শেখ মাহতাব হোসেন :: খুলনার ডুমুরিয়ায় নব নির্মিত উপজেলা কমপ্লেক্সের সম্প্রসারিত ভবন হস্তান্তরের ১৫ দিনের মধ্যেই মেরামত করতে হচ্ছে। কাজের গুনগত মান নিম্ম হওয়ায় এমন হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
বুধবার বেলা পৌনে ১১টার দিকে নব-নির্মিত ডুমুরিয়া উপজেলা কমপ্লেক্স সম্প্রসারিত প্রশাসনিক ভবনের পঞ্চম তলায় কৃষি কর্মকর্তার দপ্তরে গিয়ে দেখা যায়,সহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা সঞ্জয় দেবনাথ ব্যস্ত কম্পিউটার ব্যবহারের বৈদ্যুতিক সকেট সারাতে।
নতুন ৫ তলা এই ভবনটিতে দেয়া ইলেকট্রিক ওয়ারিং ও উপকরণ নিম্নমানের তাই কাজ করছে না। একই দশা লাইট ও ফ্যানের সুইচেরও। সেটি ব্যবহারের পূর্বেই ভিতরে ঢুকে গেছে। এছাড়া কৃষি কর্মকর্তার দপ্তরের টয়লেটের উপরের ক্যাট ডোর প্রায় দুই ইঞ্চি ফাঁকা।
যেখানে কাঠের টুকরা দিয়ে আটকে দেয়া হয়েছে। দ্বিতীয় তলার পশ্চিম দিকে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কক্ষের টাইলস ফিটিংস খুড়ে ফেলা হয়েছে। শুধু তাই নয় ভবন নির্মান বাস্তবায়নকারী সংস্থা উপজেলা প্রকৌশলীর কক্ষটির টয়লেটের একই অবস্থা। পাঁচতলা এই ভবনটি নির্মাণ করেছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর।
সংশ্লিষ্ট দপ্তর সূত্রে জানা যায়, ২০১৭ সালের ১৫ ডিসেম্বর তৎকালিন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নারায়ন চন্দ্র চন্দ এমপি ডুমুরিয়া উপজেলা কমপ্লেক্স সম্প্রসারিত প্রশাসনিক ভবন( হলরুমসহ) এর ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। শুরুতে ভবনটি নির্মাণ ব্যয় ধরা হয় ৬ কোটি ৭৭ লাখ ৫৭ হাজার ৬ টাকা। কাজটির দায়িত্ব পায় যৌথভাবে এসা-এমবিপিএল জেভি,ঢাকা। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে ২০ নভেম্বর ২০১৭ তারিখে এক বছর মেয়াদে ২০১৮ সালের ২০ নভেম্বর কাজটি শেষ করার নির্দেশ দেয়া হয়। নানান কারণে কাজটি সময়মত শেষ করতে না পারা এবং নতুন কিছু নকশা সংযোজন হওয়ায় এটির নির্মাণ ব্যয় বেড়ে দাড়ায় ৭ কেটি ৬০ লাখ টাকা। আর সময় ক্ষেপন হয় তিনবছরেও বেশি সময়কাল।
এদিকে গেল ২৯ ডিসেম্বর ২০২১ ডুমুরিয়া উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তর ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে কাজটি বুঝে নেয়। স্থানীয় সংসদ সদস্য সাবেক মন্ত্রী নারায়ন চন্দ্র চন্দ এটির উদ্বোধন করেন। এরপর পুরনো ভবন ছেড়ে একেক করে সরকারী সকল দপ্তর তাদের অনুকুলে বরাদ্দ অংশে আসবাব পত্র, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র, কম্পিউটার স্থাপন করতে গিয়ে পড়েন বিপত্তিতে। অতি প্রয়োজনীয় ও বিপদ জনক ইলেকট্রিক ওয়ারিং খুব দুর্বল। টয়লেট সেটআপ নড়বড়ে। দরজায় এখনই স্যাঁতসেঁতে। নোনায় ধরেছে দেয়াল। ঠিকাদারের স্থানীয় তদারককারী শাহিন খান জানান, আমরা নকশা অনুযায়ি ও নির্দিষ্ট উপকরণ দিয়ে মানসম্মতভাবে ভবনটি নির্মান কাজ শেষ করে কর্তৃপক্ষের নিকট হস্তান্তর করেছি। কিছু ত্রুটি থাকলেও থাকতে পারে যা ঠিক করে দেয়া হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কক্ষটির মেঝে খুড়ে ফেলে নতুন করে তৈরি করে দেয়া হচ্ছে।
উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান বলেন,গাজী আব্দুল হালিম বলেন, ভবনটির নির্মান কাজ বাস্তবায়নকারী সংস্থা এলজিইডি। ভবনে যদি ত্রুটি থাকে তাহলে সেটির দায়িত্ব প্রকৌশল অধিদপ্তরের। উপজেলা প্রকৌশলী মোঃ রবিউল ইসলাম বলেন, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যে প্রাক্কলিত মোট টাকার ৮০ ভাগ উত্তোলন করেছেন। এছাড়া মোট টাকার শতকরা ৫ ভাগ জামানত হিসেবে এলজিইডির দপ্তরে জমা রয়েছে।
তিনি ভবনের নানা অসঙ্গতির কথা স্বীকার করে বলেন, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ভবনটি বুঝে নেয়া হলেও এর যেসব ত্রুটি রয়েছে সেগুলো তারা ঠিক করে দিতে বাধ্য।
ডুমুরিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আব্দুল ওয়াদুদ সাংবাদিকদের জানান, উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কক্ষটির গঠণ শৈলী ত্রুটিযুক্ত। মেঝেতে বসানো টাইলস উচু নীচুসহ আরও ত্রুটি রয়েছে। তাই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে সেটি ঠিক করে দিতে বলা হয়েছে। এছাড়া ভবনের অন্যান্য অংশেও নানা ত্রুটি রয়েছে।