চ্যানেল খুলনা ডেস্কঃঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের নির্বাচন জানুয়ারিতে। তফসিল ঘোষণা হওয়ায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি এবং জাতীয় সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি তাদের নির্বাচনী প্রস্তুতির কাজ শুরু করেছে। আগামী শনিবারই আওয়ামী লীগের প্রার্থী চূড়ান্ত করা হবে। বিএনপির প্রার্থীও শিগগিরই ঘোষণা করা হবে। ইতিমধ্যে দল দুটি মনোনয়নপত্র বিতরণ ও জমা নেওয়ার সময়সূচি ঘোষণা করেছে। আওয়ামী লীগে উত্তর সিটির প্রার্থী পরিবর্তন হওয়ার সম্ভাবনা কম, বিএনপিরও একই ব্যক্তিকে আবার দেওয়া হবে বলে শোনা যাচ্ছে। অন্যদিকে দক্ষিণ সিটিতে দুই দলেই নতুন মুখ মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে বেশ আশাবাদী। মনোনয়ন প্রত্যাশীদের ছবি ছাপিয়ে পোস্টার লাগানো শুরু হয়েছে। নেতা কর্মীদের মধ্যে সিটি নির্বাচনের একটা আমেজও এসেছে।
গত রোববার নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে ঢাকার উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের ভোট গ্রহণ হবে আগামী ৩০ জানুয়ারি। মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন ৩১ ডিসেম্বর। আর ২ জানুয়ারি এসব মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই করা হবে। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন ৯ জানুয়ারি। নির্বাচনে অংশ নিতে ইচ্ছুক প্রার্থীরা এরই মধ্যে অনানুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরু করেছেন। রাজধানীর বিভিন্ন দেয়ালে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের পোস্টারও সাঁটা হচ্ছে।
২০১৫ সালে ঢাকা দক্ষিণ করপোরেশনে সাঈদ খোকন মেয়র নির্বাচিত হন এবং উত্তরে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আনিসুল হক। দুজনেই আওয়ামী লীগ প্রার্থী ছিলেন। ২০১৭ সালের ৩০ নভেম্বর মেয়র আনিসুল হক ইন্তেকাল করায় মেয়র পদটি শূন্য হয়। এরপর চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি উত্তর সিটির উপনির্বাচনে মেয়র হন আওয়ামী লীগের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম। এবার বর্তমান দুই মেয়রই দলীয় মনোনয়নের ব্যাপারে আশাবাদী। তারা বিভিন্ন সভা সমাবেশে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নিজেদের কাজের কথা তুলছেন।
ঢাকা উত্তর সিটিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর দিক থেকে পরিবর্তনের সম্ভাবনা কম। মেয়র আতিকুল ইসলামের প্রায় এক বছর হয়েছে। আওয়ামী লীগের এক উচ্চ পর্যায়ের নেতা জানান, উত্তরের মেয়রের এক বছর হয়েছে। তাকে প্রার্থী করার সম্ভাবনা বেশি। মেয়র নিজেও আশাবাদী। আতিকুল ইসলাম বলেন, যদি দল আমাকে মনোনয়ন দেয় আমি নির্বাচন করবো। আমি অল্প সময় পেয়েছি। আবারও নির্বাচিত হলে পারলে শহরের যানজট, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, গণপরিবহন নিয়ে কাজ করব। নিজের বাকি পরিকল্পনাগুলোকে বাস্তবায়ন করতে পারব।
ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র সাঈদ খোকনও পুনরায় মনোনয়ন পাওয়ার আশা করছেন। যদিও এ বছর রাজধানীতে ডেঙ্গুর বিস্তারকে কেন্দ্র করে তার ব্যাপক সমালোচনা রয়েছে। সাঈদ খোকন ছাড়াও আওয়ামী লীগ থেকে দক্ষিণে মনোনয়ন পেতে আগ্রহী আইনজীবী নজিবুল্লাহ হিরু। তিনি এবার আওয়ামী লীগের ২১তম সম্মেলনে আইন বিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্ব পেয়েছেন। নজিবুল্লাহ হিরু বলেন, দক্ষিণে মেয়র পদে আমি একজন শক্তিশালী মনোনয়ন প্রত্যাশী। মানুষ পরিবর্তন চায়। আমার বিশ্বাস আমি দলের মনোনয়ন পাব। সেভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছি।
