছুটা। খুচরা বাজারে এক মাসের ব্যবধানে কেজিপ্রতি চালের মূল্য চার-পাঁচ টাকা কমেছে।
এ সম্পর্কে খুলনা জেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোঃ হাফিজুর বলেন, অক্টোবর মাসে বৃষ্টি কম হওয়ায় খরা চলছিল। তখন আমন ধানের চারা নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিলেন কৃষক। ওই মাসের শেষ সপ্তাহে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে ভারী বৃষ্টি হয়। এই বৃষ্টি ধানের চারার জন্য ছিল আশীর্বাদ। সময়মতো পানি পেয়ে এবার ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে।
খুলনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানায়, চলতি বছর খুলনা জেলায় ৬ লাখ ৯৯ হাজার ১১২ হেক্টর জমিতে আমনের আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রায় ৬০ ভাগ আমন কাটা হয়েছে। চাল উৎপাদিত হয়েছে ১২ লাখ ৫০ হাজার ১২২ টন । গত বছর এই বিভাগে ৬ লাখ ৯৯ হাজার ১১২ লাখ হেক্টরে আমন আবাদ হয়েছিল। আর চাল উৎপাদিত হয়েছিল ১৫ লাখ ৯৭ হাজার ৬১১ টন। এবার বাম্পার ফলন হওয়ায় গত মৌসুমের চেয়ে চালের উৎপাদন আরও বাড়বে বলে আশা করছে কৃষি বিভাগ।
জেলায় ৬ লাখ ৯৯ হাজার ১১২ হেক্টর জমিতে আমনের আবাদ হয়েছে। ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত আমন ধান কাটা হয়েছে ৬০ ভাগ। চাল উৎপাদন সাড়ে ১২ লাখ টন।
ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে ২৩ অক্টোবর রাত থেকে ২৪ অক্টোবর রাত ৯টা পর্যন্ত খুলনা ৩২৩দশমিক ৬ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছিল। এক দিনে এত বেশি বৃষ্টিপাতের রেকর্ড এ অঞ্চলে ছিল না। সিত্রাংয়ের প্রভাবে আমনের অনেক বীজতলা ভেসে যায়। রোপণ করা বীজ পচে যায়। তবে ধানের ফলনে এর প্রভাব তো পড়েনি, বরং এবার বাম্পার ফলন হয়েছে।
খুলনা জেলার ডুমুরিয়া উপজেলার আলহাজ্ব শেখ সিরাজুল ইসলাম বলেন, তিনি এবার সাড়ে তিন একর জমিতে আমন আবাদ করেছিলেন। প্রায় ৬৫ মণ ধান পাবেন বলে আশা করছেন। সিরাজুল ইসলাম বলেন, এবার বাজারে ধানের দাম ভালো। জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার আগেই আমন আবাদ হওয়ায় খরচ কমেনি। এবার প্রতি একর জমিতে আবাদ করতে প্রায় ছয় হাজার টাকা খরচ হয়েছে। তবে সামনে বোরো মৌসুমে ধানের উৎপাদন ব্যয় দ্বিগুণ হয়ে যাবে।
শরাফপুর গ্রামের কৃষক আব্দুল গনি গাজী বলেন, ‘এ বছর তিন একর জমিতে আমন চাষে খরচ হয়েছে ২৮ হাজার টাকা। ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। আশা করি, ভালোই লাভ হবে।’
দক্ষিণাঞ্চলের বাজারে এবার আমন ধানের দাম বেশ ভালো। প্রতি মণ গুটি স্বর্ণা ১ হাজার ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। উপজেলা ডুমুরিয়া খাদ্য কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম বলেন, এবার সরকার আমন মৌসুমে খাদ্য অধিদপ্তর২৮ টাকা কেজি দরে ধান কিনতে ইচ্ছুক। কিন্তূ বাহির ধানের দাম বেশী থাকায় ধান দিতে ইচ্ছুক নয়।এ জন্য ধানের দাম বাজারে ভালো পাচ্ছেন কৃষক। সরকারিভাবে এ অঞ্চল থেকে ধান ও চাল দুটিই সংগ্রহ করবে সরকার।
পাইকারি বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মোটা জাতের আমন ৫০ কেজির প্রতি বস্তা ২ হাজার ৬৫০ টাকা, কাজলা আমন ২ হাজার ২৫০ টাকা, দুধকলম ২ হাজার ৩৫০ থেকে ২ হাজার ৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
নগরের পাইকারি বাজার খুলনা ডুমুরিয়ার বাণিজ্যকেন্দ্র নামের একটি প্রতিষ্ঠানের চাল ব্যবসায়ী শেখ আব্দুস সালাম বলেন, আমন আসার পর থেকে পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি চালের দাম চার-পাঁচ টাকা কমেছে। এর প্রভাব পড়েছে খুচরা বাজারেও। খুচরা বাজারে আমন মোটা চাল প্রতি কেজি ৫৮ টাকা, কাজলা ৪৮ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এক মাস আগেও এর দাম ছিল ৫৫-৬০ টাকা।