আওয়ামী লীগেও নজিবুল্লাহর মনোনয়নের ব্যাপারে গুঞ্জন আছে। তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছের লোক বলে পরিচিত। আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন, প্রার্থীর বিষয়ে দলে আলোচনা করা করে সিদ্ধান্ত হবে। জনগণের মনোভাব বুঝেই প্রার্থী নির্বাচন করা হবে।
আওয়ামী লীগ আগামী ২৫, ২৬ ও ২৭ ডিসেম্বর সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ধানমন্ডিতে সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলীয় মনোনয়নপত্র বিক্রি করবে। মনোনয়নপত্র জমা দিতে হবে ২৭ ডিসেম্বরের মধ্যে। আর ২৮ ডিসেম্বর শনিবার সন্ধ্যা ৬টায় গণভবনে আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের সভা অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে প্রার্থী চূড়ান্ত করা হবে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে মেয়র পদে বিএনপি থেকে বেশ জোরেশোরে উচ্চারিত নাম ঢাকা সিটি করপোরেশনের প্রয়াত সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার ছেলে ইশরাক হোসেনের। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে ঢাকা-৬ আসনের জন্য মনোনয়নপত্রও কিনেছিলেন। তবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে দর কষাকষিতে তিনি সরে যান। সেখানে মনোনয়ন পান গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী।
বিএনপির একটি সূত্র জানায়, প্রার্থিতার ক্ষেত্রে ইশরাক হোসেনের সম্ভাবনাই বেশি। তার পক্ষে সমর্থনও বেশি বলে জানান তিনি। ইশরাক হোসেন বলেন, সিটি নির্বাচনের ব্যাপারে দলের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে আমাকে প্রস্তুত থাকার ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। প্রার্থী হওয়ার ব্যাপারে আমি আশাবাদী। তিনি বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা কম। তবে নিজেদের উপস্থিতি ও জনগণের কাছে নিজেদের কথা মানুষের কাছে পৌঁছানোর জন্য নির্বাচনে অংশ নেবেন।
ইশরাক জানান, তিনি নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড পাবেন না। তবে মানুষ পরিবর্তন চায় এবং তিনি সেই লক্ষ্যে কাজ করে যেতে চান। তবে তিনি জানান, সুষ্ঠু ভোট হলে বিএনপি প্রার্থীই জিতবেন।
স্থানীয় নেতা কর্মীদের সঙ্গে তার যোগাযোগ হচ্ছে। দলের সবুজ সংকেত পাওয়া মাত্রই নির্বাচনী আইন মেনে কাজ শুরু করবেন। ইশরাক বলেন, ‘রাজনৈতিক পরিবারে জন্ম আমার। বাবার বিভিন্ন নির্বাচনে ক্যাম্পেইন করেছি। এরপর পড়াশোনার জন্য যুক্তরাজ্যে চলে যাই। সেখানকার ছাত্রদলের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম।’ তার আশা মনোনয়ন পেলে মানুষ তার বাবার কথা ও তার ইশতেহার ধরেই মানুষ তাকে ভোট দেবে।
গতবার সিটি নির্বাচনে দক্ষিণে বিএনপির প্রার্থী ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। তার অনুপস্থিতিতে তখন মাঠে মির্জা আব্বাসের পক্ষে প্রচারণা করেছিলেন তার স্ত্রী ও মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস। এবার অবশ্য প্রার্থী হিসেবে আফরোজা আব্বাসের নামও শোনা যাচ্ছে। তবে বিএনপির নির্ভরশীল এক সূত্র জানায়, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-৯ আসনে আফরোজা আব্বাসকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিল। মেয়র পদে তার সম্ভাবনা কম।
ঢাকা উত্তরে ২০১৫ সালের নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী হয়েছিলেন দলের নির্বাহী কমিটির সদস্য তাবিথ আউয়াল। সেবার তিনি অনিয়মের অভিযোগ তুলে নির্বাচনের দিনই ভোট বর্জন করেন। আনিসুল হকের মৃত্যুর পরে উপনির্বাচনে বিএনপি অংশ নেয়নি। তবে আসন্ন নির্বাচনের জন্য আবারও তাবিথের নামই এসেছে। বিএনপির একাধিক সূত্রও জানায়, উত্তরের প্রার্থী তাবিথ আউয়ালই হবেন। এ বিষয়ে তাবিথ আউয়াল সম্প্রতি বলেন, দল যদি চায় তাহলে তিনি নির্বাচন করবেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, সিটি নির্বাচন নিয়ে দলে আলোচনা হবে। সময়মতো প্রার্থীর বিষয়ে জানাবো। বিএনপি জানিয়েছে, নয়াপল্টন থেকে ২৬ ডিসেম্বর দলীয় মনোনয়ন পত্র কেনা যাবে। জমা দিতে হবে ২৭ ডিসেম্বর। আর ২৮ ডিসেম্বর দলের মনোনয়ন বোর্ড প্রার্থী চূড়ান্ত করবে।
২০ দলীয় জোটের শরীক দল জামায়াতে ইসলামীও দুই সিটিতে প্রার্থী দিতে পারে বলে শোনা যাচ্ছে। যদিও আদালত জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল করেছে তারপরও তারা স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে। সে ক্ষেত্রে দলের ঢাকা মহানগর উত্তরের আমির মো. সেলিম উদ্দিন ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদকে প্রার্থী করা হতে পারে।
জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ব্যানারে নির্বাচন করে। তবে সিটি নির্বাচন নিয়ে ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে এখনো কোনো আলোচনা হয়নি। যোগ্য প্রার্থী হলে বিএনপি থেকে মনোনীত প্রার্থীকে ঐক্যফ্রন্ট সমর্থন দিতে পারে।
ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম শীর্ষ নেতা ও নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, জোটগতভাবে প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা কম। বিএনপির প্রার্থীকে সমর্থন দেওয়ার বিষয়ে বলেন, বিএনপি কাকে মনোনয়ন দেয় সেটা দেখতে হবে এবং আলোচনা করে সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হবে। তবে ঐক্যফ্রন্টের এই নেতাও সুষ্ঠু ভোট হওয়া নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন। ঐক্যফ্রন্টের আরেক নেতা ও গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী বলেন, এখন পর্যন্ত কোনো আলোচনা হয়নি। জোটের মধ্যে কোনো দল ভালো প্রার্থী দিলে তাকে সমর্থন দেওয়া হতে পারে।
ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নেবে জাতীয় পার্টি। মেয়র ও কাউন্সিলর পদে প্রার্থী দেবে বলে জানিয়েছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহম্মদ কাদের। তিনি বলেন, আমরা ইতিমধ্যে পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্যদের জানিয়েছি, আমরা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবো, তবে এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক কোনো বৈঠক হয়নি। দ্রুতই আমরা পার্টির সভা ডেকে অংশগ্রহণের প্রক্রিয়া ও প্রার্থী বাছাই প্রক্রিয়া নির্ধারণ করবো
এবারের সিটি নির্বাচনে বাম দলগুলো নির্বাচনে যাবে কিনা সে বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। ২০১৫ সালের নির্বাচনে বাম দল থেকে আলাদা আলাদা প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিল। তবে এবারের নির্বাচনে অংশ নিলে বাম গণতান্ত্রিক জোট থেকে প্রার্থী দেওয়া হতে পারে। জোটের কেন্দ্রীয় নেতা ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, মঙ্গলবার জোটের বৈঠক আছে। প্রথমে নির্বাচনে অংশ নেওয়া হবে কিনা সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে, পরে প্রার্থী মনোনয়নের বিষয় আসবে। তিনি আরও বলেন, এই নির্বাচন কমিশনের ওপর মানুষের ন্যূনতম আস্থা নেই। নির্বাচন ব্যবস্থার বিশ্বাসযোগ্যতা বাস্তবে ধ্বংস করা হয়েছে। সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ আমরা দেখছি না।
ইসলামী আন্দোলেন বাংলাদেশ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দলটির রাজনৈতিক উপদেষ্টা আশরাফ আলী আকন বলেন, তাদের প্রার্থী চূড়ান্ত। দক্ষিণ সিটিতে আবদুর রহমান ও উত্তরে ফজলে বারী মাসউদ নির্বাচন করবেন।